কম দামে কুরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ফেনীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদ পরবর্তী দুই দিন অপেক্ষা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তারা। ফলে চামড়ায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় তা ফেলেই চলে যান অনেকে।
কিছু ব্যবসায়ী এলাকাবাসীর চাপে দুর্গন্ধ বের হওয়া চামড়াগুলো পিকআপ করে মুহুরী নদীতে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। আবার অনেকে ক্রেতা পেলেও কম দাম বলায় বিক্রি করতে পারেননি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ফেনীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিকে ফেনীর পরশুরামে কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় সিলোনিয়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন শুক্কুর আলী নামের এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাতে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নির্দেশে তাকে আটক করা হয়।
আটক শুক্কুর আলী মালিপাথর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। এর আগে বিকালে চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্কুর নামের স্থানীয় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কুরবানির ঈদের দিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বেশ কিছু কুরবানির পশুর চামড়া কিনেন। এরপর চামড়া বিক্রির উদ্দেশ্যে পিকআপভ্যানে পরশুরাম বাজারে নিয়ে যান। কিন্তু কেউ চামড়া কেনার আগ্রহ না দেখালে রাগে-ক্ষোভে চামড়াগুলো নদীতে ফেলে দেন।
পরশুরাম থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল হাকিম যুগান্তরকে বলেন, পশুর চামড়া নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণের দায়ে অভিযুক্তকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ফেনী সদরসহ ৫টি উপজেলার বিভিন্ন বাজারের রাস্তায় পচা চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে পচা চামড়ার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রশাসন থেকে অবিক্রিত চামড়ার জন্য বিনা মূল্যে লবণ বিতরণ করার ঘোষণ করা হয়েছে। অবিক্রিত চামড়ায় লবণ দিয়ে বিক্রির কথা বলা হয়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা করেননি। ফলে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার সাথে সাথে তাতে পচন ধরে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গত শনিবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন বাজারে কয়েক হাজার চামড়া বিক্রির জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করেন।
কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে সোমবার দুপুরে চামড়া ফেলে পালিয়ে যান তারা। চামড়া পচনের ফলে রাস্তার আশেপাশে দুর্গন্ধ ও চামড়ার পানি বের হওয়ায় পথচারী ও যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা যুগান্তরকে জানান, সরকার চামড়া বিক্রির দাম প্রকাশ করেছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে, কারণ আগামী কয়েক দিন ঢাকায় চামড়া প্রবেশ করতে পারবে না।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এক-দুইটা ব্যতিক্রম ছাড়া তালিকার সব মাদ্রাসা, এতিমখানাকে চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিনামূল্যে ১২৩ মে. টন লবণ দেওয়া হয়েছে। চামড়া সংরক্ষণ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে কেউ কেউ লবণ নিলেও চামড়া সংরক্ষণ করে নাই বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, চামড়া ধরে না রাখলে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। বাজারে সাপ্লাই অত্যধিক হলে মৌসুমি ব্যবসায়ী কিংবা ‘সিন্ডিকেট’ সুযোগ নিতে পারে। ঢাকায় ঈদের ১০ দিন কোনো চামড়া ঢুকতে পারবে না।
