বাংলাদেশের দুই বড় ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংস আসন্ন এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে অংশ নেবে। এ দুই দলকেই প্লে অফ পেরিয়ে মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের দুই দলেরই প্লে অফ ম্যাচ নিজেদের ভেন্যুতে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তাই হয় তবে এক্ষেত্রে বসুন্ধরা কিংসের ভাবনা নেই। কারণ রাজধানী ঢাকাতেই তাদের রয়েছে নিজস্ব ভেন্যু। যার নাম বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের হোম ম্যাচ আয়োজনে কিংস কর্তৃপক্ষ যেমনটা রয়েছে নিশ্চিন্ত, ঠিক ততটাই দুশ্চিন্তায় আছেন আবাহনীর কর্মকর্তারা। কারণ একটাই, আর তা হলো ঢাকা আবাহনীর নিজস্ব কোনো ভেন্যু নাই। তাই এএফসি ম্যাচ আয়োজনে ভেন্যু নির্ধারণে খানিকটা দোটানায় রয়েছেন ক্লাবটির কর্মকর্তারা।
সদ্য সমাপ্ত ঘরোয়া সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঢাকা আবাহনীর হোম ভেন্যু ছিল কুমিল্লার শহীদ ধীরন্দ্রেনাথ দত্ত স্টেডিয়াম। তবে ফ্লাডলাইট ও গ্যালারিতে চেয়ার না থাকায় এই স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না। তাই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামকে এএফসি ক্লাব লাইসেন্সিংয়ে নিজেদের হোম ভেন্যু হিসেবে দেখিয়েছে আবাহনী। এর আগে ২০২৩ সালে আবাহনী এএফসি কাপের ম্যাচ সিলেট ভেন্যুতে খেলেছে।
কাগজে-কলমে আবাহনীর ভেন্যু সিলেট থাকলেও ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজনের ভাবনায় রয়েছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু বলেন,‘সবশেষ বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে ঢাকা স্টেডিয়ামে অনেক দর্শক হয়েছে। ফুটবলপ্রেমী মানুষ স্টেডিয়াম মুখী হয়েছেন। এই বিবেচনায় আমরা ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলার বিষয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) আবেদন করবো। যেন জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচের ধারাবাহিকতা থাকে। ঢাকা স্টেডিয়াম না পাওয়া গেলে তখন সিলেটই এএফসির ম্যাচ আয়োজন করবো আমরা।’
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকং ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হোম ম্যাচকে সামনে রেখে জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে শীঘ্রই ঘাসের কাজ শুরু করতে চায় বাফুফে। আগামী ৯ অক্টোবর হংকং ম্যাচের আগে ঘাসের সংষ্কার করতে ২-৩ মাস সময় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ১২ আগস্ট ঢাকা আবাহনীর এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের ম্যাচ জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করা সম্ভব হবে না। ঘাসের বিষয়টি বিবেচনা করেই আসন্ন সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা জাতীয় স্টেডিয়ামের পরিবর্তে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৮ নভেম্বরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলার পর বাংলাদেশের আর হোম ম্যাচ নেই দীর্ঘদিন। ফুটবলবোদ্ধাদের মতে, নভেম্বরের পর সময় নিয়ে ঘাস সংস্কার একটি বিকল্প হতে পারে। বিদ্যমান ঘাসেই আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন তারা। তবে বাফুফে শেষ পর্যন্ত কোন পথে হাঁটে সেটাই দেখার বিষয়। ঢাকা আবাহনীর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ভূটানের ক্লাব পারো এফসি। ১২ আগস্ট ম্যাচের জন্য আবাহনী এক মাস আগেই অনুশীলন শুরু করতে চায়। এ নিয়ে ম্যানেজার রুপু বলেন,‘ক্লাবের পরিচালকদের সঙ্গে সপ্তাহ খানেক পর আলোচনা করে দল গঠনের কাজ শুরু হবে। জুলাই থেকে আমরা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবো।’
এদিকে গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনে আবাহনী ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনায় ফুটবল দলের অনেক ক্ষতিসাধন হয়েছে। সবশেষ বিপিএলে দল গঠন করা নিয়েও বিপাকে পড়েছিল আবাহনী। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়েই দল গঠন করেছিল বিপিএলের ছয়বারের চ্যাম্পিয়নরা। লিগের প্রথম লেগে বিদেশি ছাড়া খেলে আবাহনীকে ফেডারেশন কাপ ও লিগ রানার্সআপ করিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক। তবে নতুন মৌসুমে মিতুল মারমা, মো.হৃদয়, ইয়াসিন খানদের ধরে রাখার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নেননি আবাহনীর কর্তারা।
অন্যদিকে বিপিএলে টানা পাঁচবার শিরোপা জিতলেও এএফসি টুর্নামেন্টে বরাবরই ব্যর্থ বসুন্ধরা কিংস। ২০১৯ সালে আবাহনী এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে খেলেছিল। আবাহনীর এই সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের ক্লাব র্যাঙ্কিং বেড়েছিল। সেই সুফলে বসুন্ধরা কিংস এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। তবে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারেনি, উল্টো এএফসি কাপের পরের রাউন্ডেও খেলতে পারেনি বসুন্ধরা।