শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন, শৃঙ্খলা সপ্তাহ, সচেতনতা সপ্তাহ ইত্যাদি নামে ট্রাফিক পুলিশের আয়োজন কোনো কিছুই সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পারছে না। লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া চালকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যানবাহনের চালক ও মালিকরা যেন আইন অমান্য করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। প্রচলিত আইনের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। ফল যা ঘটার তা-ই ঘটছে। প্রতিদিন রাজপথে ঝরছে তরতাজা প্রাণ। নিছকই দুর্ঘটনা নয়, সড়কে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে প্রতিদিন। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষগুলোর পরিবারের সদস্যদের কান্না, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ, কোনো কিছুই চালক-মালিকদের স্পর্শ করছে না। অথবা এটাও ধরে নেওয়া যায় বাসের মালিক কিংবা চালকদের মানবিক কোনো অনুভূতিই নেই। আর সে কারণেই প্রতিদিন আরো ভয়ংকর ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে সড়কের যন্ত্রদানব। ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে বাস থেকে ফেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর বাস নিয়ে চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেলেও পরে তাদের আটক করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উল্টো পথে আসা অটোরিকশার ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ার পর বাসচাপায় নিহত হয়েছে দুই কলেজছাত্র। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে উল্টো পথে আসা বাস এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করেছে। চট্টগ্রামে লরিচাপায় নিহত হয়েছেন এক মোটরসাইকেলচালক। রাজধানীতে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন একজন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসে ওঠার সময় আরেক বাসের চাপায় একজন নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তার পরও কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সড়কে হত্যা বন্ধ করতে আর কী করা যেতে পারে? পুলিশ মনে করে ছোট গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাহলে বড় গাড়ি নামাতে হবে রাস্তায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিভিন্ন সময়ে করা সুপারিশগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। ঢাকা শহরের জন্য রুট ফ্রাঞ্চাইজি করা খুব জরুরি বলেও তাঁরা মনে করেন।
মৃত্যু না বলে এসব ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলা যেতে পারে। একজন যানবাহন মালিক যখন তার ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে নামাচ্ছে তখন তো ধরেই নেওয়া যায়, সে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ত্রুটিযুক্ত যানবাহন রাস্তায় নামিয়েছে। সুতরাং এই যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে তার দায় সংশ্লিষ্ট মালিককেই নিতে হবে। অন্যদিকে যখন কোনো লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে যানবাহনের চাবি দেওয়া হয় তখনো সংশ্লিষ্ট মালিক ও চালকই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যথোপযুক্ত শাস্তির উদাহরণ তৈরি করতে হবে।