যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

দমনপীড়ন সত্ত্বেও ‘ছাত্র বিপ্লব’ অব্যাহত

দমনপীড়ন সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি ‘ছাত্র বিপ্লব’ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বিক্ষোভকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ২ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দাঙ্গা পুলিশ দিয়ে দমন করা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি। তবে পুলিশি বর্বরতা, গ্রেপ্তার ও ইহুদিবাদীদের আক্রমণের মধ্যেই গাজায় আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র ও শিক্ষকরা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পর ফিলিস্তিনপন্থি ক্যাম্প যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন চলছে। তাঁবু টানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত অর্ধশত গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় শুধু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সর্বশেষ শুক্রবার নিউইয়র্ক পুলিশ শহরের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে (এনওয়াইইউ) ফিলিস্তিনপন্থি ক্যাম্পে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শুরু করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করায় তাঁর নিন্দা করছেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাইডেন তাঁর ইসরায়েলপ্রীতির কারণে পুরো তরুণ প্রজন্মের ভোটার হারানোর ঝুঁকি নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে বলেন, ক্যাম্পাসে অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

আলজাজিরা জানায়, গত সপ্তাহে প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুসারে ৩০ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের অনুমোদনের রেটিং মাত্র ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সিএনএনের সাম্প্রতিক জরিপেও দেখা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বিষয়ে বাইডেনের কমর্কাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির ৩৫ বছরের কম বয়সী ৮১ শতাংশ ভোটার।

অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সব নগরীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা গত দুই সপ্তাহে শিবির বসিয়েছেন। রয়টার্স জানায়, দেশটির শীর্ষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছে শত শত বিক্ষোভকারী।

গাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা গত সপ্তাহে প্রধান হলের বাইরে শিবির স্থাপন করে। সেখানে প্রায় ৫০টি তাঁবু বসিয়ে প্রতি রাতে ১০০ জন বিক্ষোভকারী ঘুমাচ্ছেন।  

এ ছাড়া মেলবোর্ন, ক্যানবেরা এবং অন্য শহরগুলোতেও একই ধরনের শিবির স্থাপন করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থানে যায়নি। ‍অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ধরপাকড় হয়নি। পুলিশের উপস্থিতিতেও বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

শুক্রবার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মার্ক স্কট বলেছেন, ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ শিবির ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকতেই পারে। কারণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের মতো সহিংসতা দেখা যায়নি।

গত ১০ দিনে অস্ট্রেলিয়ার আশপাশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদ শিবির দেখা গেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচক হয়ে উঠেছে।

প্যারিসে উচ্ছেদ অভিযান

প্যারিসের খ্যাতনামা সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটির অভ্যন্তরে প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী তাঁবু গেড়ে বসেছিলেন। তাদের অনেকেই সেখানে রাতে অবস্থান করতেন। গতকাল পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে।

দাঙ্গা পুলিশ সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটির মূল হলটি খালি করে দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘শেম’ বলে চিৎকার করেন এবং ‘মুক্ত প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান দেন। এপ্রিলের শেষ দিকে সায়েন্সেস পো এবং সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ শুরু হয়।

ভারতেও বিক্ষোভ 

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়ায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নয়াদিল্লির মর্যাদাপূর্ণ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির ক্যাম্পাস সফরের আগে এ বিক্ষোভ করা হয়। পরে তাঁর সফর স্থগিত করা হয়েছে বলে জানায় সিএনএন।

প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের সংঘটিত সন্ত্রাসবাদ এবং গণহত্যায় জড়িত দেশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী প্রশাসন এবং কর্মীদের জন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে না জেএনইউ।’ ছাত্র সংসদ কলাম্বিয়ার প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।

জেএনইউ ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। 

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কানাডাজুড়ে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্প স্থাপন করেছে।

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের চাকরির প্রস্তাব

মার্কিন টেলিহেলথ এবং অনলাইন ফার্মেসি হিমসের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও  এন্ড্রু ডুডুম  ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি তাদের ‘নৈতিক সাহসের’ প্রশংসা করেছেন বলে জানায় ফক্স নিউজ।

বুধবার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি যদি বর্তমানে ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েল থেকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়কে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিবাদ করে থাকেন, তবে তা চালিয়ে যান। এটি কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করেন না কেন, প্রচুর কোম্পানি এবং সিইও আপনাকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী।’ 

হিমস যৌন কর্মক্ষমতা চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন দেয় এবং চুলের পুনঃবৃদ্ধি, ওজন হ্রাস, উদ্বেগ এবং ত্বকের চিকিৎসার জন্য ওষুধ বিক্রি করে থাকে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews