যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এফবিআই কর্তৃক গ্রেপ্তার এবং কারাগারে বন্দী অবস্থায় দেখানো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্মিত ভিডিও সম্প্রতি নিজের সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জুলাই) পোস্ট করা এই ভিডিওটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, হোয়াইট হাউসে এফবিআই এজেন্টরা ওবামাকে গ্রেপ্তার করছেন এবং পরবর্তীতে তাকে কমলা রঙের কারা পোশাকে জেলখানায় দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওতে জো বাইডেনসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিককে "আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়" বলতে শোনা যায়, যার জবাবে ওবামাকে বলতে শোনা যায়, "বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট আইনের ঊর্ধ্বে।" এরপর ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও ওবামার একটি দৃশ্যের পর এফবিআইয়ের হাতে ওবামার গ্রেপ্তারের দৃশ্য এবং সবশেষে তাকে কারাগারে বন্দী অবস্থায় দেখানো হয়।
ভিডিওটি মূলত এআই-নির্ভর এবং বাস্তব নয়। এতে ব্যবহৃত সমস্ত ফুটেজ, কণ্ঠস্বর ও মুখাবয়বের অভিব্যক্তি ডিজিটালভাবে তৈরি করা হয়েছে। ওবামার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি।
ট্রাম্পের এই এআই ভিডিও এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড দাবি করেছেন যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে রাশিয়ার প্রভাব সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য ওবামা প্রশাসনের সময়েই "জাল ও বিকৃত" করা হয়েছিল। গ্যাবার্ড ১১৪ পৃষ্ঠার একটি ইমেইল নথির (যার অনেক অংশ কালো করা হয়েছে) বরাত দিয়ে বলেন, ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ইচ্ছাকৃতভাবে গোয়েন্দা বিশ্লেষণ বিকৃত করেছিল, যাতে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক তুলে ধরা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) গ্যাবার্ড লিখেছেন, "তাদের লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হটানো এবং আমেরিকান জনগণের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করা। এ চক্রান্তে জড়িত যত বড় ক্ষমতাবানই হোক না কেন, সবাইকে তদন্তের আওতায় এনে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি রক্ষার জন্য এটাই জরুরি।" তিনি আরও জানান, এসব দলিল বিচার বিভাগের কাছে ফৌজদারি তদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। ট্রাম্পও গ্যাবার্ডের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে লিখেছেন, "তুলসি গ্যাবার্ডকে অভিনন্দন! চালিয়ে যাও!!!"
এদিকে, ট্রাম্পের পোস্ট করা ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই জানতে চান, সত্যিই বারাক ওবামা গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন কিনা। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, "অ্যারেস্ট ওবামা ট্রেন্ড করছেন? সত্যিই ওবামাকে গ্রেপ্তার করা হবে, আপনারা তাই ভাবছেন?" আরেকজন জানতে চেয়েছেন, "এটা কি বাস্তব? ওবামাকে কি সত্যিই গ্রেপ্তার করা হতে পারে?"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন ভিডিও তৈরি বর্তমানে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ধরনের ভিডিও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, যার ফলে জনমত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব ভিডিও দেখার আগে এর সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।