জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা বা ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউনেপ) প্রবর্তিত চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলা এবং পরিবেশ বিষয়ক উন্নয়নে অবদান স্বরূপ ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দিচ্ছে ইউনেপ। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পলিসি লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হল। নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্মেলনের সমাপনী দিনে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হবে বলে ইউনেপ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে। শুরু থেকে মূলতঃ উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, পরিবেশকর্মী, গবেষক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পোদ্যোক্তারা এই পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রথম বছর ২০০৫ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন,ভূটানের রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক, আরব আমিরাতের জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি, কানাডা, মেক্সিকো, চীনসহ সাতটি দেশের নেতা, বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান। গত বছর এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন ক্যাটাগরিতে সোমালিয়ার একজন পরিবেশবাদী নারী ফাতিমা জেবরিল চ্যাম্পিয়ন্স অব আর্থ পুরস্কার পেয়েছিলেন। ইউনেপের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পুরস্কার পাচ্ছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, ব্রাজিলের কসমেটিক ফার্ম নেচুরা, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লাক মামবা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ (এন্টি-পোচিং) ইউনিটকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার বিবৃতিতে বাংলাদেশকে পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর দেশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সারা বিশ্ব যখন নানাভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, বাংলাদেশ তখন এরই মধ্যে এই সংকটের মধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের নোনা পানিতে তলিয়ে অন্ততঃ চারকোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে বলে পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। গত দশকে সংঘটিত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরের ধ্বংসযজ্ঞ এখনো বহন করছে আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের লাখ লাখ মানুষ। পাশাপাশি নদী ভাঙন ও উপকূলীয় ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর ভূমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে। মূলতঃ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আমরা এ ধরনের অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হলেও বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে আমাদের প্রাপ্তি খুবই অপ্রতুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ মিটিগেশন ফান্ডে উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর চ্যাম্পিয়ন্স অব আর্থ পুরস্কার লাভের মধ্য দিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার ভূমিকার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পাওয়া গেল।বিশ্বের উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান-২০০৯’ এর কর্ম পরিকল্পনার বিষয় উল্লেখ করে চ্যাম্পিয়ন্স অব আর্থ পুরস্কার মানপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশই উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রথম দেশ যারা নিজস্ব তহবিলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের স্বীকৃতিতে আমরা গর্বিত, আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের অভিনন্দন। তবে অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণের পর ইতিমধ্যে ৬ বছর পেরিয়ে গেছে। কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা তাগিদের কারণে নয়, নিজেদের ভৌগোলিক ও ডেমোগ্রাফিক অস্তিত্ব ও সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থেই পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে এখন আমাদের নিজেদের উদ্যোগ ও সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নে যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘ভুল পরিকল্পনায় বাসযোগ্যতা হারিয়েছে ঢাকা’। শুধু ঢাকা শহরই নয়, দেশের প্রায় সব ক’টি বিভাগীয় শহর, এমনকি জেলা শহরগুলোও পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নদী দূষণ, খাল ও নিম্নভূমি দখল ও ভরাটের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দেশ। সরকারের ভুল ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল সুন্দরবন বড় ধরনের ঝুঁিকর মধ্যে পড়েছে। সেখানে বিতর্কিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং সুন্দরবনের ভেতর বাণিজ্যিক নৌ-চ্যানেল চালুর মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যেই সুন্দরবন বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। সরকারের এই ভূমিকা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং পরিবেশগত উন্নয়নে গৃহীত সমন্বিত পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের পরিবেশবাদী গবেষক আতিক রহমান চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেয়েছিলেন। শুধু গবেষণা বা পরিকল্পনা গ্রহণেই নয়, দেশের টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলায় সরকার সাফল্য লাভ করুক, এই প্রত্যাশা দেশবাসীর।


Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews