কমছে হজের খরচ। আগামী বছর হজযাত্রীর ব্যয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা কমানো হচ্ছে। গতবারের চেয়ে ব্যয় কমিয়ে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে আজ বুধবার।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। কত টাকা ব্যয় কমছে– জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, এগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন। বুধবার (আজ) সকাল ১১টায় সভা আছে। এ সভায় দুটি প্যাকেজের খরচ চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, মক্কায় কাবা শরিফের এবং মদিনায় মসজিদে নববীর কাছাকাছি ও দূরে থাকার বিবেচনায় প্রতি বছর দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এবারও তা করা হচ্ছে। চলতি বছর হজের খরচ হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা করে।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সমকালকে বলেছেন, একটি প্যাকেজে বাড়ির অবস্থান হবে পবিত্র কাবাঘরের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। এ ছাড়া দোরখুদাই নামে একটা জায়গা তিনি দেখে এসেছেন। এর দূরত্ব আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার। এ জায়গার প্যাকেজের টাকা কম হবে। এবার সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়। তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হয়েছে। বাকি টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৬৬ হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে ১৯৭১ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে ৬৪ হাজার ২৭৪ জন।
একাধিক হজ এজেন্সি মালিক সমকালকে জানান, প্যাকেজ ঘোষণার পর নিবন্ধন বাড়বে। মোট কত খরচ হবে, এটা না জেনে কেউ নিবন্ধন করতে চান না। খরচ কমাতে না পারলে কোটার বড় একটি অংশ এবারও খালি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
আগামী বছর জুনের প্রথম সপ্তাহে হবে পবিত্র হজ। আগামী ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হবে চুক্তি। চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ প্যাকেজে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। হজের ব্যয় অনেক বেশি বলে হজযাত্রীরা সে সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর কোটার চেয়ে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম গিয়েছেন।
জানা গেছে, খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া। গত বছর প্যাকেজে বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। এবার তা কমিয়ে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক সমকালকে জানান, হজ ব্যবস্থাপনায় জড়িত অত্যাবশ্যকীয় জনবল ছাড়া এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে পাঠানো হবে না।
এদিকে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সদ্য বাতিল হওয়া কমিটির সভাপতি ফারুক আহমদ সরদার সমকালকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি হজের খরচ কমবে। হজযাত্রীর কোটা পূরণ হবে কি না সেটি নির্ভর করছে প্যাকেজের ওপর।’
আলোচনায় সমুদ্রপথে হজযাত্রা
এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে ব্যয় কমাতে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রার বিষয়টি। সম্প্রতি ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের সৌদি আরব সফরের সময় সে দেশের সরকার এ বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়টি কয়েক বছর ধরে আলোচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় প্রয়োজন এবং নানা চ্যালেঞ্জের কারণে আগের সরকার এতে খুব একটা আগ্রহী হয়নি। এছাড়া তখন সৌদি সরকারেরও অনুমতি মেলেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনে বেশ আগ্রহী। এতে বিমান ভাড়া থেকে খরচ ৪০ শতাংশ কমবে। যেতে-আসতে আট দিন করে ১৬ দিন, হজ পালনসহ মোট এক মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজে করে হজযাত্রী পরিবহনে সৌদি আরব সরকারের চূড়ান্ত অনুমতির অপেক্ষায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রী পাঠানোর জাহাজ কিনতে ঋণসহায়তা চেয়েছে আগ্রহী কোম্পানি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে সৌদি আরব যাত্রায় নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে জাহাজ কিনে এবার হজযাত্রী পাঠানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। জাহাজে হজযাত্রী পাঠাতে হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাহাজে হজযাত্রীদের সেবায় স্থাপনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ হজযাত্রী বয়স্ক। তারা এই দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল নিতে পারবেন কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন। জাহাজে থাকার সময় হজযাত্রী অসুস্থ হলে কীভাবে চিকিৎসা হবে, তারা কীভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন– এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
সৌদি আরব সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ যদি জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে তাহলে আগামী জানুয়ারিতে হজ চুক্তিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ বিগত বছরগুলোতে সৌদি সরকারের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে হজ করার সুযোগ ছিল। পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে উঠতেন। এরও আগে হজযাত্রীরা জাহাজে উঠতেন মুম্বাই থেকে। তখন সময় লাগত কয়েক মাস। ১৯৮৪ সালে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।