যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ থেকে ওয়াল্টজকে সরিয়ে দিলেন ট্রাম্প, বসাতে চান নতুন পদে

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন মাইক ওয়াল্টজ

  • Author,

    বার্ন্ড ডেবুসম্যান জুনিয়র

  • Role,

    বিবিসি নিউজ, হোয়াইট হাউজ

  • ১৯ মিনিট আগে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মাইক ওয়াল্টজকে। তাকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার কথা রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে ওয়াল্টজকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প।

তিনি সেখানে আরও বলেছেন, ওয়াল্টজ-এর জায়গায় অস্থায়ীভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ওয়াল্টজ ভুল করে একটি চ্যাট গ্রুপে একজন সাংবাদিককে যুক্ত করার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন যেখানে গোপন সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

রাজনৈতিকভাবে এটি বেশ বিব্রতকর একটি বিষয়, যা সম্ভবত জাতিসংঘের পদে নিয়োগ নিশ্চিত করার শুনানিতে উঠে আসবে।

ফ্লোরিডার এই সাবেক কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়া প্রশাসনের প্রথম সিনিয়র সদস্য।

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে লিখেছেন, "যুদ্ধক্ষেত্রে ইউনিফর্ম পরা অবস্থা থেকে, কংগ্রেসে এবং আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে, মাইক ওয়াল্টজ জাতির স্বার্থকে সবার ওপরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।"

"আমি জানি তিনি তার নতুন দায়িত্বেও একইভাবে কাজ করবেন।"

ওয়াল্টজ এক্স-এ একটি ছোট বিবৃতি পোস্ট করেছেন, সাথে প্রেসিডেন্টের ঘোষণার একটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন।

"প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমাদের মহান জাতির জন্য আমার সেবা অব্যাহত রাখতে পেরে আমি গভীরভাবে সম্মানিত," তিনি লিখেছেন।

মার্কো রুবিও এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

মার্কো রুবিও এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

সিবিএস নিউজের মতে, ট্রাম্প বৃহস্পতিবারের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই ওয়াল্টজকে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেন।

এই সংবাদমাধ্যমটিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে সিগন্যালের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং হোয়াইট হাউজে তার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা গড়ে ওঠায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউজে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল যে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মীদের যথাযথভাবে যাচাই করেননি। এমন আরও নানা কারণ আছে।

তবে সূত্রগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্প ওয়াল্টজকে সম্মান করেন বলে তাকে সফট ল্যান্ডিং দেয়া হয়েছে অর্থাৎ লঘু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তাকে জাতীয় উপদেষ্টার পদ থেকে সরানো হলেও অন্য একটি বড় পদ বা হাই প্রোফাইল পদ দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে - যারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তারা বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা ছিল যে সেনেটের অনুমোদন পেতে ওয়াল্টজের সমস্যা হতে পারে, এ কারণে প্রেসিডেন্ট তাকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়, বরখাস্ত না করেই।

মার্চ মাসে ওয়াল্টজ স্বীকার করেন যে তিনি ভুল করে 'দ্য অ্যাটলান্টিক' ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে 'সিগন্যাল'-এর একটি গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত করেন, যেখানে শীর্ষ মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছিলেন – সেই থেকেই তিনি নজরদারির মধ্যে আছেন।

সেই মেসেজে ইয়েমেনের হুথিদের ওপর সামরিক হামলার গোপন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়, যার সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ওয়াল্টজ, রুবিও এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ।

বুধবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময় রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এভলিন হকস্টেইন মাইক ওয়াল্টজের ফোনের ছবি তুলেছিলেন

ছবির উৎস, Reuters

ছবির ক্যাপশান,

বুধবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময় রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এভলিন হকস্টেইন মাইক ওয়াল্টজের ফোনের ছবি তুলেছিলেন

বৃহস্পতিবার ওয়াল্টজের ডেপুটি অ্যালেক্স ওং-এর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের একজন অভিজ্ঞ পররাষ্ট্রনীতিবিদ, যিনি ওই 'সিগন্যাল' চ্যাটে ছিলেন।

বুধবার বিবিসির 'নিউজনাইট' প্রোগ্রামে এক সাক্ষাৎকারে তাকে ওই তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, প্রশাসন ইয়েমেনের হুথিদের মোকাবেলায় "খুব সফল" হয়েছে এবং "এই বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প"।

মার্চ মাসে, আইনপ্রণেতারা শুনানিতে সিগন্যাল চ্যাটের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, যার মধ্যে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক এবং সিআইএ-এর পরিচালকও ছিলেন।

জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূতের পদটি এখনো খালি আছে। ট্রাম্প তার প্রথম পছন্দ, নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক-এর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন, কারণ রিপাবলিকানদের মধ্যে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, প্রতিনিধি পরিষদ) তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ ছিল।

মিনেসোটার গভর্নর এবং ডেমোক্র্যাটদের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালজ বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি হালকাভাবে নেন।

তিনি এক্স-এ পোস্ট করেছেন: "মাইক ওয়ালজ চ্যাট ছেড়ে চলে গেছেন।"

মাইক ওয়াল্টজ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

মাইক ওয়াল্টজ

বুধবার হোয়াইট হাউসের মন্ত্রিসভার বৈঠকে রয়টার্সের একজন ফটোগ্রাফারের তোলা একটি ছবি অনুযায়ী ওয়াল্টজ এখনো 'সিগন্যাল' ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন।

জুম-ইন করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওয়াল্টজ তার ফোন চেক করছেন এবং মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স নামে সেইভ করা এক ব্যক্তির সাথে চ্যাট চলছে।

ভ্যান্সের লেখা মেসেজের আংশিক অংশে লেখা ছিল: "আমি আমার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছি যে এটি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি এখানে আসছেন।"

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স ওয়াল্টজকে বরখাস্ত করা হয়েছে—এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে তাকে প্রকৃতপক্ষে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

"আমি মাইককে পছন্দ করি," ভ্যান্স বলেন। "আমি মনে করি তিনি একজন দুর্দান্ত ব্যক্তি। তিনি, আমি ও প্রেসিডেন্ট প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আস্থার পাত্র।

"কিন্তু আমরা এটাও ভেবে দেখেছি যে এই পর্যায়ে তিনি একজন ভালো জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হয়ে উঠবেন।"

এদিকে ট্রাম্প রুবিওর জন্য যে নতুন দায়িত্ব ঘোষণা করেছেন, তা যেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে।

রুবিও এখন হেনরি কিসিঞ্জারের পর প্রথম কর্মকর্তা যিনি একইসাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং এটা ঘটছে প্রায় ৫০ বছর পর।

ট্রাম্পের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন

প্রারম্ভিক অবস্থায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং জাতীয় আর্কাইভ উভয়েরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান রুবিও।

কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে স্টিভ উইটকফ, যিনি একাধারে একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বন্ধু এবং বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত, তিনি শেষ পর্যন্ত ওয়াল্টজের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।

ওয়াশিংটনের কেউ কেউ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরেকটি নাম প্রচার করছে, তিনি হলেন ট্রাম্পের বিশেষ দূতদের একজন, রিক গ্রেনেল, যার দীর্ঘ কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে চারজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিবর্তন করেছিলেন। প্রথমজন, মাইকেল ফ্লিন, মাত্র তিন সপ্তাহ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আরেকজন, জন বোল্টন, পরে ট্রাম্প সম্পর্কে সমালোচনামূলক একটি বই লিখেছিলেন।

বৃহস্পতিবার বোল্টন বিবিসিকে বলেন, ওয়াল্টজকে সরিয়ে দেওয়া ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের "বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির" কথাই মনে করিয়ে দেয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews