মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৮৭৯ পৃষ্ঠার বিশাল বাজেট সংশোধনী আইন নিয়ে চলছে গুঞ্জন। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামের এ আইন গাড়িপ্রেমীদের জন্য স্বপ্নপূরণের দাওয়াত বলছেন অনেকেই। পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির পেছনে ছুরি চালানো বলেও একে আখ্যা দিচ্ছেন কেউ কেউ। এ আইনের অধীনে গাড়ি কেনা, মালিকানা, করছাড়, ফুয়েল ইকোনমি, বৈদ্যুতিক যান (ইভি), এমনকি দৈনন্দিন যাতায়াত-সবখানেই এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন।
নতুন আইনে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি কিনলে বছরে সর্বোচ্চ ১০,০০০ ডলার লোন সুদের ওপর করছাড় মিলবে। তবে এটি লিজে নেওয়া গাড়িতে প্রযোজ্য নয়। আবার যাদের বার্ষিক আয় একক ফাইলার হিসাবে ১ লাখ বা যুগল হিসাবে ২ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে, তারা ধাপে ধাপে এ সুবিধা হারাবেন।
দীর্ঘদিনের ৭,৫০০ ডলারের ইভি ট্যাক্স ক্রেডিট উঠে যাচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে। এটি ছিল মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সস্তা মডেলগুলো বাজার থেকে হারিয়ে গিয়ে বিলাসবহুল ইভির দাপট বাড়তে পারে।
কনজিউমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর বাজেট ৫৪ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা উচ্চসুদের অটো লোন নিয়ন্ত্রণে বড় ধাক্কা। প্রতারণা কিংবা শর্ত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সুরক্ষা কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
যদিও ক্যাফে (CAFE) মান বজায় রাখা হচ্ছে, তবুও তা ভঙ্গ করলে এখন আর কোনো জরিমানা হবে না। ফলে অটো নির্মাতারা চাইলে কম ফুয়েল ইকোনমির গাড়ি বাজারে আনতে পারবে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ডিজেলচালিত পুরোনো স্কুল বাস বদলে ইভি বাস কেনায় যে ফেডারেল অনুদান ছিল, তাও বাতিল হয়েছে। ইভি চার্জার স্থাপন, মেকানিক প্রশিক্ষণসহ বেশকিছু পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে।
আগে যেসব কর্মী মাসে ১৭৫ ডলার পর্যন্ত করছাড় পেতেন যাতায়াত সেবা অনুযায়ী, এখন সেটি সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৭৫ ডলারে সীমাবদ্ধ। সাইকেল ব্যবহারকারীদের করছাড় পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
বাড়ি বা ব্যবসায়িক স্থাপনায় সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ব্যাকআপ বা ইভি চার্জার বসালে আর কোনো ফেডারেল করছাড় থাকবে না। বাতিল করা হয়েছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র গঠনের সময়সীমাভিত্তিক করছাড়ও।
নতুন বিলটি তেল-গ্যাস লিজ ইস্যু করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে পুরোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আধুনিকায়ন ছাড়াই চালুর সুযোগ রেখে দিয়েছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হলেও স্বল্পমেয়াদে দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে।
ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ একদিকে যেমন গাড়ির মালিকানা প্রক্রিয়ায় করছাড়ের আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ইভি বিপ্লবকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মত বিশ্লেষকদের। দীর্ঘমেয়াদে এ পরিবর্তন কতটা ‘বিউটিফুল’ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।