রাফাহ অভিযানের পথে ইসরায়েলের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিসর

৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, এতে সোমবার (৬ মে) পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৪ হাজার মানুষ। ছবি- এএফপি

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ওপর বিভিন্নভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এবার তাদের লক্ষ্য রাফাহ। গাজার এই একচিলতে ভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে দশ লাখেরও বেশি বাস্তহারা ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মুখোমুখি হলে কোথায় যাবে তারা? 

তবে ইসরায়েলের এই অভিযানের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিসর। নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার্থেই  রাফাহ অভিযানের বিরোধিতা করছে তারা, এমনই মতামত ব্যক্ত করেন মিসরের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহমেদ আবদিন। 

রাফাহ অভিযানের ফলে বিপুল সংখ্যক বাস্তহারা গাজাবাসী মিসরে প্রবেশ করতে পারে, আর এখানেই মিসরের মাথাব্যথা। এমন এক পরিস্থিতির অবতারণা হতে পারে, এই আশঙ্কায় এপ্রিল মাসে ইসরায়েল এবং মিসরের কিছু কর্মকর্তা কায়রোয় বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু ছিল রাফাহ অভিযান এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধে জিম্মি চুক্তি।

এই বৈঠকের পর পরই আবার মিসরের একটি প্রতিনিধি দল তেল আবিবে সফর করেন এবং আবারও এ সংক্রান্ত আলোচনায় বসেন। এ সময়ে আবার মিসরের পত্রিকা আল-শরুক একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় রাফাহ অভিযান করলে ভঙ্গ হবে ইসরায়েল-মিসর শান্তি চুক্তি, আর এর যথাযথ উত্তর দেবে কায়রো। 

রাফাহ অভিযান নিয়ে কায়রোর এহেন দুশ্চিন্তা অমূলক নয়। সীমান্তের দুই পাশে দুটি শহরের নামই এক- মিসরের রাফাহ এবং ফিলিস্তিনের রাফাহ। ১৯৮২ সালের আগে দুটো শহর একই ছিলো। ভাগ হয়ে যাবার পর অনেক পরিববারের একাংশ থাকে মিসরের অংশে, কেউ থাকে ফিলিস্তিন অংশে। ফলে ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়ে রাফাহ থেকে মিসরে প্রবেশ করবে ফিলিস্তিনিরা, এমন পরিস্থিতি হতেই পারে। 

বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর কারণে মিসর অনেক ধরণের সমস্যায় পড়তে পারে, এর মাঝে একটি হলো নিরাপত্তাজনিত সমস্যা। মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে এ উদ্বাস্তুদের অনেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে পারে। এক্ষেত্রে উভয় সংকটে পড়বে মিসর। তারা যদি উদ্বাস্তুদের থামাতে চেষ্টা করে, তা দেখে মনে হবে ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে মিসর। কিন্তু এদেরকে থামানোর চেষ্টা না করলে আবার মিসরের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। 

ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে কোনোভাবেই আর নিরপেক্ষ এবং নিশ্চুপ থাকতে পারছে না মিসর, বলেন আহমেদ আবদিন। 

১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড একর্ডের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিসরের ভালো সম্পর্কের পেছনে শর্ত হিসেবে রয়েছে ইসরায়েল-মিসরের ভালো সম্পর্ক। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জোরেই অনেক খারাপ সময় উতরে গেছে মিসর। আর মিসরের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে ইসরায়েলও চেষ্টার ত্রুটি করেনি। 

কিন্তু কয়েক দশকের এই সাম্যাবস্থা ভাঙ্গতে চলেছে। ইসরায়েলের নেতানিয়াহু গোঁ ধরেছেন, রাফাহ শহরে ইসরায়েলি স্থল অভিযান হবেই। এই অভিযানের ফলাফল যাই হোক না কেন, এতে কোনোভাবেই মিসরের উপকার হবে না। আর তাই অভিযানটি থামিয়ে দিতে, বা অন্তত বেশকিছুটা সময়ের জন্য থামিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিসর। 

গাজাবাসীদের শেষ আশ্রয়: রাফাহ

৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, এতে সোমবার (৬ মে) পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৪ হাজার মানুষ, আহত হয়েছেন এর দ্বিগুণেরও বেশি। শুধু তাই নয়, বাস্তুহারা হয়েছেন লাখো মানুষ, এর মাঝে অন্তত ১৫ লাখ বর্তমানে রয়েছেন রাফাহ শহরে।

এই উদ্বাস্তুদের অনুভূতি নিয়ে লিখতে গিয়ে একটি কবিতার অবতারণা করেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত লেখক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গাদা এজিল। ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া গাজার ইসলামিক ইউনিভারসিটির সহকারী অধ্যাপক ও এজিলের শিক্ষক ড আকরাম হাবিবের এই কবিতায় বলা হয়- 

কখন আমরা মৃতের সংখ্যা গোনা বন্ধ করব?
কখনো রোমের গীর্জায় ঘন্টা বাজবে?
কখন আমাদের মৃত্যুতে তোমাদের হৃদয়ে দয়া হবে?
কখন তোমরা আমাদের সত্যি উন্মোচন করবে?
কখন নিরাপত্তা পরিষদের মর্জি হবে?
কখন গাজার দোজখের আগুন নেভাবে বিশ্ব?
কখন আমাদেরকে পর্দায় একসারি সংখ্যা হিসেবে গণ্য করা বন্ধ হবে?
কখন সন্ত্রাসীরা আমাদের শিশুদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেওয়া বন্ধ করবে?
কখন ন্যয়বিচার তার মুকুট পরে আমাদের পাশে দাঁড়াবে?
কখন থামবে গাজার যুদ্ধ, অন্তত কিছু সময়ের জন্য?

গাজায় গণহত্যার সাক্ষী ২২ লাখ মানুষের মনেও রয়েছে এ প্রশ্নগুলো। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ইসরায়েলের ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পাওয়ার খবরে তারা ক্ষুব্ধ, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে গণহত্যার ইতি টেনে এই পরিস্থিতির যথাযথ পরিবর্তন আনার বিকল্প নেই, এমন মতামত রাখেন এজিল।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews