চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং এখন অনিয়ম, জবাবদিহিহীনতা আর প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অপব্যবহারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের রাজস্ব আদায় থেকে শুরু করে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে কাজ করলেও বর্তমানে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর রাব্বিক হাসানের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। তার বিতর্কিত কর্মকান্ডে কেরু কোম্পানি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে নানা দেখা দিয়েছে ।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এটি একটি সম্বলিত কারখানা। এখানে চিনি, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট ও দেশী-বিদেশী মদ উৎপাদন করা হয়। কারখানার মূল পণ্য চিনি হলে কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রাখছে ডিস্টিলারি পণ্য মদ। সরকারি প্রতিষ্ঠান কেরুর কান্ট্রি স্পিরিট প্রতি বছর রাজস্ব খাতে এনে দেয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান এমডি বোটলিং করে এ খাতকে ধ্বংস করে বেসরকারি খাতকে বড় ধরনের সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্রের সহযোগিতায় অনিয়ম, প্রশাসনিক কর্তৃত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছিলেন এমডি। তার একচ্ছত্র আধিপত্য ও অদৃশ্য শক্তির কাছে সৎ কর্মচারী-কর্মকর্তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ডিএনসিকে তোয়াক্কা না করেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন দেশী মদ বোতলজাতকরণ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অ্যালকোহল বিধমিালাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছন না রাব্বিক হাসান।
জানা গেছে, এ কোম্পানির অধীনে ১৩টি ওয়্যার হাউস রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ওয়ার হাউজগুলোর দায়িত্বে থাকা প্রত্যেকের কাছে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করা হয়েছিলো। টাকা দিতে না পারলে তাদের বদলি করা হবে। এত টাকা দিতে না পারায় প্রায় সব ওয়ার হাউজের কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আনা হয়েছে অন্যদের। তবে ঘুষের টাকা রাব্বিক হাসান নিজে গ্রহণ না করে তার সাবেক বস লিপিকা ভদ্রের মাধ্যমে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিটি বাংলা মদ ছাড়া সব ধরনের মদ উৎপাদন করতে পারে। তবে সাবেক চেয়ারম্যান লিপিকা ভদ্রের পরামর্শের তড়িঘড়ি করে বাংলা মদ তৈরি করতে সম্প্রতি ৪০ লাখ প্লাাস্টিকের বোতল গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। যেখানে প্রতি পিস বোতল ১৪ টাকা করে কেনা হয়। কিন্তু এ বোতলের বাজার দর সাত টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি বোতলে অতিরিক্ত সাত টাকা বেশি গুনতে হয়েছে সরকারকে। এর আগে লোহার সিএস থাকলেও সেগুলো স্ক্র্যাব হিসেবে বিক্রি করে দ্বিগুণ দামে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্লাস্টিক বোতল ক্রয় করেছেন।
সম্প্রতি এক শ’ এবং পাঁচ শ’ এমএল বোতলজাতকরণের ক্ষমতা ডিএনসি হতে প্রভাব বিস্তার করে কান্ট্রি স্পিরিট বা দেশী মদ বোতলজাতকরণের অনুমোদন নেয়া হলে বোতলিং লাইসেন্স নেয়া হয়নি। সব র্শত ভেঙে নিয়মিত বাণিজ্যিকভাবে মদ বোতলজাত করা হচ্ছে। উচ্চ সুরাশক্তির অ্যালকোহল নিম্ন শক্তিতে আনার পর ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি আন্ডার প্রুফ দেশী মদ বোতলজাত করে সরবরাহের নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে পণ্যাগারে সরবরাহে কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাবে টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কেরু কোনো আইন না মানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধীদফতরের দর্শনা ডিস্ট্রিলারি অফিসার পরির্দশক ছানোয়ার হোসেন গত ২৮ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে রিপোর্ট দেন। এরপরই তাকে সেখান থেকে বদলি করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের এমডি মীর রাব্বিক হাসান সব অভিযোগ অস্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে। আপনাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে তা কাল্পনিক-ভিত্তিহীন। কেননা প্রতিটি বিষয়ে আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে। সময় হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সেক্টরে রাজস্ব আয় অনেক বেশি হবে, যা আগামী জুলাই মাসে সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিল করা হবে।
বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রশিদুল হাসান বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।