মীরা ও তাঁর স্বামী দুজনই দিনমজুর। পড়ন্ত বিকেলে পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করার আগে দিনমজুরের কাজ করে আসতে হয়েছে মীরাকে। গ্রামের শেষ প্রান্ত থেকে সরদারবাড়ির এই পুকুর থেকে মীরার মতো অনেকেই পানি সংগ্রহ করেন। তাঁদের বাড়ির আশপাশের কোথাও খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। মীরা বলেন, এখান থেকে পানি নিয়ে বাড়ি আসতে-যেতে ঘণ্টাখানেক লাগে। গরম আসছে, চিন্তা বাড়ছে। পানির ট্যাংক পাওয়ার জন্য অনেকের কাছে বলেছেন; কিন্তু কাজ হয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বাড়ায় উপকূলের ১৯টির মধ্যে ১৮ জেলার শতাধিক উপজেলায় খাওয়ার পানির সংকট রয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট ক্রমাগত বাড়ছে। এসব কারণে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত পানির ট্যাংক যেন সোনার হরিণ। সেই সোনার হরিণ পেতে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি, গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। অনিয়ম আর দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে আছে উপকূলের মানুষের খাওয়ার পানির উৎস। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন এই অবৈধ বাণিজ্যে।
সুন্দরবন উপকূলের কাছে বসবাস করা হাজারো মানুষ খাওয়ার পানির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে পুকুর থেকে কাদামাখা লবণাক্ত পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে এখানকার পুকুরগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে ফিটকিরি দিয়েও সেই পানি পুরোপুরি পানযোগ্য করা যায় না।
অথচ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই সুবিধা পৌঁছেছে খুব কম মানুষের কাছে। কারণ, এসব প্রকল্পের প্রতিটি স্তরে রয়েছে অনিয়ম আর দুর্নীতি।