শিশু রাইফার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ কেন নয় ॥ হাইকোর্ট



অনলাইন রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের ‘অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায়’ শিশু রাফিদা খান রাইফার মৃত্যর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন ‘যথাযথ’ ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।

সেইসঙ্গে ‘অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার’ কারণে হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং চিকিৎসার ‘অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কেন নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

রাইফার বাবা সাংবাদিক মোহাম্মদ রুবেল খানের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল জারি করে।

আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল), বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট তিন চিকিৎসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সাংবাদিক রুবেল খান গত ৯ আগস্ট হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন। মঙ্গলবার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ এনাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

তাজুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ভুল বা অপ চিকিৎসা বা চিকিৎসকের অবহেলার কারণে কারো মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের নির্ধারণের ব্যপারে দেশের প্রচলিত কোনো আইনে কোনো বিধান নেই।

“বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং বিধান আছে। ভুল বা অপ চিকিৎসায় কারো মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ কত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ কত হবে তা সুনির্দিষ্ট করা আছে কোনো কোনো দেশে।

“আমাদের দেশে এ ধরনের নীতিমালা না থাকায় আদালতগুলোকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে এত লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আদালতগুলো তাদের এখতিয়ার এবং বিবেচনাকে প্রয়োগ করে এ ধরনের আদেশ দিতে হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টা যদি আইনে পরিণত করা যেত তাহলে বিচার করাটা সহজ হত এবং ভুক্তোভোগীরাও আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন। আর এ ধরনের একটি নীতিমালা হলে ভুল, অপচিকিৎসা বা চিকিৎসকের অবহেলা বন্ধ হত।”

দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।

‘ভুল চিকিৎসায়’ তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি ওই ঘটনার তদন্ত করে।

সিভিল সার্জনের তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দেয়, তাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এই তিন চিকিৎসক হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত এবং ডা. শুভ্র দেব। তাদের মধ্যে দেবাশীষ ও শুভ্রকে চাকরিচ্যুত করার কথা জানায় ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ।

সিভিল সার্জনের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না।

“শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যাহা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।”





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews