‘ ঘরে থাকুন ‘ – এ কথাটা গ্রাহ্য না করার ফল এখন দৃশ্যমান। মাত্রারিক্ত গোঁয়ার্তুমি, অন্ধবিশ্বাস আর অজ্ঞতার কারণে দেশে করোনা ভাইরাস বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস। ১৪ দিন ঘরে থাকার ধৈর্য্য ছিল না বেশির ভাগ মানুষের । অভাগা এ জাতিকে বারবার হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, এ ভাইরাসে কেউ একা সংক্রমিত হয় না। ঘরে থেকে যে উপকার একে অপরের করতে পারত তা অনুধাবন করার মানসিকতা জনগনের নেই।

বিশ্বের অন্য দেশের দিকে লক্ষ্য করা যায়, সেখানে সারাদেশে এক সাথে রোগ ছড়িয়ে পড়েনি। খোদ চীনের উহান শহরেই কেবল আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল বেশি। ইতালির মিলানে। আমেরিকার নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত বেশি। তাদের অন্য স্টেটে নিয়ন্ত্রিত অবস্থা ।

বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতাকে উপেক্ষা করেছে। ঈদের ছুটির আমেজে শহর থেকে গ্রামে গেছে পংগপালের মত। কোন বাধা নিষেধ মানেনি।কিন্তু ছুটি দেয়া হয়েছিল ঘরে থাকার জন্য। হাতের মোবাইলে মুহুর্তে বিশ্ব পরিস্থিতির খবর জানে আজকাল সকলে। তবে দেশের মানুষের কাছে এ খবরগুলো কেবল চায়ের দোকানে আড্ডার আলাপের বিষয়। আর এ আড্ডার খেসারত দিতে হবে এখন সকলকে।

যথেষ্ট সময় ছিল সরকার ও জনগনের কাছে। উহানে এ ভাইরাসের প্রভাব বিস্তারের পর থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। বরং প্রবাসীদের নিয়ে চলে ঢিমেতাল কার্যক্রম। স্বচ্ছতার অভাব ছিল তথ্য প্রদানে। সব মিলে লেজেগোবরে অবস্থাকে আরও নেতিবাচক করে গার্মেন্টস সেক্টর। গ্রাম থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ফিরে শহরে। গন পরিবহন বন্ধ কিন্তু তারা এসেছে নানা কায়দা করে। মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ সেনাবাহিনী রাস্তায় আছে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কি করে এরা এলো তার কোন জবাবদিহিতা নেই। করোনা ভাইরাসের ভয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল, চেম্বারে চিকিৎসক নাই। অন্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ। মানব সেবার ব্রত নেয়া চিকিৎসকদের স্বল্প সংখ্যক আছে হাসপাতালে। অথচ অন্য দেশের মানব সেবার চিত্র দেখলে শ্রদ্ধায় অবনত হয় মুখ। তবু বাংলাদেশের যে চিকিৎসকরা জীবনের অনিশ্চয়তার কথা না চিন্তা করে রোগীদের সেবা দিচ্ছে তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।

করোনা ভাইরাসের কারনে সরকারি ছুটি ঘোষনার পর থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করছে লাগাতার ভাবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের নিরন্ন যেন না থাকতে হয় তার জন্য ত্রানের ব্যবস্থা করে সবার আগে। পরবর্তীতে দেশের বিত্তবান ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকার তার অবস্থান থেকে সহায়তা ও প্রনোদন প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে ইতমধ্য।

তথাপি ক্ষুদ্র করোনা ভাইরাসকে দেশের জনগন বহন করে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে গেছে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। অনিশ্চিত এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। মার্চের ১৬ থেকে এখন অবধি মানুষের হাহাকার ছিল না। কিন্তু সামনের দিনে কে কাকে সাহায্য করবে তা ভাবতে গেলেই হিম হয়ে আসে শরীর । কারন মহামারী আমাদের দিকে ধেয়ে আসেনি। আমরা একে বহন করে নিয়ে এসেছি। ঘরে না থেকে, প্রবাস থেকে আসার তথ্য লুকিয়ে একে ছড়িয়ে দিয়েছি সমাজে। একবারের জন্য ভাবিনি করোনা ভাইরাসে কোন প্রিয়জনের মৃত্যু হলে তা কতটা যন্ত্রনার।

এ ভাইরাসকে প্রতিহত করতে হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে হবে। আবার বলা হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও কিছু সময় এ ভাইরাস নীরবে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে।
ব্যতিক্রম ঘটনা দেখা যায় চট্রগ্রামের আক্রান্ত দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে । তার বাবা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। কিন্তু ছেলের শরীরের অসুস্থতার কোন লক্ষন ছিল না। তাই দিব্যি তিনি কাজ করেছেন নিজের কর্মস্থল এক সুপারস্টোরে। তার সংস্পর্শে আসা কত জন আক্রান্ত হয়েছে তা এখন বলা অসম্ভব। বাসাবোর এক পরিবারে ছয় জন আক্রান্ত ।

আসলে সামাজিক ভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কথাটা কথার কথা ছিল না। আর এর মুল্য দিবে ঘন বসতির বাংলাদেশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিন দিন হতাশা বাড়ছে সবার চোখে মুখে। কোথায় দাঁড়াবে মানুষ এ প্রশ্নের উত্তর সহজ নয় আর। তাই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে এ দেশকে বাঁচাতে হলে মনোবল আর সাহসটা এখন জরুরি। দোষারোপ আর কাদা ছোড়াছুড়ি করার সময় এখন না।

নিজের লড়াইটা নিজেকে করতে হবে সাহস নিয়ে। হতাশার অন্ধকারে ডুবে গেলে বাড়বে মৃত্যুর মিছিল। ‘ আমি ঘরে থাকব, হাত ধুয়ে পরিস্কার থাকব ‘ – এ প্রতিজ্ঞাটা নিজেকে দৃঢ়তার সাথে করতে হবে। সরকারি বেসরকারিভাবে ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী আপনার প্রয়োজন মেটাতে সদা প্রস্তুত। তারা সাহায্য করবে ডাক দিলে। একটু আস্থা, বিশ্বাস আর ধৈর্য্য এখন খুব দরকার।

উন্নয়নশীল দেশ হলেও বাংলাদেশের সিস্টেম অন্য দেশের মত নয়। সরকারি বরাদ্দ নয় ছয়, গরীবের হক মারা, ঘুষ, চাঁদা, অন্যায় কাজ করোনা ভাইরাস বন্ধ করতে পারেনি। আর সে কারনে ত্রান কেউ পায় কেউ পায় না। এ অপকর্মগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে নিজের মাঝে আত্মশুদ্ধি জাগ্রত হলে। আইন করে দূর্নীতি বন্ধ করা যায় না। একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস সব কিছু নিমেষে শেষ করে দিচ্ছে। এ থেকে বুঝা যায় মানুষ কত অসহায়। মিথ্যা বিত্ত বৈভব বড় তুচ্ছ।

মধ্যবিত্ত – নিম্ন বিত্তের মানুষের রোজগারের চিন্তাটা করোনা ভাইরাসের মৃত্যু ভয়কে পরাজিত করে। ভাতের ক্ষুধার পাশাপাশি অন্যান্য খরচ মিটাতে রাস্তায় নামে তারা। কিন্তু একবার ভাবুন পরিবার সন্তানকে এখন ভালো রাখতে গিয়ে ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করে দিচ্ছেন। কারন করোনা ভাইরাস আপনিই হয়তো বয়ে নিয়ে আসছেন ঘরে। সুতরাং মহামারি এ প্রলয় থেকে রক্ষা পেতে হলে যে যার অবস্থানে অটল থাকুন। বিচ্ছিন্ন হয়েও একে অপরকে সাহায্য করলে করোনা ভাইরাস পরাস্ত হবে। সমাজের বৈষম্যতা ভুলে অন্যের প্রতি নমনীয় হোন সামাজিক ও আর্থিকভাবে। আর এ কাজটা করা তখনই করা সম্ভব হবে, ‘ যখন লড়াই করার জন্য নিজের সাহস ও মনোবল থাকবে।’

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews