সিরিয়ায় আর কত লাশের মিছিল?

২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ ইং

সিরিয়া আজ শক্তিধর দেশগুলির এক জটিল রণক্ষেত্র। চতুর্মুখী হামলায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। বর্তমানে সিরিয়ার প্রধানত দুইটি অঞ্চল অস্থির ও অগ্নিগর্ভ। রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী বিদ্রোহী অধ্যুষিত ও অবরুদ্ধ গৌতায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর রকেট ও বিমান হামলা এবং হেলিকপ্টারে বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সেখানে তিন শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হইয়াছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধশতাধিকই শিশু। আহত হইয়াছে কমপক্ষে ১২ শত। বাশার-আল-আসাদ বাহিনী সর্বশেষ এই বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের দমনে যেন পোড়ামাটি-নীতি অবলম্বন করিয়াছে। দোকানপাট, বসতবাড়ি, খাবারের গুদাম—কোনো কিছুই বাদ পড়িতেছে না হামলা হইতে। সরকারি বাহিনীর হামলা শুরুর পর একদিনেই নিহত হইয়াছে দেড় শতাধিক। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর মতে, ২০১৫ সালের পর একদিনে বেসামরিক লোক নিহত হইবার ইহাই সর্বোচ্চ সংখ্যা।

অন্যদিকে আফরিনে অব্যাহত আছে তুরস্কের সেনা অভিযান। এই অঞ্চলটি ২০১২ সাল হইতেই সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নাই। ইহা কুর্দিপন্থি ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। ওয়াইপিজিকে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের অংশ হিসাবে দেখে আঙ্কারা। যদিও গৃহযুদ্ধকালে আসাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ওয়াইপিজি জোটকে সমর্থন দিয়াছিল তুরস্ক, কিন্তু সীমান্তের নিকট বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী গঠনের খবরে তাহাদের আঁতুড় ঘরে শেষ করিতেই এখন বদ্ধপরিকর তাহারা। ওয়াইপিজি শত্রু হইলেও তুরস্কের সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় বাশার-আল-আসাদের বাহিনী এখন তাহাদের সমর্থন করিতেছে। তবে তাহারা সেনাবাহিনী নহে, সেখানে পাঠাইয়াছে একটি অনুগত মিলিশিয়াগোষ্ঠী। এমতাবস্থায় আফরিনে অনেকে তুরস্ক-সিরিয়া যুদ্ধের আশঙ্কা করিলেও ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে রাশিয়ার একান্ত দরকার বলিয়া এবং আফরিনে অভিযান প্রেরণে রাশিয়ার সমর্থন থাকায় শেষপর্যন্ত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ নাও হইতে পারে। আফরিনে বেসামরিক হতাহতের খবর তেমন একটা পাওয়া যাইতেছে না। কিন্তু গৌতার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানকার চার লক্ষ মানুষ আজ অবরুদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানীয়ের অভাবে তাহাদের মধ্যে অনেকেই অপুষ্টির শিকার। পূর্ব গৌতা রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক ঘোষিত একটি ডি এস্কেলেশন জোন বা অস্ত্রবিরতি অঞ্চলের আওতাভুক্ত। ২০১৩ সালে এখানেই রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটিয়াছিল। কিন্তু এইজন্য কাহাকেও কোনো শাস্তি পাইতে হয় নাই। 

যাহারা মনে করিয়াছিলেন যে, ইরাক ও সিরিয়ার কিছু এলাকা নিয়া খেলাফত ঘোষণাকারী আইএস পরাজিত হইলেই সিরিয়া তথা এতদঞ্চলে শান্তি আসিবে, তাহাদের এই ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হইয়াছে। সিরিয়া যুদ্ধ কীভাবে শুরু হইল, কাহারা চাপাইয়া দিল ও তাহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই বা কী ছিল—তাহা ভাবিয়া দেখিলে সহসা এই যুদ্ধের অবসান ঘটিবার সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে না। বাশার-আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেমন শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও। এইসব দ্বন্দ্বে রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশ জড়িত। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়া যুদ্ধে এখন অবধি নিহতের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। বাস্তুচ্যুত লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহুমেরুকরণের যুগে বিশ্বব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না আসিবা পর্যন্ত শান্তির দেখা পাওয়া সত্যিই কঠিন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews