মদ, জুয়া, লটারী, সামাজিক অনাচার এবং মারাত্মক অপরাধ। মানুষকে অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করার জন্যে যে সমস্ত জিনিস উদ্বুদ্ধ এবং উৎসাহিত করে, সমাজকে করে ক্ষত-বিক্ষত, যুবসমাজ হয় বিপদগামী, তারই অপর নাম মদ, জুয়া ও লটারী। এই তিনটি জিনিসকে আল-কুরআনে অশ্লীল ও শয়তানের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহপাক মদ, জুয়া ও লটারীকে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, (হে রাসূল (সা.)! মানুষ আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যেই রয়েছে মহাপাপ। যদিও তাতে মানুষের জন্যে কিছুটা উপকারিতাও রয়েছে কিন্তু তাতে উপকারের চাইতে পাপের মাত্রাই বেশি। (২ সূরা বাক্বারা : ২১৯)।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদী (মূর্তি) ও লটারী এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ। তোমরা তা হতে বিরত থাক। আশা করা যায়, তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে। (৫ সূরা মায়িদা : ৯০)।
মদ, জুয়ার প্রতি শয়তান আহ্বান জানায়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর যিকির ও সালাত হতে তোমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। তাই তোমরা এসব জিনিস হতে বিরত থাকবে কি? (৫ সূরা মায়িদা : ৯১)।
দুনিয়াতে মদ পানকারী আখেরাতের সমূহকল্যাণ থেকে বঞ্চিত। পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে লোক দুনিয়ায় মদ পান করল, অত:পর তা থেকে তওবা করল না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। (নাসায়ী-৫৬৭১, ইবনে মাজাহ-৩৩৭৩)।
মদের আধিক্য পাওয়া কেয়ামতের আলামত। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের কাছে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করব, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি এবং আমার পরে তোমাদের কাছে কেউ তা বর্ণনা করেনি। আমি তাঁর কাছে শুনেছি যে, কিয়ামতের আলামতসমূহের অন্যতম হচ্ছে ইলম উঠে যাবে, মূর্খতা প্রকাশ পাবে, যিনা বিস্তৃৃত হবে, মদ্যপান প্রচলিত হবে, পুরুষ (এর সংখ্যা) হ্রাস পাবে, নারীরা অবশিষ্ট থাকবে, এমনকি পঞ্চাশজন নারীর জন্য একজন পুরুষ তত্তাবধায়ক থাকবে। (মুসলিম ৭ম অ: ইল্ম পৃ: ১৮০)।
মদের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তির উপর লা’নত। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদের সাথে সম্পর্কিত দশ শ্রেণির লোকদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন, তারা হলো : ১. মদ প্রস্তুতকারী ২. মদ প্রস্তুতের পরামর্শদাতা ৩. মদ পানকারী ৪. মদ বহনকারী ৫. যার নিকট মদ বহন করা হয় ৬. মদ পরিবেশনকারী ৭. মদ বিক্রেতা ৮. মদের মূল্য গ্রহণকারী ৯. মদ ক্রয়-বিক্রয়কারী ১০. যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (ইবনে মাজাহ-৩৩৮১, তিরমিযী- ১২৯৫)।
এ দেশে ৯২ভাগ মুসলমান। এমন দেশে গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকা ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ায় যা উঠে এসেছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। রথি-মহারথিরা এদেশের বিভিন্ন ক্লাবে যে হারে ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) বসিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে দেশের শেয়ার বাজারের চাইতেও বড় লেন-দেন হয়েছে এসব আসরে। রাজধানীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে র্যাব-পুলিশের একের পর এক অভিযানে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কারা ক্যাসিনো সম্রাট, কারা ক্যাসিনো খেলা আমদানি করেছেন, কারা টাকার ভাগ পেতেন তা এখন ওপেন সিক্রেট। সব তথ্য-উপাত্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। অভিযান চলছে কিন্তু যারা ক্যাসিনোর মূল হোতা সেই খলনায়কেরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এই শুদ্ধি অভিযান কি যথাযথ চলবে? অবশ্য সরকারী দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলেই রাঘববোয়ালদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা আশা করতে চাই, সরকার এ ব্যাপারে একটা ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে; শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রাখবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, গবেষক
Like
Loading...
The Post Viewed By: 27 People