ইউরোপিয়ান ফুটবলে যখন অর্থের ঝনঝনানি, যখন ডলার আর পাউন্ডের ছড়াছড়ি; তখন ছোট ক্লাবগুলোর চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। তাদের হয়তো সাধ জাগে তারকা কেনার। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য যে নেই। টেনেটুনে চলা কিংবা স্বল্প পরিমাণের বিনিয়োগ থেকে হিসাব করে খরচ করতে বলায় তারা কেবল ফুটবলটাই খেলে যান। আর একপাশ থেকে প্রতি মৌসুমে ফেভারিটরাই হয় লাভবান, তাদের শোকেসেই যায় শিরোপাগুলো।
লিস্টার যেন তারই এক বাস্তব উদাহরণ। থাই ধনকুবের আইওয়াত। দক্ষিণ এশিয়ান সেরা ধনীদের একজন তিনি। কিন্তু লিস্টারকে দু’হাত ভরে পয়সা দেওয়ার বেলায় তাঁর যত গড়িমসি। সে জন্য গত কয়েক মৌসুম ধরে তাদের স্কোয়াডে নেই সেই মানের তারকা। যেখানে প্রতিটি দলবদলে একাধিক খেলোয়াড় কিনছে প্রিমিয়ার লিগের অনেক ক্লাব। সেখানে রয়েসয়ে খরচা করতে হচ্ছে লিস্টারকে। যার বড় একটা প্রভাব তাদের পারফরম্যান্সেও পড়ে। গত মৌসুমে হারতে হারতে অবনমনে চলে যায়। সেখানে লড়াই শেষে অবশেষে মিলেছে সুখবর। আগামী মৌসুমে আর দ্বিতীয় বিভাগে খেলতে হবে না তাদের। আবারও চেনা মঞ্চ প্রিমিয়ার লিগেই দেখা যাবে দ্য ফক্সেস খ্যাত লিস্টারকে।
১৪০ বছরের পুরোনো ক্লাব। বহু হাসি-কান্না তাদের ইতিহাসের পাতায়। তবে হাসির চেয়ে কান্নার অধ্যায়ই বেশি। খুব একটা সাফল্যের দেখা পাননি। একবারই তাদের ঘরে এসেছে উৎসব। সেই ২০১৫-১৬ মৌসুম। প্রিমিয়ার লিগে সেবার লিস্টারের আগমন হয়েছিল রূপকথার দৈত্যের মতো। তখন ক্লাবটির কোচ ছিলেন ক্লদিও রানিয়েরি। মাঠে তারকার ছড়াছড়ি। সে সময় খেলোয়াড়দের পেছনে এত এত অর্থ ঢালার প্রতিযোগিতা ছিল না।
তাই লিস্টারও বেশ কয়েকজন দক্ষ খেলোয়াড়কে নিজেদের দলে ধরে রাখতে পেরেছিল। তাদের মধ্যে দুই মানিকজোড় জেমি ভার্দি ও রিয়াদ মাহরেজ। মূলত তারাই ছিলেন সেবারের নায়ক। এর পর তো মাহরেজকে নিয়ে যায় ম্যানসিটি। তবে ভার্দি ভোলেননি অতীত। থেকে যান লিস্টারে। কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের সঙ্গে তাঁর বন্ধনটা আরও শক্ত হয়। দুর্দিনেও ছাড়েননি হাল। দলনেতার আর্মব্যান্ডটা পরে বুক ফুলিয়ে এখনও মাঠে নামেন। লিস্টারের জন্য তাঁর ভালোবাসা সত্যি প্রশংসার দাবিদার।
এবার যখন সেই ভার্দির মুখে প্রিমিয়ার লিগে ওঠার হাসি, তখন গ্যালারির দর্শকদের কণ্ঠেও ওঠে জেমি জেমি রব। দর্শকরাও নিশ্চয়ই ভোলেননি তাঁর অবদান, তাঁর ত্যাগ। এখন শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আগামী মৌসুমে হয়তো আগের মতো ভুলটা করতে চাইবে না তারা। অন্তত দু-তিনজন খেলোয়াড় কিনে হলেও নতুন করে দলটাকে গুছিয়ে নেবে। তাতে যদি হারানো গৌরবটা ফিরে পাওয়া যায়।