তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)-এর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাসহ প্রার্থীরা গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনের আগে ব্যাপক শোরগোল তুলে এখন অনেকটা চুপসে গেছে ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত নতুন এ তিন রাজনৈতিক দল। নির্বাচন-পরবর্তী সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন দলগুলো। দলীয় কার্যালয়েও নেই নেতা-কর্মীর আনাগোনা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না দলগুলো।

দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিয়েছে ২৮টি। তবে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ অনেক দলও বর্জন করেছে এ স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আসা নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও বিএনএমও প্রার্থী দেয়নি উপজেলা নির্বাচনে। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের নতুন জামানতের নিয়মের সমালোচনা করেন দলগুলোর নেতারা। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যাদের আর্থিক সামর্থ্য এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে তারাই প্রার্থী হবেন।

এ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের প্রয়োজন নেই। এদিকে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিলেও সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমে তাদের দেখা যাচ্ছে না। মাঠে নেই তাদের কোনো কর্মসূচিও। সাংগঠনিক মজবুতের জন্য বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির কার্যক্রমেও তাদের কোনো সাড়া নেই। দলীয় নিবন্ধন পাওয়ার জন্য শর্ত হিসেবে যতগুলো কমিটি থাকা লাগে সেই কমিটি দিয়ে নামকাওয়াস্তে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। নির্বাচনের পরও নতুন করে আর কোনো কমিটি দিতে পারেনি নতুন এ দলগুলো। মাঠেও নেই কোনো কর্মসূচি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় বিএনএম। তখন দলটির কার্যালয় ছিল মহাখালীর একটি চার তলা ভবনের চতুর্থ তলায় ছোট দুটি কক্ষে। একটি কক্ষে অফিস, আরেকটি মিলনায়তন। কার্যালয় ছিল ৩৮০ বর্গফুটের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরের কাছে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের আলিশান কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করে বিএনএম। সে কার্যালয় থেকেই দলের মনোনয়নপত্র বিক্রি ও প্রার্থী বাছাই করা হয়। তখন কার্যালয়ে কিছু নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছিল। তবে নির্বাচনের পর এ কার্যালয়ে ছিল শুনসান নীরবতা। নেতা-কর্মীরা না আসায় দিনের অনেকটা সময় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। পরে মার্চে দলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেড়েছে। এদিকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনএম। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে অংশ নিয়ে আমরা দেখেছি, সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এ বিষয়ে বিএনএম মহাসচিব ড. মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘গেল জাতীয় নির্বাচনে আমাদের অনেক প্রার্থী বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। প্রার্থীদের সমর্থনে এলাকায় গণজোয়ার ছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিন দেখলাম উল্টোটা। দুপুরের পর চিত্র পাল্টে যায়। সেই চিন্তা বিবেচনায় নিয়ে এবার দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। আগের যে কমিটিগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলোর নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য কাজ চলছে। আর কার্যালয় পরিবর্তন হয়েছে। নতুন যুগপৎ আন্দোলনের জন্য ভাবছি।’

তৃণমূল বিএনপি : দলের নেতা-কর্মীর আনাগোনা নেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অথচ জাতীয় নির্বাচনের আগে সকাল থেকে মধ্যরাত মনোনয়ন প্রার্থী ও নেতা-কর্মীর ভিড় থাকত কার্যালয়টিতে। ২৪ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে কার্যালয়ে কয়েকজন স্টাফ ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্যালয়ে নেতা-কর্মী তেমন একটা আসে না। বিকাল ৩টার পর যুগ্মসম্পাদক রোকসানা আমিন সুরমা কার্যালয়ে আসেন। আর মাঝেমধ্যে দু-এক জন নেতা-কর্মী আসেন বলেন জানান তারা। পরে মুঠোফোনে রোকসানা আমিন সুরমা বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে। বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক কিছু কমিটি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তৃণমূল বিএনপি। জামানত বাড়ার কারণে অনেকে আগ্রহ হারিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের অধীনে সংসদ সদস্যের খবরদারি থাকায় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি : বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অফিস মিরপুর-১-এর শাহ্ আলীবাগে। কার্যালয়ের সামনে ব্যানার থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময় গেট বন্ধ থাকে। নেতা-কর্মীর আনাগোনাও নেই সেখানে। কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থানীয়দের চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে দলটির দফতর সম্পাদক মো. ইবরাহীম বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। ১৪ মে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর মিটিং রয়েছে। ওই মিটিংয়ে ভবিষ্যতে কী কর্মসূচি পালন হবে তা নিয়ে কথা হবে। তবে এরই মধ্যে ৩৫টি জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে কেউ অংশ নেবে না। তবে কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করতে পারবে। কারণ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত ১০ গুণ বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews