পিএসসির অধীনে নার্স নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নয়জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম, গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) সাব ইন্সপেক্টর মো. তাজুল ইসলাম বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় বৃহস্পতিবার এ মামলা দায়ের করেন।
একই দায়েরকৃত মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত আরিফুল ইসলাম (৩০) ও সাইফুল ইসলামের (৩৭) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুসারে সহযোগী হিসেবে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, কামাল পাটোয়ারী, মো. ইকবাল হোসেন সবুজ, আনিস, জুয়েল, রফিকুল, ফারুক ও নার্গিস মুন্নীসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬জন। প্রশ্ন ফাঁসের দুই অন্যতম হোতা আরিফ ও সাইফুল সহযোগী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের প্রায় সকলেই নার্স নেতা। অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত।
অভিযোগ উঠেছে, গ্রেফতারকৃত দুজন জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের অনেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস তো দূরের কথা, প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন মিডিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন বলে আরিফুল ও সাইফুল শক্রুতা করে মামলায় তাদের নাম ঢুকিয়েছে।
তাদেরই একজন স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে সারাদেশের নার্সদের ঐক্যবদ্ধ করতে গত কয়েকমাস যাবত তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।এছাড়া নার্সিং সেক্টরের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকার কারণে তাকে হেয় প্রতিপন্ন ও সম্মানহানি করতে আরিফুল ও সাইফুল তার নাম জড়িয়ে দিয়েছে।
সবুজের দাবি, পিএসসির অধীনে ৬ অক্টোবরের নার্স নিয়োগ পরীক্ষা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পরীক্ষা করলে প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়বে। প্রয়োজনে তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত রয়েছেন। তার মতো এজাহারভুক্ত আসামিদের আরও দু’ একজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে তারা শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি। কিন্তু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যেন তাদের হয়রানি হতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর ১০টি কেন্দ্রে মোট চার হাজার ছয়শ সিনিয়র স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি তিন হাজার ছয়শ ও মিডওয়াইফ এক হাজার) নিয়োগ পরীক্ষার বিপরীতে ১৬ হাজার নয়শ’জন অংশগ্রহণ করেন। শিউলি, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, কামিনী নামে চার সেটের প্রশ্নপত্র ছাপে পিএসসি। কিন্তু সব সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার আগে পাওয়া যায়। একাধিক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষার হলে গিয়ে তারা দেখেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়ে অনিবার্য কারণে পরীক্ষা বাতিল করে পিএসসি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়।
এমইউ/ওআর/এমএস