মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজধানী কিয়েভের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমেরিকা বিশ্বের একটি বাতিঘর।’
আগামী সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই স্বঘোষিত বাতিঘরের দায়িত্ব কে নেবে, তা দেখার জন্য বিশ্ব এখন অধীর অপেক্ষায়। কমলা হ্যারিস বিজয়ী হয়ে কি বাইডেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন? তিনি বলেছেন, ‘এই অস্থির সময়ে এটা স্পষ্ট– আমেরিকা পিছু হটতে পারে না।’ নাকি ‘আমেরিকানবাদ, বিশ্ববাদ নয়’ এই মন্ত্র নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হবেন?
বুধবার বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজা, ইউক্রেন এবং অন্যত্র বিধ্বংসী যুদ্ধ ওয়াশিংটনের ভূমিকার মূল্য সম্পর্কে অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করছে। তবে আমেরিকা তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং অনেক জোটে তার প্রধান ভূমিকার কারণে এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় ন্যাটোর অন্য ৩১ সদস্যের সামরিক বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ। ন্যাটোর বাইরে চীন, রাশিয়াসহ সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করা পরবর্তী ১০টি দেশের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্র একাই বেশি ব্যয় করে থাকে সমর খাতে।
ট্রাম্প দম্ভ করে বলেছেন, তিনি অন্যান্য ন্যাটো দেশকে তাদের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাধ্য করবেন, যা তাদের জিডিপির ২ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালে মাত্র ২৩টি সদস্য দেশ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
কমলা জিতলে ন্যাটো নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের হাতে থাকবে। তিনি ইউক্রেনে বিজয় অর্জনের জন্য ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকবেন। তবে তিনি ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া থেকে পিছপা হবেন না।
অন্যদিকে, ট্রাম্প বিজয়ী হলে তিনি গাজা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ইস্যুতে ইসরায়েলের হাত আরও মুক্ত করে দিতে পারেন। তিনি মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেনকে চুক্তিতে বাধ্য করতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা চলছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
তবে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সবাই চীনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। উভয় দলই বেইজিংকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ভাবে।
নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বনেতাদের একটি সংগঠন এল্ডার্সের চেয়ার মেরি রবিনসন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শুধু তার নাগরিকদের জন্যই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য জলবায়ু ও প্রকৃতির সংকটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে হারিকেন মিল্টন এবং হেলেনের তাণ্ডবের মধ্যেই ট্রাম্প জলবায়ু জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য পরিবেশগত পরিকল্পনা এবং নীতিকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কেলেঙ্কারির অন্যতম’ বলে বিদ্রুপ করেছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদের মতোই আবারও ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে পারেন। কমলা অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বেশি কথা বলেননি।
দুই প্রার্থীর সমাপনী বক্তব্য
ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার ভোটারদের উদ্দেশে তাদের সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন।
কমলা তাঁর বক্তব্য এমন স্থানে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় চার বছর আগে ক্যাপিটল দাঙ্গা ঘটে। কমলা বলেন, এই নির্বাচন সম্ভবত আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট। এর মানে, স্বাধীনতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়া। তিনি তাঁর এই সমাপনী বক্তব্যে আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও আক্রমণ করতে ভোলেননি।
তিনি বলেন, প্রায় চার বছর আগে এই স্থানে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাঁড়িয়েছিলেন এবং জনগণের ইচ্ছাকে দমন করার জন্য সশস্ত্র জনতাকে পাঠিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি এখন বড় একটি সমস্যা। এ-বিষয়ক তাঁর বক্তব্য হলো, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, খরচ কমানো, যা এখনও অনেক বেশি।
ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার অ্যালেন্টাউনে একটি প্রচারণা সমাবেশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, যেটির ফলাফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্রাম্প তাঁর ভাষণ শুরু করেন একটি সহজ প্রশ্ন দিয়ে। ভোটারদের তিনি জিজ্ঞাসা করেন, চার বছর আগের তুলনায় আপনারা কি এখন ভালো অবস্থায় আছেন? এর পর একে একে তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর পুনরাবৃত্তি করেন। এর মধ্যে রয়েছে– মূল্যস্ফীতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
তিনিও কমলা হ্যারিসের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, কমলা আমাদের লজ্জিত করেছেন। তাঁর মাঝে নেতৃত্বের যোগ্যতা নেই। ট্রাম্প জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনে কারচুপি করবেন।
জরিপের সর্বশেষ আপডেট
সর্বশেষ রয়টার্স/ইপসোস প্রকাশিক জাতীয়ভিত্তিক জরিপে কমলার সঙ্গে ব্যবধান ক্রমেই কমিয়ে আনছেন ট্রাম্প। গতকাল প্রকাশিত জরিপে কমলা মাত্র ১ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। তাঁর সমর্থন ৪৪ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৩ শতাংশ। জরিপে প্রায় ৩ শতাংশ পয়েন্ট ত্রুটি রয়েছে।
খ্যাতনামা মার্কিন জরিপকারী সংস্থা রাসমুসেনের পৃথক টেলিফোন এবং অনলাইন জরিপ অনুসারে কমলাকে মার্কিন ভোটারদের ৪৭ শতাংশ ইতিবাচকভাবে দেখেন। অন্যদিকে, ৫১ শতাংশ তাকে প্রতিকূলভাবে দেখেন। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। ৫ নভেম্বর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
ফাইভ থার্টি এইটের জরিপে দেখা যায়, জাতীয়ভাবে কমলা ১.৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। তবে দোদুল্যমান রাজ্যগুলো নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।