চট্টগ্রামে জোড়া খুনের নেপথ্যে পাঁচ কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপি কমিশনারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিএমপির ডিসি (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন।
রোববার বিকালে জোড়া খুনের আসামি মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার ও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে- বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জুট ক্রয়-বিক্রয়, একই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বড় সাজ্জাদের অনুসারী হয়ে ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের প্রকাশ্য শক্তি প্রদর্শন, এলাকায় ছোট সাজ্জাদের ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা ও ছোট সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি আলমগীর হোসেন বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৩ নাম্বার আসামি মেহেদী হাসান। শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের পর শনিবার ভোরে হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পশ্চিম শহিদনগর এলাকায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলি উদ্ধার করে। মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি উদ্ধার করা বিদেশি পিস্তলটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে ৭.৬৫ বোরের বিদেশি পিস্তলের গুলির খোসা পাওয়া গিয়েছিল। ওই খোসাটি হাসানের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলের গুলির খোসা হতে পারে। পিস্তল ও খোসাটির ব্যালেস্টিক পরীক্ষার জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
ডিসি জানান, আসামিদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ধরে ধরে গ্রেফতার করা হয়েছে। জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার মো. সজিব আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি ঘটনায় কারা কারা জড়িত, কার কী ভূমিকা তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। এর আগে গ্রেফতার সজিব ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত থাকা, ঘটনার আগে এবং পরে বায়েজিদ থানাধীন ওয়াজেদিয়া এলাকায় পরিকল্পনার লক্ষ্যে বৈঠক করা, ঘটনার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ডিসি বলেন, ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জন এজাহারনামীয় ও চারজন তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।
এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- ছোট সাজ্জাদ ও হাসান। তদন্তে প্রাপ্ত গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মানিক, বেলাল, সজিব ও এহকেসাম রাফাত নীরব।
তিনি জানান, মামলার মূল আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলও উদ্ধার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এডিসি (দক্ষিণ), এসি (চকবাজার) জোন মোহাম্মদ নূরে আল মাহমুদ, বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন, বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক।
এর আগে ২৯ মার্চ রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকা থেকে একাধিক মোটরসাইকেলে থাকা কয়েকজন প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রাইভেটকারটি বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে প্রবেশ করে নগরীর চকবাজার থানার চন্দনপুরায় পৌঁছার পর থেমে যায়। তখন বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে হামলাকরীরা। এ ঘটনায় বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আবদুল্লাহ নামে দুই যুবক নিহত হন। এছাড়াও কয়েকজন আহত হন।
খুনের শিকার বখতেয়ার উদ্দিন মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না, মোহাম্মদ হাসান, মোবারক হোসেন ইমন, খোরশেদ, রায়হান ও বোরহান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়- ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর পরিকল্পনা অনুসারে আসামিরা গুলি করে মানিকসহ দুজনকে হত্যা করেছে। কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদকেও আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।