গুগলের কঠোর সমালোচকরাও এই সার্চ ইঞ্জিনটি ব্যবহার করেই তাদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করেন। এমনকি বিদেশ ভ্রমণ কিংবা বিনোদন পেতেও তাঁরা গুগলের বিভিন্ন সেবাই গ্রহণ করে থাকে। সমালোচকরা যা-ই বলুন না কেন প্রকৃতপক্ষে গুগল ছাড়া আমাদের জীবন খুব বেশি ক্লান্তিকর হয়ে পড়বে। শুধু গুগল নয়, অন্যান্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। সেবাগুলোর বিনিময়ে আমরা টেক জায়ান্টদের যথেষ্ট পরিশোধও করে থাকি। প্রকৃতপক্ষে উন্নত পরিষেবাগুলো ব্যবহার করে আমরা তাঁদের মূলধনের একটি অংশই তৈরি করে দিচ্ছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর বিনিময়ে গুগল আমাদের কী দিচ্ছে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে রীতিমতো বিক্রি করছে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুগলে সময় ব্যয় করছি। একই সঙ্গে বিভিন্ন পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। আমাদের নিজেদের অজান্তেই এটা হচ্ছে। ১৯৭০ এবং ৮০’র দশকে, আমরা যখন টেলিভিশনে চলচ্চিত্র বা বিভিন্ন ম্যাচ দেখতাম, এর মধ্যে বিজ্ঞাপন শুরু হলে খুব বিরক্ত হতাম। কিন্তু গুগলের ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে না। তারা আমাদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এবং তা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। আমাদের পণ্য বানিয়েই তারা বিপুল পরিমাণ আয় করছে। শুধু গুগল নয়, ফেসবুক, টুইটারসহ সব টেক জায়ান্টরাই একই কাজ করছে।

প্রচলিত সরকারব্যবস্থায় গুগলের মতো টেক জায়ান্টদের ওপর শুধু ট্যাক্সই আরোপ করা হয়। কিন্তু টেক জায়ান্টরা তাদের দক্ষ হিসাবরক্ষকদের সাহায্যে খুব সহজেই বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে গুগলকে এটা বুঝতে হবে যে, তাদের মূলধন শুধু তারা নিজেরাই গঠন করে না। বরং তাদের সেবাগুলোর প্রত্যেক ব্যবহারকারীও প্রতিষ্ঠানটির একজন শেয়ারহোল্ডার।

গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে যখন আমরা কোনো শব্দ, ধারণা বা পণ্য সন্ধান করি অথবা গুগল ম্যাপের মাধ্যমে যখন কোনো স্থানে যাই, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা গুগলের মূলধন সমৃদ্ধ করছি। নীতিগতভাবে, গুগলের প্রত্যেক ব্যবহারকারীই প্রতিষ্ঠানটির একজন সত্যিকারের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে দাবি করতেই পারে।

বিগ টেকের মূলধনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জনসাধারণের মাধ্যমে গঠিত হলেও স্বতন্ত্র অবদান হিসেব করাটা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে। এর একটি সমাধান রয়েছে। গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা একটি পাবলিক ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে জনগণকে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দিতে পারে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য যেমন ফান্ড গঠন করে থাকে। যা থেকে সব সন্তানই লাভবান হয়। পাবলিক ট্রাস্ট ফান্ডও সেরকমই জনগনকে সাহায্য করবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতেও তা প্রভাব ফেলবে।

আমরা নিঃসন্দেহে গুগলের থেকে অনেক সুবিধা ভোগ করছি। এর বিনিময়ে আমরা তাদের মূলধনের যোগানও দিচ্ছি। মুলধনের সেই অংশটির ওপরে কোনো নির্দিষ্ট মানুষের নয়, বরং এটা সর্বজনীন মৌলিক আয়ের ভিত্তি হওয়া উচিৎ।

লেখকঃ গ্রিসের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews