আজ বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস। বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংস্থা রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের জনক জিন হেনরি ডুনান্টের জন্ম দিবসকেই সারা বিশ্বে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। এ সংস্থাকে জানতে হলে জানতে হবে হেনরি ডুনান্ট ও রেড ক্রস প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার কথা। কারণ ডুনান্ট শুধুই একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক বিচিত্র জীবনের প্রতিচ্ছবি।

সুইজারল্যান্ডের একটি পর্বতঘেরা ছোট্ট শহর জেনেভা, বর্তমানে যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু। ১৮২৮ সালের ৮ মে এ শহরের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জিন জ্যাকস দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান জিন হেনরি ডুনান্ট। ব্যবসায়ী হলেও একজন সমাজসেবকের ঘরে জন্ম নেওয়া ডুনান্টও যেন তার বাবা-মার জীবনধারার একজন অনুসারী হতে থাকে শিশুকাল থেকেই।

মাত্র ৬ বছর বয়সে ডুনান্ট তার পরিবারের সঙ্গে ফ্রান্সের Rhone Valley Marseillers পর্যন্ত এক ভ্রমণে বের হয়। এ ভ্রমণের একপর্যায়ে ডুনান্ট তার বাবার সঙ্গে TOULON কারাগার পরিদর্শন করে। কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর শিকলবাঁধা কয়েদিদের মানবেতর অবস্থান এবং তাদের দিয়ে পাথর ভাঙানোর মতো কঠিন পরিশ্রমের দৃশ্য তার শিশুমনকে প্রচণ্ডভাবে পীড়া দেয়। এক সময় এ শিশুটি অবচেতন মনে বলে ওঠে ‘When I would be adult I shall write a book to save them,’- ‘যখন আমি বড় হব, আমি একটা বই লিখব এদের সুরক্ষার জন্য।’

১৮৪২ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বালক ডুনান্ট তার স্কুলজীবন শেষ করে। এখন সে ভাবতে থাকে কীভাবে লেখাপড়ার পাশাপাশি অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা যায়। ১৮৪৭ সালে League of Alms নামক একটি সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করেন ১৮ বছরের যুবক ডুনান্ট। এ সংস্থার ভূমিকা ছিল জেনেভার দরিদ্র ও অসুস্থদের তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক সহযোগিতা প্রদান। যুবক ডুনান্টও তাই সক্রিয় হয়ে ওঠেন দরিদ্র আর অসুস্থদের সেবায়।

এদিকে তিনি সেই যে অনেক আগে TOULON কারাগার ভ্রমণকালে কয়েদিদের অমানবিক জীবন প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সে কথা স্মরণ রেখেই প্রতি রোববার বিকালে শহরের জেলখানা পরিদর্শন করতে থাকেন। শক্ত পাথরের দেয়াল আর লোহার গ্রিলের অভ্যন্তরে থাকা মানুষদের তিনি কারাগারের বাইরের এবং বিশ্ব মানুষের কাছে তুলে ধরতে প্রয়াসী হন এই বলে যে, তাদের অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার অনুভূতির প্রতি সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসে।

১৮৫৯ সালের ২৪ জুন ইতালির অখ্যাত এক গ্রাম সলফেরিনো ও তার আশপাশে ১৫ ঘণ্টা ধরে চলে এক মর্মস্পর্শী যুদ্ধ। অখ্যাত সলফেরিনো হয়ে ওঠে বিখ্যাত। দুপক্ষের অংশগ্রহণকারী প্রায় ৩ লাখ সৈন্যের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো সৈন্য হতাহত হয়। আহত সৈন্যরা কোনো সেবা না পেয়ে সারা রাত ছটফট করে কাটিয়েছে সলফেরিনো গ্রামের পথে-প্রান্তরে। ফলে অনেক আহত সৈন্য যারা একটু পানি ও শুশ্রূষা পেলে বেঁচে উঠতে পারত তারাও মৃত্যুবরণ করে অবহেলার শিকার হয়ে।

ঠিক সে মুহূর্তেই হেনরি ডুনান্ট পৌঁছেন সেখানে। যুদ্ধের ভয়াবহতা আর আহতদের আর্তনাদ তার মনকে আহত করে। তিনি নিজেকে সামলিয়ে গ্রামবাসীকে অনুপ্রাণিত করে আহতদের প্রথমেই আশপাশের গ্রাম, চার্চ ও বাড়িঘরে এনে জড়ো করতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী ক্যাসটিপ্যালিয়ন ও দূরে ব্রেসিয়া শহরের হাসপাতালে অনেককে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে থাকেন।

পাশাপাশি ভাবতে থাকেন আহতরা প্রচণ্ডভাবে ক্ষুধার্ত, তাই চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের জন্য পানি ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা জরুরি। গ্রামের একটি চার্চকে তিনি তার দপ্তর হিসাবে ব্যবহার করতে থাকেন। এখানেও অনেক সৈন্যের শুশ্রূষা করা হয়। এভাবে ২৭ জুন পর্যন্ত বিরামহীন সেবায় ব্যস্ত থাকেন তিনি ও তার অনুসারী এলাকাবাসী এবং তারা প্রায় ১৫ হাজার গুরুতর আহত সৈন্যকে সুস্থ করে তোলেন।

সলফেরিনো (ইতালি) থেকে ফিরে ডুনান্ট নিরন্তর ভাবতে থাকেন সলফেরিনোর স্মৃতি। তিনি ভাবেন এ স্মৃতিকে বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রকাশ করতে হবে। ১৮৬২ সালের নভেম্বর তিনি প্রকাশ করলেন ‘সলফেরিনোর স্মৃতিকথা’ নামের বই। সলফেরিনোর যুদ্ধোত্তর ঘটনা বর্ণনা করে তিনি তার বইয়ে বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলেন- ‘Would it not be possible, in a time of peace and quiet to form relief societies of yealous, devoted and thoroughly qualified volunteers to bring aid to the wounded in time of war?’ এই বই আর এই আহ্বান এত সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় যে, মাত্র এক মাসেই বইটির প্রথম সংস্করণের সব কপিই বিক্রি হয়ে যায়।

ফলে ডিসেম্বরে ২য় সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, ফ্রেন্স ঔপন্যাসিক ভিকটর হুগো, সুয়েজখালের নির্মাতা ফার্ডিনাভ ডি লেসেপস- এমন সব খ্যাতনামা ব্যক্তি ডুনান্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র পাঠান। Welfare Society of geneva-এর প্রেসিডেন্ট গুস্তাভ মাইনিউর ১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে ডুনান্টের সঙ্গে দেখা করেন এবং একটি সেবা সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্যে ১৮৬৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি The Committee of Five নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। হেনরি ডুনান্টকে করা হলো কমিটির সেক্রেটারি।

এ কমিটি বিভিন্ন সভায় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক, নার্স ছাড়াও যানবাহন, হসপিটালের নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রয়োজন। কমিটি হেনরি ডুনান্টের প্রস্তাব ও কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য সে বছরের অক্টোবরে জেনেভায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। এ সম্মেলনের জন্য সমর্থন চাইতে ডুনান্ট ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সফর করেন।

সমর্থন আদায়ের জন্য তিনি কতিপয় সুপারিশসংবলিত ইশতেহার প্রকাশ করেন, যার মূল বার্তা হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক স্থায়ী সেবা সংস্থার প্রয়োজনীয়তা। ও প্রতিটি দেশে সে সংস্থার একটি জাতীয় সমিতি গঠিত হবে, প্রতিটি দেশের সরকার যুদ্ধস্থলে ওষুধসহ অন্যান্য দরকারি জিনিস সরবরাহের অনুমতি প্রদান করবে, আর্মি মেডিকেল কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের যুদ্ধস্থলে নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসাবে প্রবেশাধিকার দেবে, আর্মি মেডিকেল কর্মীরা ইউনিফর্ম না পরে একটি সর্বজনগ্রাহ্য প্রতীক পরিধান করবে এবং তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না।

২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর ১৯৬৩, বহু প্রত্যাশিত সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলো জেনেভায়। ১৬টি দেশ থেকে ৩১ জনপ্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন সেই সভায়। সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক স্থায়ী সেবা সংস্থা গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের পর অনুমোদিত হয় যে- অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, ডাক্তার, স্বেচ্ছাসেবক আহতদের নিরপেক্ষভাবে সেবা করবে। কিন্তু প্রশ্ন আসে যুদ্ধকালে আহতদের সেবা করতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে হেনরি ডুনান্ট প্রস্তাব রাখেন, একটি অভিন্ন প্রতীক বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবক, অ্যাম্বুলেন্স, হসপিটাল, আর্মি ব্যবহার করতে পারে। প্রস্তাবটি সবার কাছে গৃহীত হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, একটি সাদা কাপড়ের ওপর লাল ক্রসচিহ্ন প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হবে। অনুমান করা হয়, এ ধরনের সংস্থা গঠন ও প্রতীকের উদ্ভাবনী চিন্তার জনক হেনরি ডুনান্ট এবং তার দেশের প্রতি সম্মান জানাতেই তার দেশের জাতীয় পতাকার (লাল জমিনের ওপর সাদা ক্রসচিহ্ন) বিপরীত চিহ্ন হিসাবে রেড ক্রস চিহ্নটি নির্বাচন করা হয়। অবশেষে Committee of Five রূপান্তরিত হলো নতুন নামে- Permanent International Committee for Relief to the Wounded।

কমিটি বিভিন্ন দেশে জাতীয় সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রথমে জাতীয় সোসাইটি গঠিত হয়। ১৮৭৬ সালে এ কমিটির নাম পরিবর্তন করে International Committee of the Red Cross বা ICRC নাম গ্রহণ করা হয়। ১৮৭৬ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধকালে রেড ক্রস প্রতীকধারী স্বেচ্ছাসেবকদের যুদ্ধাহতদের সেবা করতে দেখে তুরস্কের মুসলমানরা রেড ক্রস প্রতীককে খ্রিস্টধর্মের প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করে তারা তাদের দেশের জাতীয় সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট নাম গ্রহণ করে। রেড ক্রিসেন্ট তুরস্কের জাতীয় পতাকার বিপরীত প্রতীক।

এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশ নিজ নিজ দেশের জাতীয় সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট নাম গ্রহণ করে। বাংলাদেশেও ১৯৮৮ সালে রেড ক্রস নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট নাম গ্রহণ করা হয়। তবে উদ্দেশ্য ও আদর্শের দিক দিয়ে রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্টের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, শুধু একই সংস্থার দুটি প্রতীক মাত্র।

১৯০১ সালে স্যার ফ্রেডারিক পেসোর সঙ্গে ডুনান্ট শান্তির জন্য প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। ডুনান্ট উইল করে যান, ব্যাংকে তার ঋণ পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা দুস্থদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। ১৯১০ সালের ৩০ অক্টোবর হেনরি ডুনান্ট দীর্ঘ ১৮ বছর হিডেল হসপিটালে কাটিয়ে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

এক সময়ের ছোট্ট শিশু হেনরি ডুনান্ট সলফেরিনোর যুদ্ধোত্তর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও যুদ্ধাহতদের সেবার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারই ফসল আজকের রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট, যা সারা বিশ্বে যেখানেই দুর্যোগ আর মানুষের অসহায়ত্ব বিরাজমান সেখানেই মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যায়। আজ আর শুধু যুদ্ধকালেই এ সংস্থার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নেই, এখন রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্টের সেবার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত।

বাংলাদেশেও জাতীয় সোসাইটি হিসাবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও দেশব্যাপী বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রম বাস্তবায়ন, হাসপাতাল ও মাতৃসনদ কেন্দ্র পরিচালনা, মুমূর্ষু রোগীর জন্য নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ ইত্যাদি বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বা সিপিপি আজ সারা বিশ্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় এক অনন্য উদাহরণ। বর্তমান সময়ে বিডিআরসিএসের বৃহত্তম মানবিক কার্যক্রম হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আগত কক্সবাজারের ৩৪ শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারীদের বিভিন্ন মানবিক সাহায্য প্রদান করা।

১৮৬৩ সালে এক যুবক হেনরি ডুনান্টের উদ্যোগে আর্ত-অসহায় মানুষের সেবার জন্য যে মানবিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, আজ ১৫৭ বছর পর সে সংস্থা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৩টি জাতীয় সোসাইটির মাধ্যমে বিশ্বের যেখানেই অসহায় আর পীড়িত মানুষের আর্তনাদ আছে, রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট সেখানেই অবিরত সেবা করে যাচ্ছে। তাই আজ তার জন্মদিন তথা বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসে আমরা এ মহান ব্যক্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

এম এ হালিম : বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক, বর্তমানে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী কার্যক্রমের হেড অব অপারেশন হিসাবে কর্মরত

halim_64@hotmail.com



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews