প্রকৃতির চলার গতি ও ঋতু বদলের সঙ্গে তাল রেখে আমাদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত হয় নানা ধরনের মৌসুমি ফল। এর মধ্যে গ্রীষ্মকাল সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময়। যখন বাজার ভরে ওঠে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ ও বাঙ্গির মতো মিষ্টি ও রসালো ফলে। শুধু স্বাদেই নয়, এসব ফল স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অত্যন্ত কার্যকর। তবে প্রকৃত উপকারিতা পাওয়া যায় তখনই, যখন এগুলো সঠিক মৌসুমে খাওয়া হয়। কৃত্রিমভাবে পাকানো বা সংরক্ষিত ফল অনেক সময় উপকারের বদলে শরীরের ক্ষতিই বয়ে আনে।

গ্রীষ্মে শরীর অতিরিক্ত গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ। তখন দরকার এমন কিছু খাবার, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখবে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে। এই চাহিদা পূরণে প্রকৃতি নিজেই এগিয়ে দেয় মৌসুমি ফল।

আমে থাকে ভিটামিন-এ ও সি। যা চোখ ও ত্বক সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। জামে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে। লিচু শরীর ঠান্ডা রাখে ও উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-সি সরবরাহ করে। তরমুজ ও বাঙ্গি শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে। আর কাঁঠাল জোগায় শক্তি ও সহায়তা করে হজমে।

এসব ফল মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে পাকে, তাই সাধারণত এতে কেমিক্যাল ব্যবহারের ঝুঁকি কম। অথচ মৌসুমের আগেই বাজারে আসা অনেক ফল ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ নানা রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়, যা হতে পারে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব কেমিক্যাল ক্যানসার, হজমের গোলমাল, লিভার ও কিডনির সমস্যা এমনকি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে। তাই স্বাভাবিকভাবে পাকা মৌসুমি ফলই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ।

সঠিক সময়ে মৌসুমি ফল খাওয়া কেন জরুরি

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এসব ফল সাধারণত আমাদের দেশে স্থানীয় কৃষকরাই চাষ করেন। রাজশাহী, নওগাঁ কিংবা দিনাজপুরের আম বা লিচু খুব সহজেই ঢাকায় পৌঁছে যায়। ফলে সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করার দরকার পড়ে না। সরাসরি ক্ষেত থেকে বাজারে আসে বলে তাজা ও পুষ্টিকর ফল খেতে পারি আমরা।

স্থানীয় মৌসুমি ফল পরিবেশবান্ধবও। দূরদেশ থেকে ফল আমদানির জন্য পরিবহনে জ্বালানির ব্যবহার বাড়ে, ফল পচে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবহৃত হয় কেমিক্যাল – যা পরিবেশ দূষণের কারণ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক এবং দেশের কৃষিকে টিকিয়ে রাখে।

সঠিক সময়ে মৌসুমি ফল খাওয়া কেন জরুরি

প্রতিটি ফলের একটি নির্দিষ্ট 'পিক টাইম' থাকে। যেমন আমের ক্ষেত্রে জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এর বাইরে খাওয়া আম স্বাদে ভালো নাও লাগতে পারে, পুষ্টিগুণও কমে যেতে পারে। জাম, লিচু কিংবা বাঙ্গিরও রয়েছে নিজ নিজ সময়সীমা।

মৌসুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস শরীরের পাশাপাশি মনকেও চাঙ্গা করে তোলে। গ্রীষ্মের দুপুরে ঠান্ডা তরমুজ, গাছ থেকে ছেঁড়া লিচু, জামরুলের টক-মিষ্টি স্বাদ কিংবা বাঙ্গির হালকা সুগন্ধ আমাদের শরীরের ক্লান্তিকে নাড়া দেয়, জাগিয়ে তোলে সজীবতা। এটি শুধু খাওয়ার বিষয় নয়, বরং একটি সংস্কৃতি, এক টুকরো গ্রামবাংলার ঘ্রাণ, শহরের কংক্রিটের ভেতর প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া।

সঠিক সময়ে মৌসুমি ফল খাওয়া কেন জরুরি

তবে মনে রাখতে হবে, মৌসুমি ফল খেলেও তা হতে হবে পরিমিত, পরিষ্কার ও সতর্কভাবে। অতিরিক্ত খাওয়া, না ধুয়ে খাওয়া বা পঁচা ফল খাওয়ার ফলে হতে পারে বমি, পেটের সমস্যা বা জ্বর। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

সব মিলিয়ে, মৌসুমি ফল প্রকৃতির সময়োপযোগী উপহার। এটি শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং শরীর ও ঋতুর সামঞ্জস্য রক্ষার প্রাকৃতিক উপায়। মৌসুমি ফল খাওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত হয়, তেমনি গড়ে ওঠে এক গভীর সম্পর্ক – নিজের শিকড়, কৃষক ও প্রকৃতির সঙ্গে।

সঠিক সময়ে মৌসুমি ফল খাওয়া কেন জরুরি

তাই আসুন, সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে আমরা এই ফলগুলো সচেতনভাবে গ্রহণ করি।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় পুষ্টি ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশনা।

হৃদয়/এএমপি/এমএস



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews