নিউজ আপলোড : ঢাকা , শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে দেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী। ৯টি থানা নিয়ে গঠিত এ জেলায় ধর্ষণ, হত্যা, মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এখন স্বাভাবিক কর্মকান্ডে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ও পারিবারিক কারণে ঘটছে নৃশংস হত্যাকান্ড। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে নোয়াখালীতে। গত ৫ বছরে নোয়াখালীতে হত্যাকান্ড ঘটেছে ২৭৮টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩১৫টি। ৭৯৯ জন নারী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিশু নির্যাতন ৪২টি। অপহরণ, পনবন্দী ২৬টি। সন্ত্রাসী হামলাসহ নানাভাবে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ জন। ডাকাতি ৩১টি, দস্যুতা ২৩টি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী হামলাসহ ৮০টি ঘটনা ঘটেছে। চুরি ৪৪৩টি। ৫ বছরে ১৩ হাজার ৫৯৪টি মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা করেছে। বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ৩২৫টিসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। সিআর নিষ্পত্তি করেছে ৪৭ হাজার ২৪৫টি। জিআর নিষ্পত্তি করেছে ২০ হাজার ৬২টি। আর সাজা পরোয়ানা ২৯৮৫টি তামিল করেছে পুলিশ। প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আসামিও গ্রেফতার করেছে। তবে জেলার সচেতন মহলের ভাষ্য, স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার, পেশীশক্তি, ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতার কারণে দিনে দিনে সন্ত্রাসের জনপদে রূপ নিচ্ছে নোয়াখালী। রাজনৈতিক মেরুকরণে ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণের কারণে পুলিশ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাধগ্রস্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না।

নোয়খালী চৌমুহনী এসএস কলেজের সাবেক উপধ্যাক্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক শামছুদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে সুশৃঙ্খল সমাজ উশৃঙ্খল সমাজে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সমাজে যুবা ও কিশোররা তাদের অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে না থেকে রাজনৈতিক ও ক্যাডারভিত্তিক বড় ভাইদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। সব সরকারের আমলেই রাজনৈতিক সরকারের দলীয় নেতাদের সমীহ করে পুলিশ প্রশাসন। কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তা ও সদস্যরা অপরাধীদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়। অনেক সময় বিচার প্রার্থীরা থানায় গিয়ে এসব কারণে সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। আইনি সহয়তার পরিবর্তে পুলিশ উল্টো বিচার প্রার্থীদের হয়রানি করে। আর এসব কারণে বাড়ে অপরাধ।

নোয়াখালীর স্থানীয়রা জানায়, গত বিএনপির আমলে নোয়খালীতে অস্ত্র ও মাদকের কারবার শুরু হয়। সে সময় স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নোয়াখালীতে অস্ত্রের মজুদ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ক্যাডার গ্রুপগুলো মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ার কারণে মাদকের কারবার শুরু হয়। বর্তমান সরকারের আমলে এসে অস্ত্র ও মাদকের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। অস্ত্র ও মাদকের কারবার বাড়ার সঙ্গে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো অপরাধগুলো ঘটতে শুরু করেছে। গেলো জাতীয় নির্বাচনের পর সুবর্ণ চরে এক নারীকে ভোট দেয়ার অপরাধে ধর্ষণের পর থেকে গত ৯ মাসে ধর্ষণ রীতিমতো মহামারী করোনার মতো রূপ নিয়েছে নোয়াখালীতে। নোয়াখালীতে নানা কারণে দরিদ্রতা বেশি। এছাড়া জমিসংক্রান্ত বিরোধসহ নানাকারণে পারিবারিক বিরোধও রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে গ্রাম্য সালিস ও তাদের সহযোগিতা দরিদ্রতা ও পারিবারিক সালিসের সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করে। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় মামলা হয় না। এছাড়া রাজনৈতিক আশ্রয়ে গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং গ্রুপসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যাডার বাহিনী এলাকা ভাগ করে নানা ধরনের অপরাধ ঘটায়। দখল থেকে শুরু করে প্রভাব বিস্তারে কাড্যার গ্রুপকে দিয়ে দাঙ্গা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে ব্যবহার করা হয়।

