১ বছরে এত গরু-ছাগল গেল কোথায়

গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এতই বেড়েছিল যে, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা কমেছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি। অথচ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত বছরের মে মাসে দেশে গরু-ছাগলসহ গবাদি পশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার খবর দিয়েছিল। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এত পশু গেল কোথায়? এক বছরে দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা এত কমার ঘটনাকে অস্বাভাবিক মনে করছেন প্রাণিসম্পদ-সংশ্লিষ্টরা। 

গতকাল রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ ও সরবরাহের বিষয় তুলে ধরেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি জানান, এবার কোরবানির হাটের জন্য গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্য প্রজাতির। এ বছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে ধারণা করছে মন্ত্রণালয়। গত বছর প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। 

কুমিল্লা সদরের খামারি মোফাজ্জল হোসেন সজীব বলেন, প্রতিবছর ২৫-২৬ লাখ পশু অবিক্রীত থেকে যায়। ২০২৪ সালের শেষ দিকে দেশে বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তেমন পশু বিক্রি হয়নি। গত বছরের চেয়ে পশু কমার যে দাবি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর করছে, তা অনেকটাই টেকে না। সংখ্যা যাই হোক– এই খামারি বলছেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গবাদি পশুর দানাদার খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনও বাড়তি দামেই দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হচ্ছে খামারিদের। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, শ্রমিক খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে কোরবানিযোগ্য পশুপালন অনেকটাই ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় খামারিদের পশুপালনে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় রয়েছে। সেসব কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা নির্ধারণ করে অধিদপ্তর। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই হিসাব তৈরি করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মূলত পশু কোরবানির হিসাব করে থাকে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার অন্তত ১ শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যেমন– একটি উপজেলায় ১০০টি গ্রাম থাকলে তার মধ্যে অন্তত একটি গ্রামে কোরবানি দেওয়া পশুর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে।

এত সংখ্যক গরু-মহিষের সংখ্যা কমলো কীভাবে– এমন প্রশ্নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা পর্যায় থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে তথ্য পাঠান, তা সব সময় সঠিক হয় না। কারণ এত অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে এত বৃহৎ তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে বড় খামারিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও পারিবারিকভাবে পালন করা গবাদি পশুর সঠিক হিসাব পাওয়া তাদের জন্য কঠিন। তা ছাড়া চরে যে প্রচুর সংখ্যক গবাদি পশু পালন করা হয়, সেখান থেকেও সঠিক তথ্য আসে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অনুমানভিত্তিক তথ্য আসে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews