চলার পথে ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক জীবনে আমাদের নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ সময় সঠিক সিদ্ধান্তে কেউ কেউ জীবনটাকে সুন্দর করে তোলেন।
কেউবা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েই মারাত্মক খুল করেন। তখন সারা জীবন আক্ষেপ করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। অনেকে আবার যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন। এতে মানসিক চাপ বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে কিছু টিপস মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জীবনে চলার পথে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ কাজ নয়। তারপরও এমন কিছু কাজ আছে যা আপনাকে সিদ্ধান্তহীনতা থেকে বের করে মনস্থির করতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে জেনে নিন যে কোন কাজের আগে মনস্থির করার ১০ টিপস-
বিষয়টি আগাগোড়া জানুন
সিদ্ধান্ত নেয়া তখনই সহজ হয় যখন কোন বিষয় আমরা আগাগোড়া জানতে পারি। কাজেই কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি খুব ভাল করে জেনে নিন। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হবে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন
কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে নিজেকে বার বার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। নিজের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন না
ভয়কে যেমন কখনই অবহেলা করা ঠিক নয়। আবার ভয়ের কারণে বা ভয় পেয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়াও ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
বিকল্প উপায় খুঁজুন
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিকল্প উপায়গুলোও ভেবে রাখুন। এতে পরবর্তীতে কোন সমস্যা হলে বিকল্প পথগুলো আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
সমাধান খুঁজুন
কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বা মনস্থির করার জন্য প্রতিটি মানুষেরই নিজের একটা পদ্ধতি থাকে। কাজেই বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে আপনি নিজের চেনা পথটাই বেছে নিন। তাহলে আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্তে আসা অনেক সহজ হবে।
কঠিন সিদ্ধান্ত দেরিতে নিন
কঠিন সিদ্ধান্ত হুট করেই নেয়া উচিত নয়। বরং কঠিন সিদ্ধান্ত মনে হলে বিষয়টা নিয়ে ভাবা একেবারেই ছেড়ে দিন। তাহলে কিছুদিন পর নিজ থেকেই বুঝতে পারবেন যে আপনাকে কী করতে হবে।
একাধিক অপশন বেছে নিন
প্রত্যেক সিদ্ধান্তেই একাধিক জায়গা থাকে। সম্ভব হলে প্রতিটি অংশই চেষ্টা করে দেখুন। যেটি ভাললাগে সেটিই বেছে নিন।
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখুন
কেবল বর্তমানকে ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন না। এতে বিপদ হতে পারে। বরং ভবিষ্যতের হিসাব করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
সিদ্ধান্ত কখনই সঠিক হয় না
যে কোন সিদ্ধান্ত কখনও সঠিক হয় না। এই সত্যটা মেনে নিলে দেখবেন মনের ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়াও আপনার জন্য সহজ হচ্ছে।
অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন
একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন কিংবা যার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। দেখবেন সমাধানের পথ ঠিকই বেরিয়ে আসবে। কেননা একই পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের অভিজ্ঞতা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচ সহায়তা করবে।
যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জানতে হবে সেটি সম্পর্কে। নিজের অজ্ঞতা থাকলে অন্য কেউ যে জ্ঞান রাখে এই বিষয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবে নিজেই কিন্তু পরামর্শ করে নিতে হবে, তাতে সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সুযোগ কম থাকে। চিন্তা করতে হবে ভবিষ্যতের- যে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে কিংবা কী কী সুবিধা হতে পারে তা মাথায় রাখতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সুবিধা হবে।
মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতা সাময়িক, সফলতাও দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। তাই খারাপ কিংবা ভাল সময়ে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে অনুতাপ করার চেয়ে এখন একটু সময় নিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সম্ভাব্য ফলাফলের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম। এতে সিদ্ধান্ত যেমন সঠিক হবে, তেমনি দৃঢ় হবে সামনে এগোনোর মানসিকতা।
ব্যায়ামে বাড়ে মস্তিষ্কের ক্ষমতা
ভোরের নির্মল বাতাসে শরীরচর্চা করলে শরীরের সঙ্গে মনও যে সতেজ হয় সেটি অনেক আগে থেকেই মানুষের জানা। ব্যায়ামের বহুবিদ উপকারিতার দিক নানা সময়ে গবেষণায় উঠে আসছে। শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি মানসিক ব্যায়ামও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর শারীরিক-মানসিক ব্যায়ামের কারণে বাড়ে মস্তিষ্কের ক্ষমতা। মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ার ফলে শিশুদের শেখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, বাবা-মায়ের ব্যায়ামের কারণে লাভবান হতে পারে বংশধররাও। জার্মানভিত্তিক ওই গবেষণা দলটি মূলত ইঁদুরের ওপর করা এক গবেষণায় এই ফলাফল পেয়েছেন। তবে এখনই এই ফলাফলকে চূড়ান্ত মনে করছেন না তারা। তাদের মতে, এর জন্য আরও বেশি গবেষণার দরকার। বিশেষ করে ইঁদুরের ওপর গবেষণায় যে ফলাফল এসেছে তা মানুষের ক্ষেত্রেও আসবে কিনা তা এখনই বলতে চাইছেন না তারা।
বংশধরদের ওপর ব্যায়ামের প্রভাব আসলেই কতটা কার্যকর হবে সেই বিষয়টি এখনও প্রমাণ করতে না পারলেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়াম তরুণদের মস্তিষ্ক সতেজ করার মাধ্যমে শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তরুণদের পাশাপাশি মাঝ বয়সীদের জন্যও ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মাঝ বয়সে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য তারা শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি মানসিক ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক সাইমন ফিশেল বলেন, মানুষের বেলায় এই ফলাফল কী রকম হবে তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। ফলাফল যদি ইতিবাচক হয় তাহলে সন্তান ধারণের আগে বাবা-মায়ের শারীরিক-মানসিক ব্যায়ামের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। এছাড়া আরও কিছু উপায় রয়েছে। যা নিয়মিতভাবে মেনে চললে বাড়তে থাকবে আপনার স্মরণশক্তি।
পরিমিত ঘুম
প্রতিদিনের ঘুম মস্তিষ্ক সুরক্ষা রাখার জন্য খুবই কার্যকরী। কারণ ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভাল ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করতে থাকে। আর ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মেমোরি পরবর্তী স্মৃতিধারার জন্য প্রস্তুত হয়।
মস্তিষ্কের ব্যায়াম
আপনার মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে। যেমন ধরুন, সবজি কাটার ছুরিটি দিয়ে যত বেশি কাটাকাটি করবেন ছুরিটি তত বেশি ধার হবে। মানুষের মস্তিষ্ক একটি বিস্ময়কর ক্ষমতা, এই ক্ষমতা স্নায়ু নমনিয়তা হিসেবে পরিচিত হয়। অধিকার উদ্দীপনার সঙ্গে আপনার মস্তিষ্ক নতুন স্নায়বিক পথ গঠন করে ও উপস্থিত সংযোগ পরিবর্তন করে। এবং নতুন কোন শেখার বিষয় স্মৃতি আসে যখন নিজেই পুনর্নির্মাণ মস্তিষ্কের অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী হবেন। আপনি আপনার জ্ঞানীয় ক্ষমতার বৃদ্ধিতে নতুন তথ্য জানতে পারেন, যা স্নায়ু নমনিয়তা শক্তি বৃদ্ধি করবে।
পাজল বা ওয়ার্ড
গবেষণায় দেখা যায় যাদের নিয়মিত পাজল সমাধান, স্ক্রাবল, সুডোকো মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। যখন খেলা হয় তখন মস্তিষ্কের স্মৃতি এলাকাগুলোসহ পুরো মস্তিষ্কের সমস্ত স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয় যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এছাড়াও তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাজনিত সমস্যাও হয় না।
মিউজিক থেরাপি
গবেষণায় দেখে গেছে, ক্ল্যাসিক মিউজিক বা যে কোন নরম মেজাজের গান মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা বাড়ায়।
বই পড়া
বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের সবচেয়ে ভাল ব্যায়াম। বই পড়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন যাই হোক না কেন অবসর সময়ে তা পড়ে নিলে মস্তিষ্কের বেশ ভাল ব্যায়াম হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়।
নতুন ভাষা শেখা ও লেখা
নতুন একটি ভাষা শেখা এবং লেখার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই কমে যায় স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন একটি ভাষা শেখা, বোঝা এবং প্রয়োগ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল হতে বাধা দেয়। -বিবিসি