রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন। বয়স ৫০ পেরিয়েছে। একটু ধুলাবালিতে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অ্যাজমা শনাক্ত হয়েছে। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি বলেন, ঘর ঝাড়ু বা বিছানা ঝাড়লে হাঁচি বেড়ে যায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ওষুধ খেলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না।
একই অবস্থা মহাখালীর বাসিন্দা আক্বাস আলীরও। ছোটবেলা থেকেই হাঁপানি সমস্যায় ভুগছেন ৩৮ বছর বয়সী এই বেসরকারি চাকরিজীবী। হাঁপানির কারণে তাঁকে নিয়মিত ইনহেলার নিতে হয়। তাঁর ভাষ্য, চাকরির প্রয়োজনে দৈনিক বাইরে যেতে হয়। যেদিন বাতাসে খুব ধুলাবালি থাকে, সেদিন বাইরে গেলেই হাঁচি শুরু হয়ে যায়। শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাসে টান ওঠে। তখন ইনহেলার নিতে হয়।
শুধু ফাতেমা কিংবা আক্কাস নন, তাদের মতো দেশে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর বায়ু শ্বাসতন্ত্রের রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কিন্তু বায়ুদূষণের স্থানীয় উৎস যেমন– যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলাবালি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কার্যকর উদ্যোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাঁচি-কাশির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাতে বলা যায় বায়ুদূষণের প্রভাবেই এমনটি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা বাড়াতে সারাবিশ্বে প্রতিবছরের মতো আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব হাঁপানি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অ্যাজমা শিক্ষা, অ্যাজমার তথ্য– দিবে শান্তি রাখবে সুস্থ’।
শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চার বছরে ৩৭ শতাংশ রোগী বেড়েছে। এর সঙ্গে মৃত্যু বেড়েছে ১৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৫ হাজার ৭৯৯ জন। মারা গেছে ৪৬০ জন। ২০২৩ সালে চিকিৎসা নেয় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬ জন ও মারা যায় ১ হাজার ৪৬ জন। ২০২২ সালে এক লাখ ৪৫ হাজার ৮৯১ জন চিকিৎসা নেয় এবং মৃত্যু হয় ৯৪৭ জনের। ২০২১ সালে চিকিৎসা নেয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১৭ জন ও ৯৪৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে চিকিৎসা নেয় ৯৮ হাজার ৯৯১ জন, মৃত্যু হয় ৪৭৭ জনের।
অ্যাজমা, যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে অনেক। এর অন্যতম কারণ দূষণ, খাদ্যে ভেজাল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। সাধারণত এসব রোগ তিন থেকে চার মাস চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়। তবে পরিবেশ ও বায়ুর মান দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর থাকায় সহসাই রোগ থেকে মুক্তি মিলছে না। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ রোগী অ্যাজমায় ভুগছে। এ হিসেবে বর্তমানে দেশে অ্যাজমা রোগী ১ কোটি ৮০ লাখের মতো।
বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ এর তথ্য বলছে, দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। দ্বিতীয় স্থানে আছে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ। এ ছাড়া দেশে মৃত্যুর প্রধান দশটি কারণের মধ্যে অ্যাজমা পঞ্চম।