তাপপ্রবাহও দুর্যোগ হইবে না কেন?

চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শুক্রবার হইতে মঙ্গলবার অবধি মাত্র পাঁচ দিবসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৯ জন মৃত্যুবরণ করিবার পরও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়া দুঃখজনক হইলেও বিস্ময়কর নহে।

দুঃখজনক কারণ, অদ্যাবধি প্রায় সকল বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে দুর্গত মানুষের সুরক্ষায় নানাবিধ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান। অথচ চলমান তাপপ্রবাহে প্রাণহানি ও অন্য ক্ষয়ক্ষতি তদপেক্ষা কম না হইলেও এহেন কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয় নাই।

বুধবার এ-সংক্রান্ত সমকালের প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, কৃষি ও নির্মাণশিল্পে কায়িক শ্রমে জড়িতদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর এহেন শ্বাসরুদ্ধকর তাপমাত্রা ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া তথায় বলা হইয়াছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে শ্রমঘন ঢাকা মহানগরের মানুষের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাইতেছে। এই প্রক্রিয়ায় এখানে প্রতি বৎসর প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বা ৬০ হাজার কোটি টাকার শ্রম উৎপাদনশীলতা হারায়। অবশ্য এই দুর্যোগে অদ্যাবধি মৃত প্রায় সকলেই নিম্নআয় বা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। 

এই অসহায় মানুষের প্রতি বিদ্যমান রাষ্ট্র ও সমাজের ঔদাসীন্য প্রায় সর্বজনবিদিত। অতএব, তাপপ্রবাহকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’রূপে সরকারের ঘোষণা না করা কিংবা নাগরিক সমাজেও এই বিষয়ে উচ্চবাচ্য না থাকায় বিস্ময় প্রকাশের অবকাশ কম।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী বলিয়াছেন, তাপপ্রবাহের কারণে তাহারা নগর বনায়নের দিকে নজর দিয়াছেন। ঢাকার চতুষ্পার্শ্বের ইটভাটা বন্ধ করা হইতেছে; দূষণ হ্রাসেও চলিতেছে বিভিন্ন উদ্যোগ। কিন্তু ঠিকঠাক এই সকল পরিকল্পনা কার্যকর হইলেও, বাস্তব কারণে তাৎক্ষণিক কোনো ফল প্রত্যাশা করা যায় না। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক যৌথ গবেষণার ফল অনুসারে, ঢাকাসহ দেশের পাঁচ প্রধান নগরের ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ প্রবল গরমে বিপর্যস্ত, যথায় ৯ বৎসরের কম ও ৬৫ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষ সর্বাধিক শারীরিক সমস্যায় নিপতিত। ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উষ্ণতাজনিত অসুস্থতা চিকিৎসার যে নির্দেশিকা প্রস্তুত করিয়াছে, উহাতে বলা হইয়াছে, তাপপ্রবাহকালে স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা মৃত্যু বৃদ্ধি পায়, ২০০৩ হইতে ২০০৭ সালের মধ্যে দেশে যাহা ৩ শতাংশ অবধি বাড়িয়াছিল। অতএব, বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কোনো উদ্যোগে প্রত্যাশিত ফল আসিবে না। 

বিদ্যমান পরিস্থিতিই বলিয়া দেয়, ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ আরও কত ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করিবে। অতএব, আলোচ্য বিষয়ে উন্নাসিকতার উপায় নাই। শুধু তাপপ্রবাহকালে বৃক্ষরোপণ লইয়া কথাবার্তা বন্ধ করিয়া বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ অনুসারে তাপপ্রবাহকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা দিয়া উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। তৎসহিত সেই সকল পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করিতে হইবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews