‘কাঁচা খেজুরের রস পানে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। খেজুরের রস যেভাবেই সংগ্রহ করা হোক, তা বাদুর পান করলেই সে রসে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, রাতে বাদুর কাঁচা খেজুর রস পান করতে আসে এবং বাদুর রস পান করার সাথে রসে প্রস্রাব করে দেয় এবং মুখ থেকে লালা ফেলে যায়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া না হলে। এ কারণে কোনোভাবেই কাঁচা খেজুর রস পান করা যাবে না।’

মঙ্গলবার এভাবেই সাংবাদিকদের বলছিলেন জাতীয় রোগ তত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে নিপাহ ভাইরাস ও এর সংক্রমণবিষয়ক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান কর্তৃক গত ২৫ জানুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউটে খেজুর রস উৎসবে রস পান করছেন প্রকাশ্যে এবং এটা মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি যা করেন তা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে যায়। তিনি সেদিন কাঁচা খেজুর রস পান করে রস উৎসবের উদ্বোধন করেছেন এটা মিডিয়ায় দেখানো হয়েছে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাধারণ মানুষ কাঁচা খেজুর রস পান করা শুরু করতেই পারে; কিন্তু কাঁচা খেজুর রস পান করা নিরাপদ নয়। এতে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণে পানকারীর মৃত্যু হতে পারে।

নিপাহ ভাইরাস এতই মারাত্মক যে, যথাযথভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে আক্রান্তের সংস্পর্শে কেউ এলে তিনিও সংক্রমিত হতে পারেন। আবার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক, নার্স অথবা সেবা দেয়ার জন্য যারা থাকেন তাদেরও বিপজ্জনক এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবেন তাদেরও রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে তিনি বলেন, আমাদের গাইড লাইন অনুসরণ করে নিপাহ আক্রান্ত রোগীকে সব ধরনের সেবা দেয়া যাবে, কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশে গত ১৯ বছরে শীতকালে শুধু খেজুরের রস পান করে ২১১ জন মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩০৩ জন। এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৬৯.৬৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২০১১ সালে ৪২ জন এবং মারা গেছে ৩৬ জন। ২০১১ সালে মৃত্যুর হার ছিল ৮৫.৭১ শতাংশ। আবার ২০১০ সালে ১৮ জন আক্রান্ত হলে মারা যায় ১৬ জন। ২০১০ সালে মৃত্যুর হার ছিল ৮৮.৮৯ শতাংশ। গত ১৯ বছরে ২০০২, ২০০৬, ২০০৯, ২০১৬ সালে কেউ মারা যায়নি। ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সালে কেউ অবশ্য আক্রান্ত হয়নি। ২০০৯ সালে চারজন আক্রান্ত হয়েছিল। তিনি জানান, সচেতন হওয়ার কারণে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে দুই ও তিনজন আক্রান্ত হয় এবং ওই দুই বছরে মারা যায় একজন করে মোট দুইজন। চলতি শীত মওসুমে মাত্র দুইজন আক্রান্ত হয় এবং একজন মারা গেছে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মাছের জাল অথবা বাঁশের বানা দিয়ে খেজুরগাছকে আচ্ছাদিত করেও দেখা গেছে সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। সে ক্ষেত্রেও কাঁচা খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাস পাওয়া গেছে। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, কাঁচা খেজুর রস পান করা একটি সংস্কৃতি হয়ে গেছে, কাঁচা খেজুর রসে স্বাদ বেশি; কিন্তু জীবন রক্ষার্থে রস সিদ্ধ করে পান করতে হবে। রস গরম করা হলে ভাইরাস আর সক্রিয় থাকে না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews