শপথ নিয়ে গড়লেন সমালোচনার পাহাড়। সেটি অতিক্রম করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাজে মাঠে নেমে পড়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। যেখান থেকে তৃতীয় দিনের মাথায় বইতে শুরু করেছে সুবাতাস। গতকালই (১২ নভেম্বর) সমালোচকদের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম লাভিং মাই জব’। আজই (১৩ নভেম্বর) তার প্রমাণ দিলেন সংবাদ সম্মেলন করে।
বুধবার দুপুরের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে দুটি বড় সুখবর জানালেন এই সংস্কৃতি উপদেষ্টা। প্রথমটি, ১৫ নভেম্বর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ডাকা দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার। অন্যটি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫। যা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের দুটি সর্বোচ্চ আলোচিত অমীমাংসিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো গেল ক’দিন।
এদিন (বুধবার) গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বলেন, ‘গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে বসেছি। ওনাদের পরিষ্কার বলেছি- সরকারের পলিসি বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। কাউকে আক্রমণ করা কিংবা খারিজ করা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে ফেডারেশন বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিল্পকলা একাডেমি ঘিরে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য ১৫ নভেম্বর দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে ফেডারেশন। ওনাদের সঙ্গে আজ যখন বসলাম। বক্তব্য শুনলাম। আমার বক্তব্যটাও বললাম। দেখলাম, আমাদের কারোর সঙ্গে কোনও দ্বিমত নেই। সেই একমত থেকেই আমি অনুরোধ করেছি, কর্মসূচি উইথড্রো করা যায় কি না।’
এরপর উপদেষ্টা মাইক্রোফোন এগিয়ে দেন পাশে বসা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদের দিকে। অনুরোধ করেন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে। কামাল বললেন, ‘সরয়ার ভাই আমাদের নাটকের লোক। মহিলা সমিতিতে একসঙ্গে নাটক করে এসেছি আমরা। এখন তিনি বিখ্যাত নির্মাতা। তিনি যখন এই মন্ত্রণালয়ে এসেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছি। মনে হলো আমাদের ঘরের ছেলে ঘরে এসেছে। তিনি ডেকেছেন, আমরা নতুন রূপরেখা নিয়ে বসেছি। ২ তারিখে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলায়। এরপর ৮ তারিখে আবার আক্রমণ হয়। আমরা তখনই জানিয়েছি, ১৫ নভেম্বর প্রতিবাদ সভা করবো দেশজুড়ে। আজকের বৈঠকে সে বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছি আমরা। উনি (ফারুকী) বললেন, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে যা যা করা লাগে তাই করবেন। সেই ভরসা থেকে আমরা ১৫ নভেম্বর দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ সমাবেশ ছিলো, সেটা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
এরপর উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘দুপক্ষই একমত হয়েছি এই বলে, পতিত স্বৈরাচারের বিচার বিঘ্নিত করার জন্য কেউ কেউ উসকানি দিতে পারে। নাটকের ভেতরে ও বাইরে ব্যক্তিগতভাবে যারা এই কাজে লিপ্ত তাদের দায়িত্ব ফেডারেশন নেবে না। এটা ওনারা আমাকে বলেছেন। যা আমার জন্য খুবই খুশি হওয়ার মতো বিষয়।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন আসে শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক প্রদর্শন ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছে, সেটি সামনে যেন আর না হয়; সে বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক কঠোর নিরাপত্তা চেয়েছেন। সে বিষয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারী শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। খোঁজ নিলে দেখবেন যারা ওখানে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে জুলাই আন্দোলনে ছিলেন। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দেখেন ক্ষোভের সময় যারা উস্কানি দেয়, তাদের প্রতি তো বিক্ষুব্ধ হবেই। নাট্যকর্মী ভাইবোনদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এটা একটা অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেটা মনে রাখতে হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের সবাইকে রেসপনসিবল হলেই হয়। এই সরকারের ফিলসফিতে নাটক বা সংস্কৃতির বিকাশে কোথাও কোনও বাধা আছে বলে আমি দেখতে পারছি না।’
শেষে প্রসঙ্গ ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে। সে বিষয়ে ফারুকী আশ্বস্ত করেন সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুরো দেশবাসীকে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গতকালই পত্রপত্রিকায় এসেছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। এই মেলার সঙ্গে তিনটি মন্ত্রণালয় জড়িত। সংস্কৃতি, পূর্ত ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। কাজ শুরু করেছি আমরা। একটা পজিটিভ আলাপ চলছে। আশা করা যায়, বইমেলা যেখানে হওয়ার সেখানেই হবে। সোহরাওয়ার্দীতেই হবে, আশা করা যায়।’
বলা দরকার, অনেকটা সবাইকে চমকে দিয়ে ১০ নভেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।