উত্তরা গণভবন আর বনলতা সেনের স্মৃতিবিজড়িত নাটোর। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নাটোরের চারটি আসনে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। আগে থেকেই নাটোর বিএনপির মজবুত ঘাঁটি হিসেবে বেশ পরিচিত। সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত।

১৯৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার আসনের মধ্য একটি আসন পায় বিএনপি। পরে উপনির্বাচনে আরো একটি আসন বিএনপির দখলে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি চারটি আসনেই জয় লাভ করে। ২০০৮-এ তিনটি আসন পায় বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি একটিতে জয়লাভ করে। এরপর নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এর নির্বাচনে সবকয়টি আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল।

বর্তমানে বিএনপি আবারও শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। নাটোরের সব আসনে বিএনপি জয়লাভে মরিয়া হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই জামায়াতও, তারাও নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। কিন্তু এনসিপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মাঠে তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া): আসন মানেই বিএনপির ধানের শীষের ঘাঁটি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনটি বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এ আসনে পরপর চারটি সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলুল রহমান পটল। এরপর ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে ফজলুল রহমান পটলকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা আবু তালহা জয়লাভ করে। ২০১৪ সাল ২০২৪ পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে যায়।

এবার এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ফজলুল রহমান পটলের মেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী এবং নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও পুতুলের ভাই ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজনের সমর্থক ও কর্মীরা পুতুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রাজন এখনো পর্যন্ত কোনো ঘোষণা দেননি। এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের

প্রার্থী আব্দুল আহাদ। তবে এনসিপি, এবি পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এখনো মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি। বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা নিয়মিত নির্বাচনী গণসংযোগ করে চলেছেন।

নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা): জেলার রাজনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এ আসনটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত সৃদঢ় আসনটিতে। যার কারণে এ আসনটিতে দুলুর ওপর বারবার আস্থা রেখেছে দলটি। এবারও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দুলুকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অবহেলিত নাটোরে গ্যাস সংযোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন তিনি।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনে পরপর তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং এরপর ভূমি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান রয়েছেন। অপরদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ইউনুস আলী প্রতিনিয়তই মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, গণসংযোগ করছেন। তবে এনসিপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে দেখা মেলেনি।

নাটোর-৩ (সিংড়া): এ আসনটিতে বিএনপির বরাবরই জনসর্মথন ব্যাপক। ১৯৯১ সালে জামায়াতের সংসদ সদস্য আবু বক্কর শেরকলীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে এ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তবে এ আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এখানে বিএনপির চার নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা হলেন-বিএনপির জাতীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য ও তিন বারের সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির সদস্য ও সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন আনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক দাউদার মাহমুদ এবং সিংড়া বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ব্যারিস্টার ইউসুফ আলী।

অপরদিকে, এই আসনটিতে জামায়াতের একক প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুফতি রুহুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খলিলুর রহমান এবং এনসিপির প্রার্থী এস এম জার্জিস কাদির। তবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জামায়াত প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা মাঠে তেমন সক্রিয় নন।

নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর): আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। নিষিদ্ধঘোষিত দল আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সভাপতি প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এ আসনে ছয় বার সংসদ সদস্য র্নিবাচিত হন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ।

অন্যদিকে, জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ও সংগঠনটির জেলার সহসভাপতি জামিল আহমেদ। আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থী সমান তালে মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews