নিশ্চিন্ত থাকিবার অবকাশ নাই

২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ইং

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়ই বলিতে হইবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,  ২০০৮ সালের তুলনায় ম্যালেরিয়া  রোগীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পাইয়াছে। মৃত্যুহার কমিয়াছে ৯২ শতাংশ। ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি হইতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে ২৯ হাজার ২৩৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং তন্মধ্যে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। পূর্ববর্তী ২০১৫ ও ২০১৬ সালের চিত্রও তেমন একটা ভিন্ন নহে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল, দারিদ্র্যকবলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘ সীমান্তসংবলিত দেশে এই সাফল্য অগ্রাহ্য করিবার মতো নহে। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগিবারও কোনো অবকাশ নাই। কারণ এখনো প্রায় এক কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়ার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করিতেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্যমতে, দেশের মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়। ২০১৭ সালের ম্যালেরিয়া রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়াছে যে ৮৫ শতাংশ রোগীই ফ্যালসিপেরাম জীবাণুঘটিত—যাহা পরে ম্যালেরিয়া এবং এই রোগে মৃত্যুর জন্য দায়ী।

ইতিবাচক দিক হইল সরকার বসিয়া নাই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকও আমাদের আশার বাণী শোনাইয়াছেন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের অংশ হিসাবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার লক্ষ্যকে সামনে রাখিয়া চলিতেছে বহুমুখি তত্পরতা। ইহার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হইয়াছে। তন্মধ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলায় বার্ষিক সংক্রমণের হার হাজারে শূন্য দশমিক ৪৬-এর নিচে নামাইয়া আনা এবং ৫১টি জেলাকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব রহিয়াছে। ইহার মধ্যে পার্বত্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ম্যালেরিয়াপ্রবণ এবং কক্সবাজার মধ্য ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। বলা বাহুল্য, সীমান্তবর্তী দুর্গম এই পার্বত্য অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সফলভাবে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। বাস্তবতা হইল, ম্যালেরিয়া একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মহলও যে গলদঘর্ম হইতেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্ব ম্যালেরিয়া প্রতিবেদনেও তাহা স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২১ কোটির অধিক মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হইয়াছেন বিশ্বব্যাপী। তন্মধ্যে মর্মান্তিক পরিণতি বরণ করিতে হইয়াছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষকে। আরও উদ্বেগের বিষয় হইল, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষই ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রহিয়াছেন।

ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই দীর্ঘদিনের হইলেও কার্যকর অস্ত্র বলিতে এখনো প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনাই মূল ভরসা। মশাবাহিত এই রোগ মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা যে অনেক বৃদ্ধি পাইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই। পাশাপাশি জনসচেতনতাও নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাইয়াছে। তবে তাহা আরও বাড়াইতে হইবে। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা যে খুবই কার্যকর একটি হাতিয়ার তাহা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ম্যালেরিয়াবিরোধী যে কার্যক্রম চলমান আছে তাহাতে বিনিয়োগ ও মনোযোগ— উভয়ই বাড়াইতে হইবে। এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়াইয়া তুলিতে পারে। অতএব,  নিশ্চিন্ত থাকিবার অবকাশ নাই।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews