২০২৩ সালের টেক্সাসের এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল পর্নহাব’সহ আরও কিছু সাইট। ছবি: রয়টার্স
২০২৩ সালের টেক্সাসের এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল পর্নহাব’সহ আরও কিছু সাইট। ছবি: রয়টার্স
টেক্সাসের একটি আইনকে বৈধতা দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। ওই আইনের আওতায় পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রবেশ করতে হলে ব্যবহারকারীদের এখন থেকে সরকারি পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের বয়স প্রমাণ করতে হবে।
এ আইনের অধীনে, টেক্সাসে বিভিন্ন ধরনের পর্ন সাইট ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীদের সরকারি আইডি বা ফেইস স্ক্যানের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে বয়স যাচাই করতে হবে। এ ধরনের সাইটে প্রবেশের আগে তাদের অবশ্যই দেখাতে হবে যে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক।
এর আগে, ২০২৩ সালের টেক্সাসের এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল পর্নহাব’সহ আরও কিছু সাইট। ওই সময় তারা বলেছিল, বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করছে এই আইন। পাশাপাশি যারা এ ধরনের কনটেন্ট দেখতে চান তাদের জন্য অতিরিক্ত ঝামেলাও তৈরি করছে আইনটি।
আইনের পক্ষে রায় দিয়ে টেক্সাস সরকার বলেছে, আইনটি তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষিত রাখা। এ ছাড়া, কেবল টেক্সাস নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আরও দেড় ডজনেরও বেশি অঙ্গরাজ্য একই ধরনের আইন পাস করেছে।
বিবিসি লিখেছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ৬ জন এ আইনের পক্ষে ও ৩ জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৬-৩ ভোটে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান বিচারপতিরা, যেটি প্রকাশ পেয়েছে শুক্রবার।
এ মামলার রায় লিখেছেন বিচারপতি ক্ল্যারেন্স টমাস। তিনি বলেছেন, “টেক্সাসের মতো রাজ্য চাইলে অশ্লীল বা স্পষ্ট যৌন কনটেন্টে শিশুদের প্রবেশ ঠেকাতে বয়স যাচাইয়ের নিয়ম বাধ্যতামূলক করতে পারে এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বৈধ।”
এ বছরের জানুয়ারিতে দুই ঘণ্টার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা টেক্সাসের আইনের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের রক্ষায় কিছু সুরক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। একইসঙ্গে আইনটি যেন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মত প্রকাশের অধিকার বা স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত না করে সে বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তারা।
এ মামলায় বিভিন্ন পর্ন ওয়েবসাইটের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি গঠনে আগের এক সুপ্রিম কোর্টের রায় বা আইনি নজিরের ওপর নির্ভর করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
২০০৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তারা বলেছেন, ওই রায়ে ইন্টারনেটে এমন কনটেন্টকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না, যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর তবে প্রাপ্তবয়স্কদের দেখার অধিকার রয়েছে। কারণ, শিশুদের রক্ষার কথা বলে আইন করলেও এতে বড়দের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যেটি আদালতের পুরনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে মেলে না।
তারা আরও বলেছেন, ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচয়পত্র বা ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া অনেক প্রাপ্তবয়স্ককেই ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ থেকে দূরে রাখতে পারে। এভাবে প্রাপ্তবয়স্করা ভয়ে বা অস্বস্তিতে পড়েই ওই ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে করে তাদের প্রথম সংশোধনী বা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের চলচ্চিত্র শিল্প তাদের আইনি নথিতে যুক্তি দিয়েছে, “যখন কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার সরকারি পরিচয়পত্র জমা দিয়ে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করেন তখন তারা বোঝেন, এর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ভুলক্রমে ফাঁস হতে বা হ্যাকারদের হাতে পড়তে পারে।”
সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আইনটি ভবিষ্যতে কেবল পর্নোগ্রাফি নয়, বরং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেও ব্যবহার হতে পারে।
অন্যদিকে, টেক্সাসের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি গঠনে নির্ভর করেছেন ১৯৬৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের এক রায় বা আইনি নজিরের উপর, যেখানে আদালত নিউ ইয়র্কের এমন এক আইনকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা ওই সময় অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিন বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল।
অঙ্গরাজ্যেটির আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, “আগে যেভাবে নিউ ইয়র্কে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ম্যাগাজিন বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে অনলাইনের ক্ষেত্রে একই ধরনের বিষয় নিয়ন্ত্রণ করাটাও বৈধ। কনটেন্ট যেখানেই থাকুক, শিশুদের সুরক্ষার জন্য নিয়ম থাকা প্রয়োজন।”
রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটন লিখেছেন, “শিশু, অভিভাবক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যর জন্য এটি এক বড় জয়, যেটি অনলাইন পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দেবে।”