জিলহজ মাসের মর্যাদা ও প্রথম ১০ দিনের আমল

ফাইল ছবি

জিলহজ মাসের মর্যাদা ও প্রথম ১০ দিনের আমল

মুহাম্মদ মোরশেদ আলম

২৪ মে, ২০২৫ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

হিজরি বর্ষপঞ্জির সবশেষ মাস হলো জিলহজ যা আমাদের কাছে পবিত্র হজ ও কুরবানির মাস হিসেবে পরিচিত। এ পবিত্র মাসের ১০ তারিখে কুরবানির ঈদ পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর ইসলামের তৃতীয় রুকন হজব্রত পালন ও পশু কুরবানি করে থাকে। ইসলাম ধর্মে জিলহজ মাসের রয়েছে গভীর তাৎপর্য ও সীমাহীন ফজিলত। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন তারমধ্যে এটি একটি।

আল্লাহ তা’আলা সুরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’ এই ৪ মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

হজের তিনটি মাস শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। এর মধ্যে প্রধান মাস হলো জিলহজ মাস। এই মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ—এই ছয় দিনেই প্রধান আমল হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হজ সম্পাদন সুবিদিত মাসসমূহে। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রীসম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ বিধেয় নহে। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করবে, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, তোমরা আমাকে ভয় করো’(সুরা-বাকারা, আয়াত : ১৯৭)। হাদিসে এসেছে ‘১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক : জিলকদ, জিলহজ, মহররম আর চতুর্থটি হলো রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।’ (সহিহ বুখারি, ৪৬৬২; সহিহ মুসলিম, ৪৪০৬)। জিলহজের প্রথম দশদিন মহান আল্লাহর কাছে খুব বেশি প্রিয়। কেননা, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় তিনি কসম করে বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ ১০ রাতের।’ (সুরা ফাজর : ১-২) তাফসিরবিদগণ বলেন, এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে জিলহজের প্রথম দশককেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৩৫)।

আর স্বয়ং আল্লাহ পাক যখন কোনো সময়ের কসম খান, সেটার গুরুত্ব যে কতখানি, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। এমাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (স.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না’ (আবু দাউদ: ২৪৩৮; বুখারি: ৯৬৯)। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহান আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই।’ (সহিহ ইবনে হিববান: ২৮৪২)।

গুরুত্বপূর্ণ আমল :-

চুল ও নখ না কাটা : জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি দেওয়া পর্যন্ত হাত ও পায়ের নখ, মাথার চুল কাটা বা মুণ্ডানো, মোচ ছোট করা বা কাটা, নাভি ও বগলের নিচের অযাচিত পশম না কাটা উত্তম। জিলহজ মাস শুরুর আগেই এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ দেখলে এবং তোমাদের কেউ কুরবানির ইচ্ছা করলে সে যেন নিজের চুল ও নখের কোনো কিছু না কাটে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭)।

কুরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই এমন ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ আমল করে তিনিও কুরবানি দেওয়ার পূর্ণ সওয়াব পাবেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ এই উম্মতের জন্য কুরবানির দিনকে ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি দুগ্ধবতী ছাগল ছাড়া অন্য কোনো পশু না পাই তাহলে কি কুরবানি করব? তিনি বললেন, না। বরং তুমি (ঈদের দিন কুরবানির পর) তোমার চুল ও নখ কাটবে। গোঁফ ছোট করবে। নাভির নিচের লোম কাটবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার পরিপূর্ণ কুরবানি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৯)।

রোজা রাখা : জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। বিশেষ করে আরাফার দিন, অর্থাৎ ৯ জিলহজ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত আমল। তবে যাঁরা হজ পালন করছেন, তাঁদের জন্য এই দিনে রোজা না রাখা উচিত। কারণ, মহানবী (সা.) আরাফাতের দিনে আরাফাতের ময়দানে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৪২)। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা তার (রোজাদারের) বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৭)। যেহেতু অন্যান্য নেক আমলরে মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নসহকারে সিয়াম পালন করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়, প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৮)। হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল : আশুরার সওম, জিলহজের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ও ফযরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।

ঈদের দিন রোজা না রাখা : ১০ জিলহজ (ঈদুল আজহার দিন)-সহ আইয়ামে তাশরিকের (১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ) দিনগুলোতে কোনো ধরনের রোজা না রাখা। হাদিসে এসেছে, আইয়্যামে তাশরিক পানাহার ও আল্লাহর জিকিরের দিন। (সহিহুল জামে : ২৬৮৯)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা এ দিনগুলোতে রোজা রেখ না। কেননা, এগুলো পানাহারের দিন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১০৬৬৪)। ৯ জিলহজ অর্থাৎ ঈদের রাত জাগরণ ও ইবাদত করার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উভয় ঈদের রাত সওয়াবের আশায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে কাটাবে, তার অন্তর সেদিন মৃত্যুবরণ করবে না, যেদিন মানুষের অন্তর মৃত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।)।

জিকির করা : জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বেশি পরিমাণ জিকিরের কথা হাদিসে এসেছে। বিশেষত তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে কোনো দিবস ও তাতে আমল করা জিলহজ মাসের ১০ দিনের চেয়ে অধিক প্রিয় মর্যাদাপূর্ণ নয়। অতএব তোমরা তাতে বেশি পরিমাণ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও আলহামদুলিল্লাহ পড়ো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৫৪৪৬)।

তাকবিরে তাশরিক পাঠ : জিলহজ মাসের প্রথম দিন থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত তাকবির পাঠ করা একটি সাধারণ আমল। তবে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে তাকবির পড়া একটা বিশেষ আমল। এটাকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৩)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিন’ বলতে (জিলহজ মাসের) প্রথম ১০ দিন উদ্দেশ্য করা হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) ও আবু হুরাইরা (রা.) এই ১০ দিন তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। মুহাম্মাদ বিন আলী (রহ.) নফল নামাজের পরও তাকবির বলতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)। তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’অর্থ : আল্লাহ বড় আল্লাহ বড়, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ বড় আল্লাহ বড়। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। (দারু কুতনি, হাদিস : ১৭৫৬)।

হজ ও উমরাহ পালন : পবিত্র হজ ও উমরাহ পালন জিলহজ মাসের অন্যতম আমল। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য হজ করে এবং তাতে অশালীনতা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকে, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে। (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ ও উমরাহ পালন করো, অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে করো। তা এমনভাবে মুমিনের দরিদ্রতা ও পাপ মোচন করে, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)। ৮ জিলহজ সকাল থেকেই আকাশ বাতাস মুখরিত করে তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাজিরা মিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। হজরত সহল ইবনে সাআদ (রা) বর্ণনা করেন মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘একজন হজযাত্রী যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার আশপাশের পাথর-নুড়ি, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা সবকিছুই সে তালবিয়া পাঠে শরিক হয়’(তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।

এর পরের দিন অর্থাৎ জিলহজের নবম তারিখটি আরাফার দিন। সেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে বড় রুকন। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের মতো অন্য কোনো দিন আল্লাহ অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। সেদিন তিনি দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, দেখ ‘আমার বান্দারা এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধূসরিত শরীরে আমার দরবারে আগমন করেছে। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম। অন্য হাদিসে এসেছে, শয়তান আরাফার দিন সবচেয়ে বেশি ধিক্কৃত, অপদস্থ ও ক্রোধান্বিত হয়। কেননা সে তখন আল্লাহর অধিক রহমত এবং বান্দার পাপ মোচন দেখতে পায়’(মেশকাত)।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে এই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। ( সূরা ইমরান, আয়াত ৯৭)। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করল না তার ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করা আর খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করা সমান কথা। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৪ (সুরা ইমরানের ৯৭ নং আয়াতের অধীনে)।

কুরবানি করা : জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কুরবানি করা। এমাসের দশম দিন থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত কুরবানি করা যাবে। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। পুরুষ ও নারী সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য (ইবনে মাজাহ : ২২৬)। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো এবং কুরবানি করো।’(সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যেন তারা কল্যাণকর স্থানগুলো পরিদর্শন করে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তিনি রিজিক হিসেবে তাদের যে চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন তাতে যেন আল্লাহর নাম স্মরণ করে, অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ ও অভাবগ্রস্তদের আহার করাও।’(সুরা : হজ, আয়াত : ২৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯০)।

হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এ কুরবানি কী?’উত্তরে তিনি বললেন, ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)–এর সুন্নত।’ তাঁরা পুনরায় বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।’ তাঁরা আবারও প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! ভেড়ার লোমের কী হুকুম? (এটা তো গণনা করা সম্ভব নয়)’, তিনি বললেন, ‘ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি সওয়াব রয়েছে’ (ইবনে মাজাহ: ২২৬)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে’(ইবনে মাজাহ: ২২৬)।

তওবা করা : নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে এমাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা। বান্দা যখন নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে সত্যিকার তওবা করে তখন আল্লাহ শুধু তার গুনাহই ক্ষমা করেন না; বরং গুনাহকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন।’(সুরা ফুরকান: ৭০)।

দান-সদকা করা : দান-সদকা এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। কিন্তু বিশেষ দিনে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই জিলহজ মাসে দান-সদকা করা বিশেষ সওয়াবের কাজ ও ফজিলতপূর্ণ আমল। অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ব্যয় করো, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব।’(বুখারি: ৫৩৫২)।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলো মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার আরেকটি কারণ এ দিনগুলোয় নামাজ, রোজা, সদকা, হজ ও কুরবানির মত গুরুত্বপূর্ণ এবাদতগুলো একত্রিত হয় যার অন্য আরেকটি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং মুসলমানদের উচিত মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ এমাসে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সকল গুণাহ থেকে বিরত থেকে বেশি বেশি নফল ইবাদত যেমন, রোজা রাখা, তাহাহাজ্জুদের নামাজসহ নফল নামাজ আদায, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার, দান-সদকা প্রদান ও তওবা করা। মহান রব্বুল আলামিন মর্যাদা আমাদের সবাইকে এসব আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক

পূর্বকোণ/ইবনুর



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews