নীলফামারী: পুকুর নয় মাছ চাষ হচ্ছে ট্যাংকে। তাও আবার বাড়ির আঙিনায়।



দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন চন্ডিপুর, হাবড়া, মোমিনপুর, পলাশবাড়ী ও একটি পৌরসভাসহ ১৫ গ্রামের ৯৬টি ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষের ফলে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করছে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে) এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা মিলল পার্বতীপুর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের মশ্চিম ম্যাড়েয়া গ্রামে। জিয়াউর রহমান জিয়া ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ বাড়ির উঠোনেই চাষ করছেন। তার এসব ট্যাংকে কই, তেলাপিয়া, শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ মাছ চাষ করে শুধু তার পরিবারের সচ্ছলতা নয়, পরিবারের সদস্য এবং এলাকার অনেক মানুষের মিটছে আমিষের চাহিদা। মাছগুলো ধরাও অনেক সহজ, একদম হাতের নাগালে। স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদা মাফিক মাছ তুলে দেওয়া হয়। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে।

শুধু জিয়াউর নয়, একই পদ্ধতিতে মোমনিপুর ইউনিয়নের হয়বৎপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কালাইঘাটি গ্রামের সোহাগ আলী অনেকেই করছেন ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রচুর পরিমাণ লাভ দেখতে পাচ্ছেন।

পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের হয়বৎপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা খাদিজা বেগম নিজ জমিতে পানির ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করেছেন। পেশায় তিনি একজন গৃহিণী হলেও অন্যান্য নারীদের স্বাবলম্বী করতে মাছ চাষে প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। ট্যাংকে মাছ চাষের সফলতা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিন বছর আগে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় গড়ে তুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘খাদিজা ফিস ফার্ম’। নারী উদ্যোক্তা তার এ ফার্ম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ছুটে আসেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ২টি ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ২০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ প্রতিটা ট্যাংকে প্রায় ৫ হাজার পিস মাছ উৎপাদন করছেন। তার এসব ট্যাংকে কই, শিং, তেলাপিয়া ও মাগুর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

এ পদ্ধতিতে বছরে দুই থেকে তিন বার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। যার ফলে অল্পসময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। খাদিজা বেগম আরও বলেন, গ্রামে কারও বাড়িতে মেহমান বেড়াতে এলে আমাদের থেকে মাছ নিতে আসেন প্রতিবেশীরা। ৩-৪ মাস পর প্রতিটি ট্যাংক থেকে ৪শ’ থেকে ৫শ’  গ্রাম ওজনে মাছ উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি মাছ বিক্রি ২০০-৩০০ টাকা। আর কেজিতে ১০ থেকে ১২টি শিং মাছ বিক্রি হয়। চিরিরবন্দর থেকে দেখতে আসা আরেক নারী উদ্যোক্তা পলি বেগম (৩০) বলেন, খাদিজা আপার পানির ট্যাংকে মাছ চাষ দেখার জন্য আমি শিমুলতলী থেকে দেখতে এসেছি। এতদিন জানতাম পুকুরে মাছ তো এখন দেখি ট্যাংকে। আমি আগামীতে ট্যাংকে মাছ করবো।

পার্বতীপুর পৌরসভার সাগর হল এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা রাজু আহমেদ ভাড়া নেওয়া জমিতে ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। পেশায় তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। চার বছর আগে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় গড়ে তুলেছেন পার্বতীপুর এগ্রো ফার্ম ফিসারিজ। তার তিনটা ১০ হাজার লিটার পানি ও ৩০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ ট্যাংক রয়েছে। প্রতিটা ট্যাংকে প্রায় ৫-৭ হাজার পিস মাছ উৎপাদন করছেন। তার এসব ট্যাংকে ভিয়েতনাম কই, শিং, তেলাপিয়া ও মাগুর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ম্যানেজার (কার্যক্রম) এ এম ফরহাদুজ্জামান বলেন, খরাপ্রবণ এলাকা। মৌসুমে যেখানে পুকুরে পানি থাকে না। বিষেশায়িত পদ্ধতিতে পানি পুনরায় বিভিন্ন ফিল্টার ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরুপে পরিশোধিত হয়ে মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, অল্প ঘনত্বে অধিক মাছ উৎপাদন করা। যার ফলে পানি অপচয়ের সুযোগ নেই। এছাড়া মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য অবশ্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের সুব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক।

এ ব্যাপারে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের (জিবিকে)’র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহেদুল হক জানান, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে যেখানে খাদ্য খরচ প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। মাছের উৎপাদন হার পুকুর বা জলাশয়ের চেয়ে অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে চাষের ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের গুণগত মান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং মাছের মৃত্যুহার নেই বললেই চলে।

পার্বতীপুর সিনিয়র উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সায়েম জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা এখন ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ হচ্ছে। অনেকের পুকুর নেই, পুকুরে পানিও থাকেও না। অল্পতে পানি ট্যাংকে মাছ করা যায়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পার্বতীপুরে ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জেএইচ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews