মোহামেডানের ক্লাব লাইসেন্স ‘প্রক্রিয়াধীন’ থাকায় আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখার সমীকরণ অবশ্য সহজ ছিল আবাহনীর জন্য। ড্র হলেই চলত, তবে জিতেই তা মিলিয়ে নিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। দ্বিতীয় স্থানে থেকে ২০২৪-২৫ মৌসুমের লিগ শেষ করতে কিংসের জন্য কেবল জয়ই যথেষ্ট ছিল না, আবাহনীকেও হারতে হতো ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে। শেখ মোরসালিনের হ্যাটট্রিকে নিজেরা জিতলেও, অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে না আসায় তৃতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করল ভ্যালেরি তিতের দল। মঙ্গলবার লিগের অষ্টাদশ ও শেষ রাউন্ডের চারটি ম্যাচ হয়েছে। আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা মোহামেডান এদিন বিশাল ব্যবধানে জিতেছে। গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে সুলেমানে দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবকে ৬-১ খড়কুঁটোর মতো উড়িয়ে আসর শেষ করেছে সাদাকালো জার্সীধারীরা। দলের জয়ে পাঁচ গোল করেছেন দিয়াবাতে; অন্য গোলটি সুমন দেওয়ানের। ১৮ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করল চ্যাম্পিয়নরা। ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হলো আবাহনী। ৩২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় কিংস। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের পরের আসরে আবাহনীর খেলার সুযোগ নির্ভর করবে মোহামেডানের লাইসেন্স পাওয়া, না পাওয়ার ওপর।

কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ব্রাদার্সকে ৩-০ গোলে হারায় আবাহনী। এমেকা ওহবাহ-পাপন সিংদের একাধিক প্রচেষ্টা পোস্টে প্রতিহত না হলে আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত মারুফুল হকের দল। চতুর্দশ মিনিটে এমেকার বাম পায়ের শট ক্রসবার কাঁপায়। বক্সে অপ্রস্তুত শাহরিয়ার ইমন হতাশা বাড়ান ফিরতি বলে হেড করতে ব্যর্থ হয়ে। ২৪তম মিনিটে আবাহনী ম্যাচের ডেডলক খোলে আসাদুজ্জামান বাবুলের গোলে। বক্সের বাইরে থেকে দৃষ্টিনন্দন জোরাল শটে উপরের কোণা দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।বিরতির আগে ব্যবধান দ্বিগুণের দারুণ সুযোগ মোহম্মদ হৃদয় নষ্ট করেন ছোট বক্সের ভেতর থেকে দুর্বল শট নিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এমেকার শট ফের প্রতিহত হয় পোস্টে। ৫০তম মিনিটে কর্নারের পর সুযোগসন্ধানী হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রাফায়েল আগুস্তো। ৭৪তম মিনিটে পাপন সিংয়ের শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে। শেষ দিকে মিরাজুল ইসলামের লক্ষ্যভেদে জয়ের পাশাপাশি লিগ রানার্সআপ হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় আবাহনীর।আরেক ম্যাচে, বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শেখ মোরসালিনের হ্যাটট্রিকে আগেই লিগ থেকে অবনমিত হয়ে যাওয়া ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে কিংস। অষ্টম মিনিটে কিংসকে চমকে দিয়ে এগিয়ে যায় ওয়ান্ডারার্স। দেসিয়েল, তপু ও তারিক-তিন ডিফেন্ডারের প্রতিরোধ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার পরই বল হারান জোবায়ের, প্রতিহত হওয়া বল ফিরতি শটে জালে জড়িয়ে দেন সাদিক আহমেদ।

৪০তম মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে সমতায় ফেরে কিংস। লিগে এই ফরোয়ার্ডের গোল হলো ১১টি; স্থানীয়দের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। একটু পরই মোরসালিন হেডে এগিয়ে নেন কিংসকে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান আরও বাড়ান মোরসালিন। ৪৯তম মিনিটে শহীদুল ইসলাম সুমনের গোলে ম্যাচ জমিয়ে তোলে ওয়ান্ডারার্স। তবে ৬৬তম মিনিটে মোরসালিন হ্যাটট্রিক পূরণ করলে ফের চালকের আসনে বসে যায় কিংস। ৮০তম মিনিটে রাব্বী হোসেন রাহুলের চোখ জুড়ানো গোল জয়ের পথে রাখে কিংসকে। শেষ দিকে ব্যবধান কমান মানজুরুল করিম। মুন্সিগঞ্জে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন স্যামুয়েল বোয়াটেং। ঘানার এই ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যে বাংলাদেশ পুলিশকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটি। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছে পুরান ঢাকার দলটি। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই চলছিল বোয়াটেং ও দিয়াবাতের মধ্যে। রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ডের পিছে পিছে ছুটছিলেন মোহামেডান অধিনায়ক। শেষ রাউন্ডে পাঁচ গোল করে বোয়াটেংকে ছুঁয়ে ফেলেছেন দিয়াবাতে। দুজনেরই গোল ১৯টি করে। স্থানীয়দের মধ্যে আল আমিন ও রাকিবের গোল ছিল ১০টি করে। ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করে পুলিশ এফসির ফরোয়ার্ডকে পেছনে ফেলেছেন রাকিব। লিগের বাকি আর একটি ম্যাচ। আগামী বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে ফর্টিস এফসি ও চট্টগ্রাম আবাহনী।