পাঁচটা বাজতেই বনে সন্ধ্যা নেমে এল। মেঘলা আকাশ সন্ধ্যার আগমনকে আরও ত্বরান্বিত করল। যে চারটি শিম্পাঞ্জির পিছু পিছু দিনভর ঘুরেছি, তারা এখন পাশাপাশি দুটি গাছে অবস্থান নিয়েছে। তিনটি একটি গাছের মোটা ডালে বসে পড়েছে। দুপাশ থেকে যা পেল, তা–ই টেনে নিয়ে আয়েশ করে শুয়ে পড়ল। এর পরও যখন কারও কারও আরাম হচ্ছিল না, আরও কিছু ডালাপালা ভেঙে গায়ের নিচে দিয়ে দিল। ব্যস, মিনিট পাঁচেকেই হয়ে গেল রাত্রিবাসের জম্পেশ বিছানা।
ঘুমানোর জন্য প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে বাসা বানায় শিম্পাঞ্জি। আবহাওয়ার কারণে সেদিন ওদের দিনের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছুটা আগেভাগেই বিশ্রামে চলে গেল। উঁচু গাছের ডালে বিছানা করার কারণে ওদের আর খুব একটা দেখা গেল না। আমার সঙ্গে দুজন সহযোগী আর একজন ট্রেকার। তাদের সহযোগিতায় দ্রুত যন্ত্রপাতি বের করি। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে জায়গাটার তাপমাত্রাসহ বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বোঝার চেষ্টা করা হবে দিনমান ঘুরে রাতে কেমন পরিবেশে শিম্পাঞ্জিরা ঘুমায়। সতর্কতার সঙ্গে যন্ত্রগুলো লাগিয়ে ক্যাম্পে ফেরার পথ ধরি।
এই ফেরা মানে কিন্তু উঠান থেকে চট করে ঘরে ঢুকে পড়া না। নিউংওয়ে জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ। পানি ঝরে ঝরে পিচ্ছিল হয়ে আছে। ধীরে ধীরে দেখেশুনে হাঁটতে থাকি। ২৩ এপ্রিল। এ দফায় বনবাসের তৃতীয় দিন। জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই দুই সপ্তাহ করে বনে থাকি। বনের মধ্যে শিম্পাঞ্জিরা কীভাবে কী করে, কী খায়, কোথায় কতক্ষণ থাকে—এসবই খেয়াল রাখি। আজও সেসবই করলাম। ক্যাম্পে ফিরতে ফিরতে আটটা বেজে গেল।