আদর আজাদ। অভিনেতা ও মডেল। গত ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘লিপস্টিক’। কামরুজ্জামান রোমান পরিচালিত নতুন সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে
সমকাল: তৃতীয় সপ্তাহে ‘লিপস্টিক’-এর সিনেমা হলের সংখ্যা বেড়েছে। কেমন লাগছে?
আদর আজাদ: খুই ভালো লাগছে। সিনেমার গল্প পড়ে প্রথমবারই আমার মনে হয়েছে, এটি আসলেই দারুণ একটি সিনেমা হবে। এটি দেখতে দর্শক হলে যাবে। সিনেমার প্রধান আকর্ষণ গল্প। দর্শক পছন্দ করবে– এমন রসদ আছে এতে। আমি মনে করি, গল্পের টানেই দর্শক হলমুখী হচ্ছেন। আমাদের টিমের আত্মবিশ্বাস ছিল যে হল ক্রমেই বাড়বে, সেটাই হচ্ছে। এখন সিনেমাটি ৩২টি হলে চলছে। এই পথচলায় সংবাদমাধ্যমের বেশ সহযোগিতা পেয়েছি। আশা করছি, আগামীতে হলের সংখ্যা আরও বাড়বে।
সমকাল: হল মালিকরাও সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আদর আজাদ: দেখুন, দিন শেষে হলের মালিকরা ব্যবসাটাই চান। ‘লিপস্টিক’-এর ট্রেলার-টিজার দেখে নওগাঁর ‘তাজ’ সিনেমা হলের তরফ থেকে কয়েকজন জয়পুরহাটে এসেছিলেন সিনেমাটি দেখতে। ফিরেই তারা সিনেমাটি তাদের হলে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এভাবে অনেক হল মালিকই ভিজিট করে সিনেমাটি দর্শককে দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রতিটি হলের নির্দিষ্ট কিছু দর্শক থাকে। তারাই সিনেমাটি নিয়ে সর্বত্র বলছেন। ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সিঙ্গেল স্ক্রিনে রিপিট দর্শক বেশি হয়। প্রথম দিন থেকেই আমরা রিপিট দর্শক পাচ্ছি। হল মালিক সমিতির কিছু নেতাও সিনেমাটি নিয়ে ইতিবাচক কথা বলছেন। সব মিলেই একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে।
সমকাল: সিনেমাটি দেখতে এরই মধ্যে হলে হলে গিয়েছেন নিশ্চয়ই...
আদর আজাদ: লায়ন, পূরবী, ঝংকারসহ বেশ কয়েকটি হলে গিয়েছিলাম। যে মানুষটিকে সবসময় স্ক্রিনে দেখা যায়, তাঁকে কাছে পেয়ে হলভর্তি দর্শক উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। সরাসরি দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ হয়েছে। দর্শক কিন্তু এখন সারা পৃথিবীর সিনেমা দেখেন। দর্শক এ সিনেমায় কোনো খুঁত খুঁজে পাননি। এমনটিই আমাদের বলেছেন কেউ কেউ। দর্শকের এমন মন্তব্য আমরা আরও বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
সমকাল: ‘লিপস্টিক’-এর দর্শক টানতে টিকেটের সঙ্গে বিরিয়ানিও দেওয়া হয়েছে। দর্শককে হলে আনার এই কৌশল কীভাবে দেখছেন?
আদর আজাদ: যার যার ব্যবসা সে করবেই। আমরা বাধা দিতে পারব না। কেউ লোকসান দিয়ে তো কিছু করবে না। এটা তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সঙ্গে আমাদের টিমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুনেছি, ওই হলটি ১০ বছর বন্ধ ছিল। ১৯৮৪ সাল থেকে হল মালিক সিনেমা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শিল্পমনা মানুষ তিনি। এ কারণেই হয়তো ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন। শুনেছি তিনি ভালো সাড়াও পেয়েছেন। তিনি টিমের পক্ষ থেকে বাহবা পেতেই পারেন। এতে দোষের কিছু দেখছি না।
সমকাল: সিনেমাটি নিয়ে অনেক পলিটিকসের শিকারও হতে হয়েছে...
আদর আজাদ: পলিটিকস সব জায়গাতেই আছে। নিজের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও আছে। পলিটিকস করে তো হলের সংখ্যা কেউ কমাতে পারেনি। সুতরাং এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় নেই।
সমকাল: একটি সাক্ষাৎকারে পূজা এ সিনেমাকে ক্যারিয়ারের এক নম্বর সিনেমা বলেছেন। আপনিও কী তাই বলবেন?
আদর আজাদ: এটি আমার ক্যারিয়ারেরও এক নম্বর সিনেমা। সুন্দর গল্প, চিত্রনাট্য ও মনোরম লোকেশনে সিনেমার দৃশ্য ধারণ হয়েছে। ফুল কমার্শিয়াল একটি প্যাকেজ ছিল। ‘লিপস্টিক’-এর জার্নির মতো এ রকম আর কোনো সিনেমার জার্নি হবে কিনা জানি না।
সমকাল: ঈদের অন্য সিনেমাগুলো দেখেছেন?
আদর আজাদ: লিপস্টিকের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে। নিজের অভিনীত সিনেমার বাইরে অন্যান্য সিনেমা দেখার ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, সপ্তাহ দুয়েক পরে অন্য সিনেমাগুলো দেখার চেষ্টা করব।
সমকাল: অনেকেই বলছেন ঢালিউডে আদর-পূজা জুটির সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?
আদর আজাদ: হ্যাঁ, এরই মধ্যে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এই পথচলা যদি সফলতার সঙ্গে দীর্ঘ হয়, তবেই বোঝা যাবে আমরা জুটি হিসেবে সম্ভাবনাময় হব কিনা। সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে।
সমকাল: শুনেছি রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পাবে। বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরছে বলে মনে করছেন?
আদর আজাদ: ঈদ উৎসবে বেশি বেশি সিনেমা মুক্তিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। ইদানীং হলের দর্শক সাড়া দেখেই বোঝা যায় আমাদের সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। এটি অব্যাহত থাকলেও সিনেমার সুদিন অচিরেই ফিরে আসবে। গত ঈদের সব সিনেমাই দর্শক কম-বেশি দেখেছেন। সিনেমা নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা। এই ধারা অব্যাহত থাকুক– একজন শিল্পী হিসেবে আমার এটাই চাওয়া।
সমকাল: দর্শকের উদ্দেশে কী বলার আছে?
আদর আজাদ: দর্শক যেভাবে সিনেমাটি পাশে ছিলেন, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। যারা সিনেমাটি দেখেননি, তারা দেখে লিপস্টিক ফ্যামিলি হয়ে যাবেন– এটা আমার ধারণা। হলে এসে যারা সিনেমা দেখেন, সেইসব দর্শকের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।