৬০ বছর আগে ১৯৫৭ সালে ‘স্পুটনিক এক’ নামে একটি রকেট বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাকাশের দিকে রওনা হয়। মাত্র ৫৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের সেই গোলকটি সেদিন এক অজানা জগতের দুয়ার খুলে দেয়। সাটার্ন-ফাইভে চেপে মানুষ পা রাখে চাঁদের বুকে। গ্রহান্তরে পা রাখা নিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের তখন তুমুল আগ্রহ। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে সে আগ্রহে দেখা দিল ভাটা। ১৯৭৩ সালে বন্ধ হয়ে গেল সাটার্ন-ভি রকেটের মহাকাশ অভিযান। মানুষের গণ্ডি সীমাবদ্ধ হলো বায়ুমণ্ডলের মধ্যে। মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন পরিবর্তনে মনে হচ্ছিল লাল গ্রহের অভিমুখে মানবের যাত্রা হয়তো সম্ভব নয়!

তবে ২০০২ সালে ঘটল অসাধারণ কিছু। নতুন শতকে মানুষকে ভুলতে বসা মঙ্গলযাত্রার কথা মনে করিয়ে দিতে এলেন এক স্বপ্নবিলাসী তরুণ। নাম এলন মাস্ক। এসেই শোনালেন এই শতাব্দীর মধ্যেই মঙ্গলের লাল ভূত্বকে গড়ে উঠবে মানব বসতি। অভিজ্ঞতাহীন প্রযুক্তিবিলাসী তরুণের কথায় বাঘা বৈজ্ঞানিকরা একগাল হেসে চুমুক দিয়েছিলেন কফির মগে। তালিকায় ছিলেন চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখা মানব নিল আর্মস্ট্রং, অজ্ঝাস্ট্রফিজিসিস্ট নিল ডিগ্রেস টাইসনসহ অনেকে।

অভিজ্ঞতাহীন সেই তরুণটির স্বপ্নবিলাস আর জেদ থেকেই ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্পেস এক্স নামে একটি রকেট কম্পানি। সেখান থেকেই ২০০৬ সালে প্রথম ফ্যালকন ওয়ান উড়ে যায় মহাকাশে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত স্পেসএক্স ৫০ বারের বেশি রকেট উেক্ষপণ করেছে। যারা একসময় এলন মাস্কের সমালোচনা করেছিলেন তাঁরাও এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, মঙ্গলে যাওয়া সম্ভব।

ধারণা বদলে দিল ফ্যালকন হেভি

ফ্যালকন নাইন রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে কার্গো পাঠিয়ে টাকা-পয়সা ভালোই কামাচ্ছিল স্পেসএক্স। তবে লাল গ্রহে বাসা বাঁধতে হলে মহাকাশে পাঠাতে হবে আরো মালামাল। সবচেয়ে বেশি মাল বহনে সক্ষম ফ্যালকন নাইন পে-লোড বহন করতে পারে ২২ হাজার ৮০০ কেজি। তবে মঙ্গল অভিমুখে একবারে অনেক মালামাল পাঠাতে দরকার এর চেয়ে বড় রকেট। ফ্যালকন হেভির সক্ষমতা একবারে ৬৩ হাজার ৮০০ কেজি। এটি ফ্যালকন নাইনের চেয়ে তিন গুণ বড়। ১৮টি বোয়িং-৭৪৭ বিমানের ক্ষমতাসম্পন্ন ৭০ মিটার উঁচু দৈত্যকায় এক রকেট এটি।

রকেটটি বানানোর ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১১ সালে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রকেটটি ২৪ জানুয়ারি সর্বশেষ পরীক্ষাটি সফলভাবে শেষ করে। এর পরই উেক্ষপণের ঘোষণা দেন মাস্ক। অর্থাৎ ফ্যালকন হেভির প্রথম পরীক্ষামূলক উেক্ষপণ হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। অতিকায় এই রকেটটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রকেট। এবং আকারের দিক থেকে সর্বকালের দ্বিতীয় বৃহত্তম রকেট। চাঁদে অবতরণ করা সাটার্ন-ভি এখনো এই তালিকায় এক নম্বরেই আছে।

সফল এক উেক্ষপণ

ফ্যালকন হেভির সফল উেক্ষপণ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন এলন মাস্ক নিজেই। ভেবেছিলেন, হয়তো মাটিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে রকেটটি। তবে ৬ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের মানুষ দেখল এক সফলতার গল্প। রকেটের উেক্ষপণ, বুস্টারের আলাদা হওয়া, বুস্টারের মাটিতে নেমে আসা পুরোটাই ছিল পরিকল্পনামাফিক। তবে সেন্টার কোরটি ড্রোনশিপে নামতে পারেনি। বর্তমানে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সচল রকেট।

রকেটের যাত্রী টেসলা রোডস্টার

প্রথম উেক্ষপণে ফ্যালকন হেভির যাত্রী হয়েছে মাস্কের টেসলা রোডস্টার। গাড়ি কেন? জানতে চাইলে মজার সুরে মাস্ক বলেন, মহাকাশে গাড়িটি হাজার বছর ধরে ঘুরে বেড়াবে। এরপর কোনো এলিয়েন এর সন্ধান পেয়ে আমাদের সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে অনেকেই এটিকে টেসলার প্রচারণার কৌশল হিসেবে দেখছেন। উেক্ষপণের পর চার ঘণ্টা ধরে মাস্কের গাড়ি থেকে লাইভ ফিড পাওয়া যায়। মহাকাশে টেসলা রোডস্টারের ঘুরে বেড়ানো দেখেছে বিশ্ববাসী। কোটি কোটি বছর ধরে মঙ্গলকে কেন্দ্র করে ঘুরবে টেসলার এই গাড়িটি।

এক ঢিলে তিন পাখি

স্বপ্নবিলাসী মাস্ক ফ্যালকন হেভির উেক্ষপণে স্পেসএক্সের সব অর্জন একসঙ্গে শোকেস করেছেন। আবার ব্যবহার্য দুটি রকেট দিয়ে ফ্যালকন হেভির দুটি বুস্টার তৈরি করা হয়। নতুন একটি রকেট দিয়ে সেন্টার কোর তৈরি। যার প্রতিটিই আবার ব্যবহারের জন্য ভূমিতে নিয়ে আসা হয়। দুটি বুস্টার এসে সফলভাবে নামে কেনেডি স্পেস স্টেশনে। অপরটি সমুদ্রের ওপর একটি জলযানে নামার কথা থাকলে সেটি সেখানে নামতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ মাস্ক দেখিয়েছেন রিইউজেবল রকেটে যে কাজ করে এবং সেগুলোকে আলাদা আলাদা স্থানে অবতরণ করানো যায়, মঙ্গলের পথে যাত্রা অসম্ভব কিছু নয়।

মহাকাশ ব্যবসায় বড় পরিবর্তন

ফ্যালকন হেভির সফলতা মহাকাশ ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। ফ্যালকন হেভিকে একবার উেক্ষপণ করতে খরচ পড়বে ৯ কোটি ডলার, যা বর্তমান ব্যয়ের চেয়ে ৪ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

মঙ্গল যাত্রা কত দূর?

মাস্কের মূল লক্ষ্য মঙ্গল। ফ্যালকন হেভির সফল উেক্ষপণ থেকে তিনি বললেন, আমি এখন আত্মবিশ্বাসী যে বিএফআর নকশাটি কাজ করবে। একটি বিএফআরের আকার হবে তিনটি ফ্যালকন হেভির সমান। মাস্ক বলছেন, বিএফআরের মাধ্যমে ২০২২ সাল নাগাদ মঙ্গলের উদ্দেশে কার্গো পাঠানো হবে।

এলন মাস্ক নিজের লক্ষ্যে অবিচল হলে কে জানে হয়তো সব অমঙ্গল পাশ কাটিয়ে মঙ্গলের দেখা মিলতেও পারে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews