মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় এবার শ্রমিক নেবে সেটি নির্ধারণ করার জন্য ঢাকায় দুই দেশের দু’দিনের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ সভাটি গতকাল শেষ হয়েছে। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং বিষয়ে গতকাল দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফিং করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সেই প্রেস কনফারেন্সটি বাতিল হওয়ার কথা জানানো হয় গণমাধ্যম কর্মীদের।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। অপর দিকে মালয়েশিয়ার পক্ষে নেতৃত্বে দেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিন বিন উমর। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান ছাড়াও দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এক বছর ধরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে আছে। কূটনৈতিক তৎপরতায় শ্রমবাজারটি খোলার লক্ষ্য নিয়ে গত ১৫ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া সফর করে ১৬ মে দেশে ফিরে আসেন।
এদিকে ঢাকায় ২১ মে পূর্বনির্ধারিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নিতে আগের রাতে মালয়েশিয়া থেকে সাত সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসেন। পরদিন সকালে শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে যৌথ সভা। প্রথম দিনের বৈঠক শেষে শ্রমবাজার নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়ার কথা জানানো হয়। গতকাল বৈঠকের শেষ দিনে আলোচনার পর কী কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা জানাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আগেই একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বোর্ডরুম লবিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন। এমন আমন্ত্রণ পেয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানস্থলে যান। কিন্তু বেলা পৌনে ২টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে শুধু বলা হয়, অনিবার্য কারণে প্রেস ব্রিফিং হবে না।
গতকাল রাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ মুখ খুলেননি। রাত সোয়া ৭টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে গত রাতে মালয়েশিয়া থেকে এক ব্যক্তি নয়া দিগন্তকে বলেন, এর আগের বার যখন সিন্ডিকেট গঠন করে কর্মী পাঠানো হয়েছিল ওই সময়ও ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার পর গণমাধ্যমের সাথে আগত প্রতিনিধিদল কথা না বলে দেশে ফিরে যান। পরে সেখানে গিয়ে তারা তাদের গণমাধ্যমের কাছে পুরো বিষয়টি খুলে বলেছিলেন। এবারও তেমনটি হতে পারে বলে ধারণা করছেন। আবার এমনও হতে পারে বৈঠকে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী যাবে না-কি এবার সবাই শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসা করতে পারবেন তা নিয়ে হতে পারে কোনো জটিলতা তৈরির আশঙ্কায় গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ সদস্যরা বলছেন, দুই সরকারের মধ্যে থাকা এমওইউ চুক্তিটি পরিবর্তন করে হলেও সবার জন্য যেন এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি উন্মুক্তের ব্যবস্থা করা হয় সেই দাবি করছেন তারা।
যদিও মালয়েশিয়া সরকার শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা বাংলাদেশ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমেই শ্রমিক নেবে। এখন বাংলাদেশ সরকার কি তাদের সেই কথায় রাজি হয়েছে কি-না তা জানতে সবাইকে আরো কিছু সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে যেভাবেই হউক শ্রমবাজারটি খোলার কোনো বিকল্প নেই বলে অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা গত রাতে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকার যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই কর্মী নিতে চায় সেক্ষেত্রে এজেন্সির নাম বাছাই করার প্রক্রিয়া অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের হাতে থাকতে হবে। তাহলে অনিয়ম দুর্নীতিরোধে সরকারের কন্ট্রোল থাকবে। না হলে শ্রমবাজার ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকা আবারো দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে এ পেশার সাথে জড়িতরা মনে করছেন।