পানি দিয়ে ঘর নোংরা করায় দু’বছর বয়সী শিশু দেবরকে গলা টিপে হত্যার পর লাশ বাথরুমের বালতিতে চুবিয়ে রেখে অপমৃত্যুর নাটক সাজায় ভাবি। সেই নাটক সত্যি ভেবে যথারীতি দাফনও সম্পন্ন হয় শিশু আতিকুল ইসলামের। কিন্তু বালতির পানিতে পড়ে সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা মা কিছুতেই যেন মানতে পারছিলেন না।

এ ঘটনার চার মাস পর প্রবাসী স্বামীর সাথে মোবাইল ফোনে কথোপকথনে শিশু আতিকের মৃত্যুর মূল রহস্য বলে ফেঁসে গেলেন ভাবি খাদিজা আক্তার।

স্বামী হানিফও তার স্ত্রীর কথোপকথন রেকর্ড করেন। ওই কল রেকর্ডের সূত্র ধরে শিশু আতিকের হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেন মা হাছিনা আক্তার। মামলা তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য রাশ দাফনের এক বছর পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত শিশু আতিকুল ইসলাম ওই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট আতিক।

মঙ্গলবার (২৭ মে) আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো: দিদারুল ফেরদৌস। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: দিদারুল ফেরদৌস জানান, ২০২৪ সালের ১৮ মে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামে বাথরুমের বালতির পানিতে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে সকলে বালতির পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিশ্চিত করে দাফনও করে। কিন্তু ওই ঘটনার চার মাস পর একটি কল রেকর্ডের সূত্র ধরে শিশুর মা হাছিনা বেগম ওই বছরের ৭ অক্টোবর তার পুত্রবধূ খাদিজা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে কুমিল্লার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য চান্দিনা থানায় পাঠানোর পর পুলিশ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু ওই তদন্তে লাশ ময়নাতদন্ত এবং ভয়েজ রেকর্ড ফরেনসিক না করায় আবারো তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমরা লাশ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর আবারো কবর দেই।

নিহত শিশু আতিকুল ইসলামের মা হাছিনা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানদের মধ্যে হানিফ আমার বড় ছেলে এবং আতিক সবার ছোট। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আমার বড় ছেলে হানিফকে বিয়ে করাই। বিয়ের এক মাস পর আমার ছেলে বিদেশে চলে যায়। ঘটনার দিন আমি পাশের বাড়িতে গেলে আমার ছোট ছেলে আতিক ঘরে পানি ফেলে দেয়ায় তাকে গলা টিপে হত্যা করে। আমি বাড়ি এসে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকি, কিন্তু আমাদের পুত্রবধূ কিছুই বলছিল না। কিছুক্ষণ পর আমি বাথরুমের দরজা খুলে দেখি আমার ছেলে একটি ছোট বালতির ভেতরে মাথা নিচু করে পরে আছে। ওই সময় সকলে বালতির পানিতে ডুবে মৃত্যু বললেও আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। তখন কেউ আমার কথা শুনেনি। আমার ছেলের মৃত্যুর ১৫ দিন পর খাদিজা আক্তার তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে আমার ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে সব স্বীকার করে।’

স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস জানান, যখন শিশুটি মারা যায় তখন তার গলায় দাগ ছিল। সকলে তখন বালতির কিনারার আঘাতের দাগ মনে করে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে একটি কল রেকর্ডে সব কিছু পরিষ্কার হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছে এলাকাবাসীও।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত খাদিজা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews