উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ময়মনসিংহে ৪ উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াত নেতারা 

দীর্ঘদিন ভোটের রাজনীতি থেকে দূরে জামায়াতে ইসলামী। অনেকটা গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসা দলটির নেতারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রার্থী হচ্ছেন। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ময়মনসিংহ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় লাগিয়েছেন পোস্টার। শুরু করেছেন নানা কৌশলে প্রচার কার্যক্রম।

ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলার মধ্যে ১২টিতে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে চারটি উপজেলাকে টার্গেট করে প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াত নেতারা। যেসব এলাকায় দলীয় অবস্থান ভালো, সেই এলাকাগুলোতেই প্রার্থী হচ্ছেন। নেতারা বলছেন, ২০৪৮ সালের মধ্যে এ দেশে ইসলামী আইন ও বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা অগ্রসর হচ্ছেন।

সদর উপজেলায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক আকন্দ, মুক্তাগাছায় উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ শামছুল হক, ফুলবাড়িয়ায় সংগঠনের আমির ফজলুল হক শামীম ও ঈশ্বরগঞ্জে আমির মঞ্জুরুল হক হাসান আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে, বাকি উপজেলাগুলোতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়বেন নেতারা।

আগামী ১১ মে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা এবং ১৮ মে ফুলবাড়িয়া ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারিখ ঘোষণার পরই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াত দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি, প্রার্থী হতে নিষেধও করেনি। নিষেধ না থাকায় স্থানীয় নেতারা তাদের নেতার পক্ষেই মাঠে নামছেন। বিএনপির ভোটও জামায়াত প্রার্থীদের পক্ষে যাবে– এমনটি জানিয়েছেন নেতারা। বিএনপি ও অন্য দলগুলো এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করলেও জামায়াতের অংশ নেওয়া সম্পর্কে নেতারা দাবি করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় তারা প্রার্থী হয়েছেন। ভোটে কারচুপি হবে– এমন আশঙ্কা নেই তাদের।

এক সপ্তাহ ধরে ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় তৎপরতা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ এলাকা বিনির্মাণে তারা ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চেয়ে পোস্টার লাগিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিবাদ থাকায় প্রতিটি উপজেলায় বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হতে পারেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত নেতারা ভোটের মাঠ দখল করতে চাইছেন। 

মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ শামছুল হক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলেও রাজনৈতিক কারণে প্রার্থী হননি। মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই ভোট দিতে চাচ্ছে। কারণ তারা যোগ্য প্রার্থী পেয়েছেন। জনগণের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্যই প্রার্থী হবেন। বিএনপির অনেকে বলেছেন আমাকে ভোট দেবেন।’ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এলাকায় আমাকে নিয়ে ১৪ প্রার্থী রয়েছেন। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে আমার পক্ষে জনতার রায় আসতে পারে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪৮ সালের মধ্যে দেশে ইসলামী আইন ও বিধান প্রতিষ্ঠা করব। এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে উপজেলা ও পরে অন্যদিকে অগ্রসর হব। যদি মুক্তভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে। পরবর্তী কর্মসূচি সুন্দরভাবে পালন করতে পারব।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় আমির হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মঞ্জুরুল হক হাসান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটে লড়তে চান। তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে যাচ্ছি। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম, ইজতেমার দাওয়াত পৌঁছানোর কার্যক্রমের পাশাপাশি যতটুকু জনগণের সেবা করা যায়, তার জন্য কাজ করব এবং মানুষকে সেদিকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যুবসমাজ নেশার জগতে এবং ছাত্ররা মোবাইলে আসক্তের কারণে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। বিষয়গুলো সমাজের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। মানুষকে সচেতন করা গেলে এ বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আসবে।

২০১৪ সালে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন ফুলবাড়িয়া জামায়াতের আমির ফজলুল হক শামীম। ২০১৯ সালে নির্বাচনে অংশ নেননি। এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দল থেকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্থানীয় সংগঠন চিন্তা করেছে, যেহেতু উন্মুক্ত নির্বাচন দেওয়া হয়েছে এবং দলীয় কোনো প্রতীক নেই, তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, আদর্শিক ভোটার তৈরি, আদর্শিকভাবে মানুষকে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। প্রচার কার্যক্রম করতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত চারটি উপজেলায় প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে আমরা আগেও গিয়েছি। নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে যাচ্ছি না, ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছি। যেখানে যে প্রার্থী হতে আগ্রহী হচ্ছেন, সংগঠন নিষেধ করছে না। এটি স্থানীয় নির্বাচন, জনগণ যদি সুযোগ দেয় চেষ্টা করব সেবা করার। এখানে সরকার পরিবর্তনের কোনো বিষয় নেই। আমরা বার্তা নিয়ে যাচ্ছি সৎ নেতৃত্ব হলে মানুষ অধিকার পায়। ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির যাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তারা আমাদের পক্ষে কাজ করবে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews