সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই দুর্ঘটনা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রতিরক্ষা খাতের অবহেলার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কাউকে দায়ী না করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। মঙ্গলবার বিকালে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি যুগান্তরকে একথা বলেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার যেন আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করে, দেশ কিংবা বিদেশ যেখানে যা প্রয়োজন তা যেন করা হয়। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি। এর চেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা কল্পনা করা যায় না। আমরা দুঃখিত, বাইরে থেকে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব, আমরা অবশ্যই করব।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে কারও ওপর দোষ চাপানো যাবে না। যেমন কেন এখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল, বা সরকার কেন আরেকটা বিমান ঘাঁটি দেয়নি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারি। অনেক সময় বলাও দরকার হয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত কিনা। এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে এটা শুধু দুর্ঘটনা, নাকি বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, নাকি চালকের ভুল। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আমরা বুঝতে পারব কী হয়েছিল।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনা একাধিক কারণে ঘটে। আমাদের প্রতিরক্ষা খাতকে গত ১৫ বছর ধরে খুবই অবহেলা করা হয়েছে। আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি। প্রতিবেশী দেশের নির্দেশে বা ইচ্ছাকৃতভাবেই বলা যায়, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আনুষ্ঠানিক বাহিনী হিসাবে রাখা হয়েছে। এটি আর কার্যকর বাহিনী নেই। আমাদের অনেক আধুনিক সরঞ্জাম আসার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলো আসেনি।
প্রশিক্ষণের কাজে যুদ্ধবিমান ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। নির্ধারিত বিমানঘাঁটি থেকেই ফ্লাইট পরিচালিত হয়। সেটা প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হতে পারে, অপারেশন ফ্লাইট হতে পারে, বেসামরিক ফ্লাইটও হতে পারে। এখানেও তাই হয়েছিল। বিমান ঘাঁটি থেকেই উড্ডয়ন হয়েছিল, এরপর বিমানটি অকেজো হয়ে পড়ে। এখনো আমরা ঠিক জানি না কী হয়েছিল। বিমানটি অকেজো হয়ে যায়, চালক বের হওয়ার চেষ্টা করেন, তিনিও মারা যান। বিমানটি যেখানে পড়ে, সেটা ছিল একটি স্কুলের ওপর। এজন্য কাউকে দোষারোপ করা সহজ নয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে ভালো হতো যদি এই ধরনের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য একটি আলাদা বিমান ঘাঁটি থাকত, যার আশপাশে জনবসতি নেই। জনবসতি কম হলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকিও কম হয়। বিমান বিধ্বস্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি পুরোনো হলেও এখনো ব্যবহারযোগ্য। এটি একটি ভারী বিমান। প্রতিটি বিমানেরই নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকে। এই বিমানের আয়ুষ্কাল এখনো শেষ হয়নি। আর এ ধরনের বিমান শুধু আমরাই চালাই না-অনেক দেশ এখনো এই ধরনের বিমান ব্যবহার করে। চীন উৎপাদনকারী হওয়ায় অনেকেই বলেন এটা খুব আধুনিক নয়, কিন্তু বাস্তবে তা নয়।
তিনি বলেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি তা নয়-এই মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারি না। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই আমাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে আমি বলব, যারা মারা গেছেন, আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেটাই প্রার্থনা করি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশে বা বিদেশে যেসব পদক্ষেপ প্রয়োজন, বাংলাদেশ সরকার যেন তা নেয়-আমরা সেটাই চাই।’
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের আধুনিক সরঞ্জাম কিনতে হবে। চীনের প্রশিক্ষণ বিমান কেনার কথা ছিল, কিন্তু পূর্ববর্তী সরকার এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু দেখুন এই ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছিল সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধে। পাকিস্তান আধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের ছয় বা সাতটি বিমান ভূপাতিত করেছিল। এই ধরনের বিমান আমাদের কেনা উচিত।