ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
ডোনাল্ড ট্রাম্প
২ ঘন্টা আগে
বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দর কষাকষির পর বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে।
এছাড়া, কানাডার ওপর শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই দফায় সবচেয়ে বেশি, ৪১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সিরিয়ার ওপর।
প্রসঙ্গত, আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এখন নতুন করে আরও ২০ শতাংশ শুল্ক যোগ হতে যাচ্ছে এর সঙ্গে।
বাংলাদেশ ও কানাডার পাশাপাশি একাধিক দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি নতুন নির্বাহী আদেশে সই করেছেন এবং হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এই নতুন শুল্ক মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কার্যকর হবে।
তবে কিছু দেশের ক্ষেত্রে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সূচি বদলেছে।
আগে বলা হয়েছিলো, পহেলা অগাস্টের মাঝে চুক্তি না হলে শুল্ক কার্যকর হবে। কিন্তু এখন ৭০টির বেশি দেশের জন্য নতুন "পারস্পরিক শুল্ক" আগামী সাত দিনের মধ্যে চালু হবে।
কিন্তু এখানে আবার বিশেষ কিছু নিয়ম রাখা হয়েছে।
তা হলো– আগামী সাতই অগাস্টের মধ্যে যেসব পণ্য জাহাজে তোলা হবে অথবা ইতোমধ্যে পথে আছে, সেগুলো আগামী পাঁচই অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে নতুন শুল্ক তাদের ওপর প্রযোজ্য হবে না।

ছবির উৎস, Universal Images Group via Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
কানাডার ওপর শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ ৭০টি দেশ থেকে আমদানির ওপর নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করেছেন, যা কোনো ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য পহেলা অগাস্ট সময়সীমা ধার্য করা ছিল। তার ঠিক আগে আগেই এই ঘোষণা এলো।
আলোচনার অংশ হিসেবে দেশগুলোকে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মার্কিন পণ্য কেনার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
প্রেস উইং জানায়, বিষয়বস্তুর কারণে আলোচনার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল।
বাংলাদেশের ট্যারিফ ছাড় পাওয়ার সঙ্গে শুধু মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার কমানোর বিষয়টিই যুক্ত ছিল না, বরং অশুল্ক বাধা, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ও নিরাপত্তার মতো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিভিন্ন বিষয় জড়িত ছিল।
প্রেসডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে প্রতিটি দেশের শুল্কহারের ক্ষেত্রে এই সবগুলো বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতির গভীরতা প্রতিফলিত হবে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্ক হার অর্জন করেছে—যা শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো পোশাক খাতের প্রধান প্রতিযোগীদের সমতুল্য, যারা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে।
ফলে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনামূলক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান এখনো প্রভাবিত হয়নি বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান আলোচক খলিলুর রহমানের বরাত দিয়ে এই বিবৃতিতে বলা হয়, "আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সাথে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সাবধানতার সাথে আলোচনা করেছি।"
"আমাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করা একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার ছিল। তবে আমরা মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর আমাদের ক্রয় প্রতিশ্রুতিও কেন্দ্রীভূত করেছি। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করে এবং মার্কিন কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর জন্য সদিচ্ছা প্রতিফলিত করে।"
তিনি আরও বলেন, "আজ আমরা সফলভাবে ৩৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক এড়িয়েছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জন্য সুসংবাদ। আমরা আমাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও সংরক্ষণ করেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের জন্য নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছি।"
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশের আলোচক দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এটিকে 'গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বার্তায় আরও বলা হয়েছে, আলোচকরা যে চুক্তিটি করেছে তার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার আরও বেড়েছে এবং দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, "অবৈধ মাদক পাচার" বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাবে "প্রতিশোধমূলক আচরণ" করার কারণে কানাডার ওপর শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের ভাষ্য, কানাডা "ফেন্টানিল ও অন্যান্য অবৈধ মাদকের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে" এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কবৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে জুলাই মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছিলেন, "উত্তর আমেরিকায় ফেন্টানিল নামক মাদকের প্রাদুর্ভাব বন্ধে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছি।"
হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউসএমসিএ) আওতায় যেসব পণ্য আছে, সেগুলো এই ৩৫ শতাংশ শুল্কহারের বাইরে থাকবে।
এদিকে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এখনো কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আজ রাতেই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তিনি এও স্পষ্ট করে বলেছেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে কোনো চুক্তি করার সময় আর নেই এবং এই শুল্ক নিশ্চিতভাবেই কার্যকর হবে।
এদিকে, কানাডার ওপর উচ্চ শুল্ক হার আরোপের যে ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, সেটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে কানাডা।
কানাডার বাণিজ্য সংস্থার প্রধান ক্যান্ডেস লেইং বলেছেন, ফেন্টানিল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ঠিকঠাক কোনো প্রমাণ ছাড়াই কানাডার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

ছবির উৎস, Reuters
ছবির ক্যাপশান,
নতুন শুল্কহার এশিয়ার দেশগুলোর ওপর বড় আঘাত হেনেছে
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কহার এশিয়ার দেশগুলোর ওপর বড় আঘাত হেনেছে।
পহেলা অগাস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে না পারা দেশগুলোকে এখন উচ্চ আমদানি করের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এ অঞ্চলের দু'টি বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত ও তাইওয়ান। এই দুই দেশ যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ লাওসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শুল্কহার, ৪০ শতাংশ। মিয়ানমারের ওপরও একই শুল্ক হার আরোপ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার ওপর, ৪১ শতাংশ।
ইরাকের ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে ৩৫ শতাংশ। লিবিয়ার জন্য আবার ৩০ শতাংশ।
যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মাঝেই চুক্তি করতে পেরেছে, তাদের ওপর তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই তালিকায় থাকা দেশগুলো হলো– জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। এদের ওপর আরোপিত শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে।
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ট্রাম্পের নতুন শুল্কহার এরকম––
১০% - ব্রাজিল, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, যুক্তরাজ্য এবং নির্বাহী আদেশে তালিকাভুক্ত নয় এমন অন্যান্য সব দেশ
১৫% - আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ক্যামেরুন, চাদ, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, ইকুয়েডর, নিরক্ষীয় গিনি, ফিজি, ঘানা, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, লেসোথো, লিচেনস্টাইন, মাদাগাস্কার, মালাউই, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, নরওয়ে, পাপুয়া নিউ গিনি, দক্ষিণ কোরিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ভানুয়াতু, ভেনেজুয়েলা, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে
১৮% - নিকারাগুয়া
১৯% - কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন
২০% - বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম
২৫% - ব্রুনাই, ভারত, কাজাখস্তান, মলদোভা, তিউনিসিয়া
৩০% - আলজেরিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা
৩৫% - ইরাক, সার্বিয়া
৩৯% - সুইজারল্যান্ড
৪০% - লাওস, মিয়ানমার
৪১% - সিরিয়া।