জেলার পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন সংবাদকে জানান, নোয়াখালীতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। চুরি, ডাকাতি, হত্যা অনেকটা কমে গেছে। অধিকাংশ হত্যাকান্ড পারিবারিক কারণে ঘটছে। এসব ঘটনায় পুলিশ ক্লু উদ্ঘাটন করে আসামিও গ্রেফতার করছে। সম্প্রতি ধর্ষণ বেড়ে গেলেও এর নেপথ্যের কারণ অধিকাংশ নারীর স্বামী বিদেশ থাকে। একাকি থাকার কারণে অনেক নারী অন্য পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এছাড়া আকাশ সংস্কৃতির কারণে এখন মোবাইলে পণ্য ভিডিও বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এছাড়া পারিবারিক বিরোধের কারণে অনেক সময় মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মামলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ১০টি গণধর্ষণের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ৫টি মামলা ভুয়া বলে প্রমাণ পেয়েছে। মাদক, অস্ত্রের ব্যবহার থাকলেও পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার, অস্ত্র উদ্ধার করছে। রেঞ্জের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, মামলা ডিটেকশনে একাধিকবার নোয়াখালী জেলা পুলিশ শ্রেষ্ঠ হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় বেশি আলোচিত হয়েছে নোয়াখালী। প্রত্যেকটি ঘটনা পুলিশ মামলা নিয়েছে এবং ক্লু উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতার করেছে। ধর্ষণের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে যেটা মনে হয়েছে, সামাজিক অবক্ষয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ধর্ষণের মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পতি হয় এবং আসামিদের দ্রুত সাজা হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে পুলিশের টিমগুলো কাজ করছে। অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক না কেন অপরাধ করলে কোন ছাড় নেই। ধর্ষণ রোধে এবং ধর্ষণকে না বলুন, সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং কয়েকটি উপজেলায় ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনমূলক অনুষ্ঠানও করেছেন। পুলিশ জানায়, রাজনৈতিকভাবে পুলিশের কাছে কোন হস্তক্ষেপ কেউ করতে পারছে না। কিশোর গাং গ্রুপসহ বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র মতে, নোয়াখালী জেলার অধিকাংশই চরাঞ্চল। এসব এলাকাভিত্তিক নানা ধরনের কিশোর গ্যাং গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাহিনী গড়ে তোলেন। এসব বাহিনীর সদস্যরাই বেশি অপরাধ করে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের ব্যানারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অপরাধী চক্র গড়ে উঠে। এলকাভিত্তিক এসব অপরাধ চক্র চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সেল্টার নেয়। নেতারাও তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে অপরাধীদের আশ্রয় দেয়। অধিকাংশ ঘটনায় রাজনৈতিক সেল্টার থাকায় বিচার হয়। মামলাও হয়না। অনেক সময় মামলা হলেও পুলিশ অপরাধীদের ধরতে পারে না। নোয়াখালীতে মাদকের আসামিসহ বিভিন্ন আসামি গ্রেফতারের সময় পুলিশের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার জন্য এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অবক্ষয়কেও দায়ী। ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধীদলীয় হোক, প্রত্যেক দলের নেতারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এক বিশাল কর্মী বাহিনী গড়ে তোলেন। আর এসব কর্মীরা যতই অন্যায় করুক না কেন, তারা দলের উচ্চ পর্যায়ের প্রশ্রয়ে আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।

নোয়াখালী জেলা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, নানা অপরাধের ঘটনায় গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৯ মাসে) মামলা হয়েছে ২১৩টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৮টি। বিভিন্নভাবে নারী নির্যতানের ঘটনা ঘটেছে ১২৬টি। শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩টি। অপরাধীদের হামলায় পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ৭ জন। ২০১৬ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৮টি। অন্যান্যভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৭৫ জন নারী। ২০১৭ সালে ৩৬ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১১৯ জন। ২০১৮ সালে ৫৬ জন নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৬৭ জন। ২০১৯ সলে ১৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১২ জন। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে চুরির ঘটনা ঘটেছে ৮০টি, ২০১৭ সালে ৬০টি, ২০১৮ সালে ২০১৮ সালে ৭০টি ২০১৯ সালে ১৩০টি । চলতি বছরে ৯ মাসে ঘটেছে ৯৪টি। ২০১৬ সালে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৫৯টি, ২০১৭ সালে ৪৯টি, ২০১৮ সালে ৫১টি, ২০১৯ সালে ৮৮টি। আর গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টম্বর) অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৪৪টি।

ধর্ষণ যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে নোয়াখালীতে

গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের হিসেব অনুযায়ী ৫৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসে (অক্টোবরে) একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গ্রেফতার হয়নি। আবার অনেকে গ্রেফতার হলেও জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিকটিম ও তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। এমন ঘটনাও রয়েছে ধর্ষণের মামলা করে প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে কেউ কেউ। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে সুবর্ণচরে। সেখানে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে চার সন্তানের জননীকে (৪০) গণধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ওই নারী একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ভোট দেয়ায় প্রতিপক্ষ দলের লোকজন ক্রোধ মিটাতে ওই নারীকে গণধর্ষণ করে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ওই গণধর্ষণের ঘটনায় গোটা দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ অধিকাংশ আসামিদের গ্রেফতারও করে। বর্তমানে ১১ জন আসামি জেলে রয়েছে। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ১৮ জানুয়ারি কবিরহাট উপজেলায় বিএনপি-সমর্থক স্বামী কারাগারে থাকার সুযোগে তিন সন্তানের জননী (২৯) গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ মূল আসামিদের নাম মামলা থেকে বাদ দেয়। প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জামিনে বেরিয়ে ওই নারীকে অব্যাহত হুমকির ঘটনায় ওই নারী এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ৩১ মার্চ রাতে স্বামীকে আটকে রেখে সূবর্ণচরে ছয় সন্তানের জননীকে (৩৫) গণধর্ষণ করা হয়। উপজেলা নির্বাচনে পরবর্তী সহিংসতা পছন্দের ভাইস চেয়ারম্যানকে ভোট দেয়ায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন এ নৃসংসতা ঘটায়। মামলা হলেও আসামিরা এখন জামিন নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত ৪ মে কোম্পানীগঞ্জে ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে যাওয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের পর খালের পানিতে চুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে এর আগে ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী (১৩), ১০ মার্চ কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়নে নবম শ্রেণীর ছাত্রী (১৬), ২৭ মার্চ সেনবাগে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক কিশোরী, ৬ এপ্রিল সেনবাগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী (৯), ১৭ এপ্রিল সেনবাগে স্কুলছাত্রী (১০), ১৮ এপ্রিল একই উপজেলায় সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী (১৪), ২৭ এপ্রিল সদর উপজেলায় মাদ্রাসার ছাত্রী (১৪), সুবর্ণচরে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী (১৪), ৩০ মে বেগমগঞ্জে সাত বছরের শিশুকে. আগস্টে সেনবাগে এক প্রতিবন্ধী শিশুকে। সোনাইমুড়িতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। গত ২০১৯ সালের ২ মার্চ রাতে মাকছুমুল গ্রামের বসতঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আলাউদ্দিন। ধর্ষককে হাতেনাতে ধরার পরও সঠিক বিচার না পেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে একই বছরের ৩ মার্চ ওই নারী বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। চলতি মাসে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। এমন কোন দিন নেই যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে না। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ মাসে মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের মামলা হয়েছে জুনে। চলতি মাসে মাসে ১৮টি মামলা হয়েছে। এর আগের মাসে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা হয় ১১টি। এছাড়া এপ্রিলে ১৬, মার্চে ৯, ফেব্রুয়ারিতে ৫টি ও জানুয়ারিতে ৩টি মামলা হয়।

মাদক থেকে বাড়ছে যত অপরাধ

নোয়াখালীর স্থানীয়দের মতে, নোয়খালীতে যত অপরাধ তার মূলে রয়েছে মাদক। জেলায় মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি। স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জেলার আনাচে- কানাচে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকের কারণে ধর্ষণ, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চঁদাবাজিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যে ঘটছে না। রাজনৈতিকভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী। জেলায় যেসব সিন্ডিকেট মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের পিছনে রাজনৈতিক শক্তি কাজ করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। নোয়াখালীতে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। জেলা পুলিশের হিসেব অনুযায়ী ২০১৬ থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত (৪ বছর ৯ মাসে) নোয়াখালীতে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৫ টাকার মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৬ হাজার ৩২৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৮টি। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ইয়াবা ১,৯৬,৭৪১ পিচ, গাঁজা ৪৮৩ কেজি ৭২১ গ্রাম, চোলাইমদ ১৪০৮.৬২৫ লিটার ও ১৮ বোতল, ফেন্সিডিল ১৯৩৭ বোতল, হেরোইন ২ কেজি ৩৫৮ গ্রাম, বিয়ার ১২৩৯ ক্যান, এলকোহল ৭.১৩ লিটার ও ১৮ বোতল, বিদেশি মদ ৪২০ বোতল ও ৪০.১২৫ লিটার, হুইস্কি ৩৭ বোতল ও ০৭.৫ লিটার, ভোদকা ৩ বোতল, স্পিরিট ২৪ বোতল, এভেনা স্যাটাইবা ২০ বোতল, আফিম ২০ গ্রাম।

পারিবারিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকান্ড

সম্প্রতি সুবর্ণচরে এক নারীকে হত্যার পর ৫ টুকরা করা হয়। পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ক্লু উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে। প্রথমে এটিকে পেশাদার খুনি কর্তৃক হত্যকান্ড মনে করা হলেও পুলিশের সেই ধারণা পাল্টে যায়। পরে দেখা যায় সৎ ছেলেই তার মাকে নৃশংসভাবে ভাড়াতে কসাই দিয়ে হত্যা করে ৫ টুকরা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। এর আগে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নোয়াখালীতে বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী গত ৪ বছর ৯ মাসে হত্যকান্ড ঘটেছে ৭৭৮টি। এরমধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটেছে ৫টি। রাজনৈতিক ৫টি হত্যাকান্ডের মধ্যে ৩টিই হয়েছে ২০১৭ সালে। বাকি দুটি হয়েছে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে।

ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতিতে গ্যাং কালচার

নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড এমনকি পাড়া মহল্লাভিত্তিক রয়েছে একাধিক গ্রুপ। কিশোর গাং, ক্যাডার বাহিনীরা নানা নামে পরিচিত। এসব গ্যাং গ্রুপগুলো এলাকা ভাগ করে নিয়ে মাদক, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির পাশাপাশি হত্যাকান্ডেও অংশ নেয়। পারিবারিক সহিংসতায়ও ব্যবহার হয় ক্যাডার গ্রুপ। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি ও গ্যাং কালচারের কারণেও নোয়াখালীতে নানা অপরাধ ঘটছে বলে অভিমত স্থানীয়দের।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews