দুই রকম চিত্র দেখলাম ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন। আগের দিনই লিখেছিলাম, ঢাকায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি টাইগাররা। চট্টগ্রামে ভালো খেলেছিল বাংলাদেশ, ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে কি না, এটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আজ সকালে ইমরুল আউট হওয়ার পর তামিম আর মুমিনুল মিলে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং শুরু করলো, তাতে মনে হচ্ছিল চট্টগ্রাম টেস্টের চেয়েও এখানে ভালো কিছু করে দেখাবে সম্ভবত টিম বাংলাদেশ।

কিন্তু কে ভেবেছিল, এমন ভোজবাজির মত উল্টে যাবে সব কিছু! তামিম-মুমিনুলের অসাধারণ ব্যাটিং। ১৭০ রানের জুটি। এরপর এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়াতে সারা দেশের মানুষই খুব হতাশ। এমনটা কেউ প্রত্যাশা করেনি। এমন হতো যে, কোনোভাবে জুটিটা গড়ে উঠল না, তাহলে একটা কথা ছিল; কিন্তু এত সুন্দর জুটি গড়ে ওঠার পর, এভাবে বালির বাধের মত ভেঙে পড়া কারও চিন্তাতেই ছিল না।

অথচ, বাংলাদেশ কি না শেষ ৪৯ রানে হারালো ৯ উইকেট। আর সবার মত আমিও অবাক হয়েছি। অথচ, দেখুন প্রথম দেড়-দুই সেশন কত সুন্দর খেলেছিল বাংলাদেশ। তামিম-মুমিনুলের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ বুঝি অনেক বড় একটি স্কোর করতে সক্ষম হবে। মনে হচ্ছিল, চট্টগ্রামের চেয়ে ঢাকায় আরও ভালো একটি উইকেট পেলো বাংলাদেশ; কিন্তু সবই শেষ পর্যন্ত বদলে গেলো।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাংলাদেশ এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে? কেন একবার আউট হওয়ার মিছিল শুরু হলে সেটা থামানো যায় না? আমার কাছে এর এর একটা ব্যাখ্যা এমন হতে পারে যে, দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততা। দেখুন, আমরা কতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুরে ছিলাম! আবার টেস্ট খেলেছি কত দিন পর? ১৪ মাস কেউ যদি লংগার ভার্সনের ক্রিকেট না খেলে, তাহলে তার পক্ষে হুট করে এসে ভালো খেলা সম্ভব নাও হতে পারে।

চট্টগ্রামে এবং এরপর ঢাকায় এই হুট করে বালির বাধের মত পুরো ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে এটা। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও তো আমরা লংগার ভার্সনের খেলার সুযোগ পাই কম। এ কারণে ব্যাটসম্যাদের মধ্যে এক ধরনের আড়ষ্ঠতা চলে আসা স্বাভাবিক।

আবার যে সময় উইকেটগুলো পড়েছে, ওই সময় হয়তো সে রকম টার্নই ছিল বলে। ইংলিশরা রিভার্স সুইং দিয়েছে অনেক বেশি। ১৪০ কিলোমিটার গতির বেশি বলগুলোতে রিভার্স সুইং হলে সেগুলো মোকাবেলা করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে যায় আমাদের ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। কারণ, আমাদের ব্যাটসম্যানদের এ ধরনের বল মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে রিভার্স সুইং তো তারা কল্পনাই করতে পারে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশি খেলা হয় না বলে নিজেদের মধ্যে অভ্যস্ততাও তৈরী হচ্ছে না। তবুও বলবো, ৪৯ রানে ৯ উইকেট পড়াটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেছে।

উইকেটে যে স্পিনারদের জন্য কিছু রয়েছে তা আমাদের স্পিনাররাও প্রমাণ করতে পেরেছে। শেষ বিকেলে তাদের ৩টি উইকেট ফেলে দিয়েছে সাকিব-মিরাজরা। বৃষ্টির কারণে আরও ১০ ওভার খেলা হয়নি। যদি হতো, তাহলে হয়তো আমরা আরও চেপে ধরতে পারতাম। তবে, আমার মনে হয়, কাল সকালেও যদি আমরা এভাবে বোলিং করে যাই; একটানা একই জায়গায় বলগুলো ফেলে যেতে পারি এবং রান নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, অথ্যাৎ ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যদি রান তুলতে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হয়, তাহলে এক সময় না এক সময় উইকেট আসবেই।

সকালেই খুব দ্রুত যদি সাকিব-মিরাজরা জো রুট আর মইন আলিকে তুলে নিয়ে তাদের চেপে ধরতে পারে, বোলিংয়ে ধারাবাহিতা ধরে রাখতে পারে তাহলে আমার বিশ্বাস- অন্তত ৫০ থেকে ৬০ রান লিড নেয়া সম্ভব। বোলারদের এই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। স্বপ্নও থাকা জরুরী। তাহলেই আমি মনে করি সম্ভব।

যদিও সমস্যা হলো, ইংল্যান্ড বাংলাদেশের মত না যে, উইকেট পড়া শুরু হলো আর থামলো না। ইংল্যান্ড ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে, তাদের ৫-৬টি উইকেট পড়ে গেলেও ইনিংস ধরে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কারও না কারও। এটাই মূল পার্থক্য তৈরি করে দিচ্ছে। আমাদের স্পিনারদেরই দায়িত্ব নিতে হবে সবচেয়ে বেশি। তাদের ইনিংসে ধ্বস নামাতে হবে। যদি পেসার রাব্বিকে বল করানো হয়, তাহলে তার দায়িত্ব হবে উইকেট না পাক, রান নিয়ন্ত্রন করা। একের পর এক ওভার করে যেতে হবে যেন রান খুব বেশি না দেয়। ৩-৪ করে দিলেও তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, রান যত বেশি দেবে, তত বাংলাদেশ বিপদে পড়ে যাবে।

সবশেষে আলাদা করে বলবো, তামিমের কথা। আমার দৃষ্টিতে এখন বিশ্বের অন্যতম ক্লাস ব্যাটসম্যান হলো তামিম। চট্টগ্রামের ওই কঠিন উইকেটে সে যেভাবে ব্যাটিং করলো, তাতেই মনে হয়েছিল, তামিম দিনে দিনে কতটা উন্নতি করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিটি বল ছিল আউট হওয়ার মত। বলের টার্ন দেখলে মনে হতো, এই বুঝি আউট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে সে ৭৮ রানের ইনিংস খেললো। সত্যিই অসাধারণ।

braverdrink

সে ধারাবাহিকতা ঢাকায় এসে দেখালো। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলো। অতি প্রত্যয়ী ছিল বলে ঢাকায় এসে সেঞ্চুরিটা করে দেখাল। এতেই প্রমাণিত হয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এখন তামিম। তবে, আমার মনে হয় হেলায় আরেকটা ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছে সে। যে সময় সেঞ্চুরি করে তামিম আউট হয়েছে, তখন দিনের খেলা ৪০ ওভার পার হয়েছে মাত্র। দিনের খেলা তখন আরও অনেক বাকি। ওই সময় এভাবে একটি বল ছেড়ে দিতে গিয়ে আউট হলো, তা মানার অযোগ্য। নিশ্চিত বড় একটি ইনিংস থেকে বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ দলও।

তবুও বলবো, মুমিনুলকে নিয়ে সে যে ইনিংসটা গড়েছে তা সত্যিই অসাধারণ। আমার কাছে এর কোন প্রশংসাবাক্য নেই। আশা করি, পরের ইনিংসে আরও ভালো ব্যাটিং করবে সে। কারণ, প্রতিনিয়তই নিজের উন্নতি করছে তামিম।

আইএইচএস/এমএস



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews