শনিবার ঢাকার ব্রাক সেন্টারে অ্যাকশনএইড এবং ফ্যাশন রেভোলিউশন আয়োজিত ‘ভয়েসেস অ্যান্ড সল্যুশনস’ শীর্ষক সেমিনারে গত এক দশকে দেশীয় পোশাক শিল্পের অনেক সংস্কার উদ্যোগও আলোচনায় আসে।
অনুষ্ঠানে পোশাক শিল্পে পানি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে আয়োজকদের কয়েকটি তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন কারখানা মলিকরা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সুফল হিসেবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব কারখানার বিষয়টি তুলে ধরেন তারা।
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, শিল্পের ক্রমাগত বিকাশের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার উৎপাদিত বর্জ্যের কারণে প্রতক্ষ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
অ্যাকশনএইডের এক প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য খাত ফ্যাশন শিল্প। যেটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী খাত। একই সাথে এটি সারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পানি ব্যবহারকারী খাত। শুধুমাত্র এই একটি খাত থেকেই বিশ্বে ২০ শতাংশ বর্জ্য পানি এবং ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়।
বেশিরভাগ কারখানা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় তাদের বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রতিবছর পোশাক কারখানায় পোশাক ও তুলা ধৌতকরণ এবং রঙয়ের কাজে ১৫০০ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারের পর কারখানাগুলো এই বিষাক্ত পানি নদী এবং খালে নিষ্কাশন করে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, চার দশক আগে তারা নিজেদের বসতবাড়িতে কয়েকটি মেশিন বসিয়ে যে শিল্পের সূত্রপাত করেছেন তা সময়ের বিবর্তনে এখন অনেক উন্নতি লাভ করেছে।
“এরই ধারাবাহিকতায় দূষণ লাঘব ও ভারসাম্যপূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশে পোশাক খাত আরও ভূমিকা রাখবে। কেবল নেতিবাচক সূচক নিয়ে আলোচনা না করে পোশাক খাতের উন্নতিগুলোও এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে।”
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “পোশাক খাত নিয়ে অনেক সময়ে যেধরনের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়, তা বাস্তবতা থেকে অনেক ভিন্ন ও অতিরঞ্জিত।
“অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোগে পানির ব্যবহার কয়েকগুণ কমে এসেছে। ৮৩টি কারখানা গ্রিন সার্টিফিকেট অর্জন করার পাশাপাশি আরও কয়েকশ কারখানা সার্টিফিকেট পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো অবশ্যই এই খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রমাণ বহন করে।”
কিউটেক্স সল্যুশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহুরা খানম বলেন, “বর্জ্য নিষ্কাশন শুধু পরিবেশ দূষণই করছে না বরং জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি করছে। বর্তমানে গড়ে অধিকাংশ কারখানার জ্বালানি দক্ষতা মাত্র ২০-২৫ শতাংশ। শিল্প কারখানার এই নেতিবাচক প্রভাব রোধে সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প কারখানাসমূহের ভালো উদ্যোগগুলো সমন্বয়ের অভাবে সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না।”
সেমিনারে বিজিএমইএর পরিচালক শরীফ জহির, নিউএইজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির উপদেষ্টা ইমরান রহমান, ফ্যাশন রেভ্যুলেশনের কান্ট্রি কো অর্ডিনেটর নওশিন কবির বক্তব্য রাখেন।