কুয়েতে গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) আগেই স্নাতক পাস করেছেন বলে অবিশ্বাস্য দাবি করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার এই তথ্য দিয়েছেন। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, পাপুল আসলে এসএসসি পাসও করেননি।

পাপুল দাবি করেছেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। আবার জানিয়েছেন, সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৯৮৭ সালে। এ ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্টতই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতেও পড়াশোনা করেছেন বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছে। তবে তার আমেরিকায় পড়াশোনার কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদরের একাংশ) আসনের এমপি পাপুল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত হন। রায়পুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুনুর রশীদ সমকালকে বলেন, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে পাপুল লেখাপড়া করেননি। ১৯৮৭ সালের আগেই পাপুল চাকরির জন্য কুয়েত চলে যান। সেদেশে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৭ সালে সিয়েরা লিয়ন গিয়ে লেখাপড়ার দাবি হাস্যকর। তিনি যেসব শিক্ষাগত সনদ সংগ্রহ করেছেন সেগুলো শতভাগই ভুয়া। তিনি বলেন, পাপুল তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাও মিথ্যা।

মামুনুর রশীদ ঘাঁটাঘাঁটি করে বলেছেন, পাপুল তার হলফনামায় সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ থেকে যে বিষয়ে স্নাতক পাসের তথ্য উল্লেখ করেছেন প্রকৃতপক্ষে ওই কলেজে ওই বিষয়ে পড়াশোনাই করানো হয় না।

হলফনামায় পাপুল লিখেছেন, সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্সে স্নাতক করেছেন তিনি। শিক্ষাবর্ষ ছিল ১৯৮৬-১৯৮৭। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, কলেজটিতে ওই বিষয় পড়ানোই হয় না।

পাপুল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর উল্লেখ করলেও জমা দিয়েছেন স্নাতক পাসের সনদ।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই হলফনামার সঙ্গে পাপুলের জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার ওই সনদ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ওই দিন শুনানি হয়নি।

ফয়েজ ভূঁইয়া বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। তার আইনহজীবী সালাহ উদ্দিন রিগান সমকালকে বলেন, পাপুল শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার তথ্য দিয়েছেন কিন্তু জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এই স্নাতক সনদটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে তিনি এসএসসি পাসও করেননি।

মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন পাপলুকে গ্রেপ্তার করেছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি। তিনি এখন দেশটির কারাগারে বন্দি। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাপুলের নামে জমা থাকা বিপুল অর্থ জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানব ও অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। পাপুলের বিরুদ্ধে দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, পাপুল কুয়েতে মানব পাচার করে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। হুন্ডির মাধ্যমে ওই অর্থ দেশে অর্থ আনা ও বিভিন্ন দেশে পাচারেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ২০১৬ সালে পাপুল বিদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews