বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে সাংবাদিকদের জন্য একটি সুসংবাদ এসেছে—নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমোদনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে, তা সময়োপযোগী এবং সাংবাদিকতার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির একটি বড় দৃষ্টান্ত।

‘নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫’ নামের এই নতুন নির্দেশনায় একদিকে যেমন সাংবাদিকদের চলাচল, সংবাদ সংগ্রহ ও তথ্য প্রকাশের নির্দিষ্ট কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি নির্বাচনকেন্দ্রিক স্বচ্ছতা রক্ষায় নির্ধারিত কিছু বিধিনিষেধও রাখা হয়েছে। তবে এই নীতিমালার কিছু দিক সাংবাদিকতার বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয় স্বাধীনতার প্রশ্নও উসকে দেয়।

নীতিমালায় মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকায়। ভোটকেন্দ্রগুলোতে দ্রুত পৌঁছাতে, মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র ধরতে সাংবাদিকদের জন্য এ সিদ্ধান্ত কার্যকর সহায়তা দেবে।
পাশাপাশি, অনলাইন, আইপি টিভি, প্রিন্ট, টিভি ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকসহ বিদেশি মিডিয়ার অন্তর্ভুক্তি এই নীতিকে একটি বিস্তৃত ও আধুনিক কাঠামোতে রূপ দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন তথ্যপ্রবাহের গতিশীলতা ও বৈচিত্র্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।

তবে নীতিমালার কিছু সীমাবদ্ধতা প্রশ্ন তুলছে সাংবাদিকদের কার্যক্ষমতা ও স্বাধীনতার ব্যাপারে। ভোটকক্ষে একসঙ্গে দু’টি মিডিয়ার সীমা, ১০ মিনিটের সময়সীমা কিংবা সাক্ষাৎকার ও সরাসরি সম্প্রচারের নিষেধাজ্ঞা মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকতার জন্য কিছুটা চাপ তৈরি করবে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা শুধু তথ্য সংগ্রহ নয়—সাথে সাথে তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ, দায়বদ্ধতার নজরদারি এবং জনগণের আস্থা তৈরি করাও। এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি সম্প্রচারে বিধিনিষেধ কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—"অনুমোদিত কার্ডধারী" বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে? স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নিবেদিতপ্রাণ সংবাদকর্মী, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্ড না থাকলেও তারা বাস্তবে মাঠের প্রধান ভরসা—তারা এই কাঠামোর বাইরে থাকলে গণমাধ্যম কাঠামোরই একটা অংশ বঞ্চিত হবে।

সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে যেমন নিরপেক্ষ প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গণমাধ্যমের উপস্থিতিও জরুরি। জনগণের চোখ হয়ে যে গণমাধ্যম কাজ করে, তাদের গতিবিধিতে সীমাবদ্ধতা না দিয়ে, বরং সহায়তা করাই গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক।

ইসির নতুন নীতিমালা নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু এটি যেন শুধু কাগুজে নিয়ম না হয়, বাস্তবে তা যেন সাংবাদিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়—তা নিশ্চিত করা জরুরি। মাঠ পর্যায়ে এ নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের হয়রানি বা ক্ষমতার অপব্যবহার না ঘটে, সে বিষয়েও ইসির মনোযোগ কাম্য।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধ একসঙ্গে বজায় রেখে একটি ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই এই নীতিমালা হবে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে চলার আরেকটি মাইলফলক।

শামসুর রহমান হৃদয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গাইবান্ধা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews