গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরপরই ৮ আগস্ট বিএনপি নয়াপল্টনে তার কার্যালয়ের সামনে বিশাল সমাবেশ করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছিল। সে সময় অনেকেই বিএনপির নির্বাচনের এই দাবিতে অবাক হয়েছিলেন। তাদের মনোভাব এমন ছিল, মাত্র হাসিনার পতন হয়েছে, এখনই কেন নির্বাচনের দাবি! তারা আরও অবাক হয়েছিলেন, হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার প্রথম প্রতিক্রিয়ার বক্তব্যে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচন। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের আনন্দে ভেসে না গিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপি তো বটেই অনেকেই ‘ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচন’ হবে তারেক রহমানের এমন বক্তব্যে ফিসফাস করেছিলেন। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, হাসিনার পতন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ পুরো নির্বাচনী পরিবেশ তাদের অনুকূলে। নির্বাচন হলেই বিএনপি অনায়াসে বিজয়ী হবে। বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এ ধারণা করা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, দলটির প্রবল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে এবং তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির জয়ের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। তবে দলটির পোড় খাওয়া ও অভিজ্ঞ শীর্ষ নেতা এবং নীতিনির্ধারকরা ঠিকই তাদের দূরদর্শী চিন্তা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে জানেন, শুরুতেই যদি অনতিবিলম্বে নির্বাচনের দাবি না করা হয়, তাহলে অনির্বাচিত সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য জনগণের উপর চেপে বসবে। হাসিনার পতনের ‘পপুলার ইস্যু’কে সামনে রেখে সে ফায়দা লুটবে এবং এই বয়ান শুরু করবে, রাজনৈতিক দল মানেই খারাপ। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে হাসিনার মতো একই কাজ করবে। কাজেই, অরাজনৈতিক সরকারই ভালো এবং তারাই দেশ চালাবে। ইতোমধ্যে এই বয়ান শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
দুই.
বারবার ক্ষমতায় আসা অভিজ্ঞ দল বিএনপি গণঅভ্যুত্থানের পর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতেই যে আশঙ্কা করেছিল, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তাই ঘটছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার ইস্যুকে সামনে রেখে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত এনসিপি এই তত্ত্বের উপর জোর দিয়ে আওয়াজ তোলা শুরু করে। এখনো এ আওয়াজ দিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। এর কারণ হচ্ছে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রভাব বিস্তার এবং প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে তাদের ভাবধারার লোকজন দিয়ে এক ধরনের ক্ষমতার বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ক্ষমতা উপভোগ করছে। সরকারের মধ্যেও তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে ঢিলেমি দেয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকার ‘এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে’ এমন একটি হাইপোথেটিক্যাল টাইমফ্রেম নির্ধারণ করেছে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সরকারের এই সময়সীমাকে ‘নির্বাচনী মুলা ঝুলানো’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ সরকারের এই সময়সীমাকে সন্দেহের চোখে দেখে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসও ‘স্বল্প সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে’, এমন এক গোলকধাঁধার তত্ত্ব হাজির করেন। কতটুকুতে স্বল্প হয়, আর কতটুকুতে বেশি হয়, তার পরিস্কার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ফলে তাঁর এই তত্ত্বও হাইপোথেটিক্যাল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত গত ঈদের আগের দিন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ‘স্বল্প ও বেশি সংস্কারে’র তত্ত্বের মিমাংসা না করেই নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছিলেন। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, তাঁর বক্তব্যে হেরফের রয়েছে। এটাও লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে, বিএনপির দ্রুত নির্বাচন চাওয়া তিনি পছন্দ করছেন না, বিরক্ত হচ্ছেন। তাঁর এই বিরক্তির প্রকাশ ঘটে জাপান সফরের সময় যখন বলেন, ‘শুধু একটি দলই নির্বাচন চায়।’ তাঁর এ বক্তব্য যে, বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলা, তা কারো বুঝতে বাকি থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি তার প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দলটির নেতৃবৃন্দ বলতে শুরু করেন, নির্বাচন চাওয়াকে সরকার যেন, ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করছে। অন্যদিকে, বিএনপির এই দ্রুত নির্বাচন চাওয়াকে কিছু ইউটিউবার এবং তাদের সমর্থকরা ভারতের নির্বাচন চাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে বিএনপিকে ‘ভারতের দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে। শুধু বিএনপিকে নয়, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকেও তারা ‘ভারতের দালাল’র ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। তারা বিএনপি ও সেনাপ্রধানের নির্বাচন চাওয়াকে ভারতের চাওয়ার সাথে মিলিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে থাকে। উদ্দেশ্য, তাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ‘ভারতবিরোধী’ মনোভাবকে কাজে লাগানো। অর্থাৎ বিএনপি ও সেনাপ্রধান ভারতের দালাল, তাই তাদের দাবিমতো নির্বাচন দেয়া যাবে না। এতে পরোক্ষভাবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সমর্থকরা সমর্থন দিতে থাকে। তারা এটা বুঝতে চায় না, বিএনপির নির্বাচন চাওয়া নিয়ে জামায়াতে ইসলাম ও এনসিপি সমর্থকরা যতই অপপ্রচার চালাক না কেন, তাদের সম্মিলিত ভোটের হার বিএনপির ভোটের ধারেকাছেও নেই। এ ব্যবধান কমাতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। ফলে দ্রুত নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার মধ্যে ক্ষমতা উপভোগের লোভ পেয়ে বসেছে, তারা ক্ষমতা উপভোগ করছেন। অন্যদিকে, প্রশাসন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জামায়াতের লোকজন রয়েছে এবং সেও ক্ষমতা উপভোগ করছে। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার পর জামায়েত কখনো এত ক্ষমতা উপভোগ করতে পারেনি। আর সরকার এনসিপির কথা বিনাবাক্যে মেনে নেয়ায় তারাও ক্ষমতা উপভোগ করছে। ইতোমধ্যে বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উঠেছে। ফলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়েত-এনসিপি, এই ত্রয়ী এক হয়ে গণতান্ত্রিক ধারাকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছে। তারা জানে, ভোটের রাজনীতির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট। কাজেই, এভাবে যতদিন পারা যায়, তারা ক্ষমতা উপভোগ করে যেতে চায়। এর মধ্যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে দল গোছানোর কাজটিও তারা সেরে ফেলতে চায়। সঙ্গতকারণেই বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অনির্বাচিত সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা মানবে কেন? দলটি তো বারবারই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছে, সে যদি ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে নির্বাচন করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকুক, তাতে তার কোনো আপত্তি নেই। শুধু সরকার কেন, অন্য দলগুলোও যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে, তাতেও তার কোনো আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে, দ্রুত নির্বাচনই একমাত্র পথ। দলটির এ কথা যৌক্তিক। ফলে সে নির্বাচন চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। শুধু বিএনপি কেন, দেশের মানুষও চায় নির্বাচন হোক। নানা কূটকৌশল ও উসিলা দিয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে থাকার প্রবণতা গণতন্ত্রে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি তা মানার কোন কারণও নেই।
তিন.
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেন, তখন বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এতে সরকারের টনক নড়ে। দেরি না করে সরকার নিজেই যোগাযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে গত ১৩ জুন বৈঠক করে। দেশের স্বার্থে এই বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয় এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে ‘ঐতিহাসিক বৈঠক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষই একমত হয়, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে যে ধোঁয়াশা ও অস্পষ্টতা ছিল, তা কেটে যায়। সকলেই এই বৈঠকের এই ফলাফলকে স্বাগত জানায়। শুধু জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি তা ভালোভাবে নিতে পারেনি। এর কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। এর মাধ্যমে নির্বাচন ছাড়া তাদের ক্ষমতা উপভোগের শেষের দিন গোনা শুরু হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা অনেকটা জোট বেঁধে নির্বাচন কীভাবে আরও পিছিয়ে দেয়া যায়, এ নিয়ে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করছে। তাদের মূল ইস্যু হয়ে উঠেছে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার। পাশাপাশি আগে গণপরিষদ ও স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে বলে দাবি তুলেছে। আবার এনসিপি বর্তমান নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ তুলে পুনর্গঠন চেয়েছে। এসব ইস্যু তোলা যে, নির্বাচনকে যেকোনো উপায়ে বিলম্ব করা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অথচ বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, সে সংস্কার, বিচার সবই চায় এবং তা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারপরও তারা গোঁ ধরে বসেছে, এগুলো নির্বাচনের আগেই শেষ করতে হবে। এই গোঁ ধরার পেছনে যে নির্বাচনকে বিলম্ব করে তাদের ক্ষমতা উপভোগকে দীর্ঘায়িত করা, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। অথচ ভোটাররা ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যকার সফল বৈঠকের দেশব্যাপী ভোটের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্রই এখন দ্রত নির্বাচন এবং ভোটের হিসাব-নিকাষের হাওয়া বইছে। শুধু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই দ্রুত নির্বাচন চাইছে না, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের তাকিদ দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্র যখন দ্রুত নির্বাচন চায়, তখন তার মিত্র পশ্চিমা বিশ্বও তার সাথে সহমত পোষণ করে। গত বছরের ১০ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এক প্রশ্নের জবাবে বলেছন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার চায় না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সবাই দ্রুত নির্বাচন চায় গত রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সাক্ষাতকালে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় দেখতে চায়। গত ২১ মে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দেয় অস্ট্রেলিয়ার ৪১ জন সিনেটর। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চীন সফররত বিএনপির একটি প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েডং বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, দ্রুত নির্বাচন শুধু বিএনপি চাচ্ছে না, প্রভাবশালী দেশগুলোও দ্রুত নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে। যারা নির্বাচন বিলম্ব করার নানা উসিলা সৃষ্টি করছেন, এখন তারা কি বলবেন? বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। সাধারণ মানুষ অতি কষ্টে দিনযাপান করছে। তাদের হাতে টাকা নেই, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে, কর্মসংস্থান না হওয়ায় হু হু করে বেকারত্ব ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, খরচ কুলাতে না পারায় বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই করছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বলতে কিছু নেই। অর্থনীতির এমন ত্রাহি দশায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই। এর কারণ হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও স্টেক হোল্ডাররা অনির্বাচিত, অনিশ্চিত এবং অনির্দিষ্টকালের সরকারের সাথে কাজ করতে ভরসা পায় না। তারা চায় স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার। এ বিষয়টিই যারা নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা উপভোগ করতে চায়, তারা বুঝতে চায় না। তারা দেশের স্বার্থ না দেখে, কেবল নিজ স্বার্থ দেখছে। এখানে তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।
চার.
বুঝতে অসুবিধা হয় না, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচনের প্রতি খুব একটা আগ্রহী নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেবল চাপে পড়ে নির্বাচনের কথা তাকে বলতে হচ্ছে। সে ক্ষমতা থেকে যেতে চায় না। দুয়েকটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের এখন অনেক বড় মনে করছে, সরকার তাদের সমর্থনে টিকে থাকতে চাচ্ছে। খোলাখুলি বললে, তাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে থাকতে চাচ্ছে। তবে ব্যাপক জনসমর্থিত বিএনপি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর দ্রুত নির্বাচনের তাকিদের কারণে বেজার হয়েও তাকে নির্বাচনমুখী হতে হচ্ছে। তারপরও সরকার যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার কথা বলেছে, সেটা নিয়ে তার মধ্যে দ্বিধা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকার ‘যদি’, ‘কিন্তু’র মধ্যে আছে। এ ধরনের প্রবণতা থাকা কাম্য নয়। সরকারের উচিৎ, বাস্তবতা মেনে নিয়ে, মানুষের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে থাকতেই দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়া।